কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ আরও বাড়ল
Published: 11th, August 2025 GMT
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়ে এখন ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, অর্থাৎ ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১টি ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে। প্রতি ডলারের দর ছিল ১২১ দশমিক ৪৭ টাকা থেকে ১২১ দশমিক ৫০ টাকা।
গত ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ১ কোটি ডলার কেনে। এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে কেনা হয় মোট ৪৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলমান নিলামপ্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৫৮ কোটি ডলার কিনেছে।
কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহ বাড়ছে। এতে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে ডলারের দাম কমার আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই বাজারে ডলারের সম্ভাব্য দরপতন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, বাজারে ডলারের মান ধরে রাখতে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে তারা এই পদক্ষেপ নেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
বিপিএম-৬ হচ্ছে, আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়ালের ষষ্ঠ সংস্করণ। এটি মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ডেটা হিসাব করার একটি মানসম্মত পদ্ধতি।
মোট রিজার্ভ ৪ আগস্ট ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। ওই দিন বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে ডলারের চাহিদা কমে আসছে। ফলে দাম কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে। দাম আরও কমলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ খুবই ভালো দেখা গেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ শতাংশ। এই মাসে প্রবাসীরা ২৪৭ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ১৯১ কোটি ডলার।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপ কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কেটে গেছে। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে দিয়েছে।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।