কুষ্টিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ যুবক, গ্রেপ্তার ১
Published: 11th, August 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবদুল হামিদ (৪০) নামের এক যুবক আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকালে উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের ফিলিপনগর গ্রামের দারোগার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নুরুজ্জামান (৪৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দৌলতপুর থানায় এ নিয়ে মামলা হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে দারোগার মোড় এলাকায় কুষ্টিয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল অভিযান চালাচ্ছিল। আহত হামিদ কুষ্টিয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যদাতা (সোর্স) হিসেবে কাজ করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নওদা খাদিমপুর গ্রামের প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে আনা হলে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, আজ সকালে পরিদর্শক খবির আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি দল দারোগার মোড়ে মাদক উদ্ধারের অভিযান চালায়। মাদক ব্যবসায়ী নুরুজ্জামানের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচা হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ফিলিপনগর মাঠপাড়ার হাফিজুর সর্দারের ছেলে রাখি (৩৫), বৈরাগীর চরের মিঠু লাল (৩২) ও ককিল তারাগদিয়ার ছেলে নুরুজ্জামান গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের গুলিতে অধিদপ্তরের সোর্স আবদুল হামিদ গুলিবিদ্ধ হন। নুরুজ্জামানকে আটক করা হয়।
কুষ্টিয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পারভীন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানায় মামলা করা হয়েছে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোলাইমান শেখ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবদুল হামিদ নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি ইয়াবাসহ নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবকে আর কখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান অধ্যায় তাহলে শেষ! লাল-সবুজ জার্সিতে আর কখনো খেলতে দেখা যাবে না তাঁকে। না, সাকিব নিজে দেশের হয়ে আর না খেলার ঘোষণা দেননি। তবে তাঁকে আর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গতকাল সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এর সঙ্গে মুঠোফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
সাকিবের এক ফেসবুক পোস্টের জেরে আসিফের সঙ্গে দুই দিন ধরে তাঁর পাল্টাপাল্টি ভার্চ্যুয়াল লড়াই চলছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। এর মধ্যেই নিজের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। ইতিপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।’
কেন এমন সিদ্ধান্ত, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন আসিফ মাহমুদ, ‘যতবার তিনি (সাকিব) দেশে আসার জন্য চেয়েছেন, খেলার জন্য চেয়েছেন, বলেছেন “আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু এমপি ইলেকশনটা করেছি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি।” কিন্তু আসল সত্যটা তো হচ্ছে, তিনি আসলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠেভাবে জড়িত, যার প্রমাণ আমরা পেলাম।’
প্রমাণ বলতে আসিফ মাহমুদ আসলে সাকিবের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বুঝিয়েছেন। যে পোস্ট থেকে এই বিতর্কের সূত্রপাত। তবে এর আগে পেছনের ঘটনাও একটু মনে করা যাক। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়টায় সাকিব ছিলেন দেশের বাইরে। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিব। আরও অনেকের মতো সাকিবের নামেও হত্যা মামলা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে, আছে দুদকের মামলাও।
আরও পড়ুনএবার সাকিবকে পাল্টা জবাব দিলেন আসিফ১২ ঘণ্টা আগেতো সেই সাকিব গত রোববার রাত ৯টার দিকে ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের একটা ছবি দিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’
এর একটু পরেই সেদিন রাত ১০টার দিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। ইন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’
এর জবাবে গত রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সাকিব নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!’
সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।সাকিব আল হাসানসেটার জবাবে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুকে আবার লিখেন, ‘ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু। যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।’
আরও পড়ুনক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফকে জবাব দিলেন সাকিব২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫দুজনের পাল্টাপাল্টি এই স্ট্যাটাসগুলো নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তোলপাড়, এর মধ্যেই চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন আসিফ মাহমুদ।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি পোস্ট করা ও তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সাকিবের অবস্থানও জানতে চেয়েছিল চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। মুঠোফোনে তিনি চ্যানেলটিকে বলেছেন, ‘সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।’