রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু ১৩ দিন ধরে পানির নিচে, হতাশ পর্যটকেরা
Published: 11th, August 2025 GMT
রাঙামাটি শহরে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ—ঝুলন্ত সেতু। কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় সেতুটি ডুবে রয়েছে ১৩ দিন ধরে। দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের সেতুটিতে উঠতে জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে আসা পর্যটকেরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রাঙামাটির পর্যটনসংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার কারণে ঝুলন্ত সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকছে সেতুটি।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গত ৩০ জুলাই রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যায়। আজ সোমবার পর্যন্ত সেতুটি দুই ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধস ও দুর্যোগের ঘটনার পর থেকেই প্রতি বর্ষায় ঝুলন্ত সেতুটি পানিতে তলিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। এর অন্যতম কারণ কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া।
১৯৮৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করে। পরে এটি রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেতুটি নির্মাণের পর সারা দেশ থেকে পর্যটকেরা এটি দেখতে ছুটে আসতে শুরু করেন। এখনো সেতুটি দেখতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ দর্শনার্থী আসেন এবং প্রতিবছর অন্তত অর্ধকোটি টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।১৯৮৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করে। পরে এটি রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেতুটি নির্মাণের পর সারা দেশ থেকে পর্যটকেরা এটি দেখতে ছুটে আসতে শুরু করেন। এখনো সেতুটি দেখতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ দর্শনার্থী আসেন এবং প্রতিবছর অন্তত অর্ধকোটি টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।
ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা দুই পর্যটক মো.
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর এটির পাটাতনসহ কিছু অংশ মেরামত করা হয়। তবে বড় ধরনের মেরামত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষায় এটি ডুবছে। আমরা সেতুটি আরও ওপরে উঠানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি পর্যটন করপোরেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সুখবর আসতে পারে।’ সেতু থেকে প্রতি মাসে অন্তত ৫ লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর যটক র
এছাড়াও পড়ুন:
সৌন্দর্যের মায়াবি হাতছানিতে পর্যটকদের কাছে ডাকছে শ্রীমঙ্গল
রোদ ঝলমলে শরতের আকাশ। মাঝে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। তার নিচে বিছিয়ে দেওয়া কার্পেটের মতো সবুজ চা বাগান। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রকৃতির এমন মায়াবী রূপ মন কেড়েছে পর্যটকদের।
“মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের গল্প অনেক শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখিনি। এখানে এসে মন ভরে গেছে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই সবুজ আর সবুজ। এই সৌন্দর্য স্বচক্ষে দেখে মাতোয়ারা হয়ে যাই।” এমনটা বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুল মজিদ মোল্লা।
ঢাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক ফারজানা বলেন, “প্রকৃতির অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে এই মৌলভীবাজারে।”
শরতের রোদেলা দুপুরে জেলার ঐতিহ্যবাহী চা কন্যা ভাস্কর্যের কাছে তার সাথে কথা হয়। মৌলভীবাজারের প্রবেশ পথেই পর্যটকদের বিমহিত করে এই দৃশ্য।
দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে চায়ের রাজ্যখ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় ভিড় জমেছে এখানকার হোটেল-রির্সোট গুলোতে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেশকিছু দর্শণীয় স্থান ঘুরে দেখা যায় দল বেঁধে পর্যটকরা সবুজ প্রকৃতির সাথে মিশে ঘুরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। এসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকজন বিদেশি পর্যটককেরও দেখা পাওয়া গেল।
প্রতি বছর শেষ শরতে এখানে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। একদিকে পর্যটন মৌসুমের শুরু, অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সরকারি বাড়তি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারা দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে এসেছেন এই চায়ের রাজ্যে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। ৯০ শতাংশ পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রীযাপন করে থাকেন। বাকি ১০ শতাংশ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করেন।
তারা এখানে অবস্থান করে পুরো জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এবং এ জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগকরেন।
শ্রীমঙ্গল রামনগর রিসোর্টে কর্মরত হিরনময় সিং বলেন, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে এরইমধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ ৯০% থেকে ৯৫% রিজার্ভ হয়ে গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই হোটেল রিসোর্ট-গুলোতে পর্যটকরা অবস্থান করছেন। যে কোন ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে। আকর্ষণীয় সবুজ চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল।”
পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, “ভালো গাইডের অভাবে এখানে পর্যটকরা এসে এলোমেলো হয়ে যান। গাইড লাইন দিয়ে সেবা দিলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারেন। কম সময়ে অনেক স্পট দেখতে পারেন।”
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, দুদিন ধরে সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শতাধিক পর্যটক টিকিট নিয়ে লাউয়াছড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশিয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবাসংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, “মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যে কোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাত যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল হোটেল-রিসোর্টে বুকিং রয়েছে ৯০% পার্সেন্ট।”
শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে ভাড়া বেশি হওয়ায় পর্যটকরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “হোটেলের মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন হোটেল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। আবার কিছু ব্যবসায়ী আছেন মান অনুযায়ী সেবা দেন না বরং বেশি টাকা নিয়ে থাকেন। আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি যেন পর্যটকরা প্রতারিত না হয়।”
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২০০৮ সাল মৌলভীবাজার পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে ওঠেনি। রাস্তা ঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার বেশিরভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়োজিত সিনিয়রট্যুর গাইড সৈয়দ শিপন আলী বলেন, “আমরা যথাযথভাবে পর্যটকদের সেবা দিতে চেষ্টা করি। গতকয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। তবে বিদেশি পর্যটক কম আসছেন। দুই-তিন জন বিদেশি পর্যটকের দেখা মিলেছে গত শুক্রবারে।’’
পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, “টানা ছুটিতে যথেষ্ট পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এছাড়া শীতের সময় এমনিতেই পর্যটক আসবেন। বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ পর্যটক আসেন, সে পরিমাণ থাকার হোটেল রিসোর্ট এখানে নেই। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি।”
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, “সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা সহজে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং আমরা আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।”
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, “মৌলভীবাজার অপূর্ব সৌন্দর্যের ক্ষেত্র আমরা পর্যটকদের সুবিদা দিতে প্রস্তুত। টুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা সবগুলো ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারি।”
ঢাকা/আজিজ/এস