নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় এক শিশু শিক্ষার্থীকে (৮) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা দিতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছিল। তবে তিন দিনেও সেই টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারের হাতে না পৌঁছায় ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি চেক উদ্ধারের জন্য বড়াইগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এক শিশু শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়া শেষে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে নির্জন স্থানে পৌঁছালে উপজেলার একটি এলাকায় গুলজার হোসেন (৪৮) নামের এক ব্যক্তি শিশুটিকে কোলে তুলে পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। শিশুটি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তখন গুলজার পালিয়ে যান।

সেদিন রাতেই স্থানীয় আশরাফ সরদার নামে এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে কিছু লোক ঘটনাটি নিয়ে সালিস বসান। আশরাফ সরদার উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। সালিসে গুলজারকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই সমপরিমাণ টাকার একটি চেক আশরাফ সরদারের হাতে দেন। চেকটি বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদের কাছে জমা রাখা হয়। এতে ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসেনি। তবে তিন দিনেও ভুক্তভোগীর পরিবার চেক বা টাকা না পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে।

শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর তাঁরা বিচারের জন্য থানায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় বিএনপি নেতারা ঘটনাটি থানা-পুলিশকে জানাতে দেননি। রাতে সালিসে বসে গুলজার হোসেনকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকার সমপরিমাণ একটা ব্যাংক চেক আশরাফ সরদারকে দেন। তিনি চেকটি বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদের কাছে জমা রাখেন। কিন্তু তিন দিনেও তাঁরা ওই চেক বা চেকের টাকা শিশুটির বাবা-মাকে দেননি।

আশরাফ সরদার বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কথা মেনে আমরা বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি। তবে এটা নিয়ে জটিলতা আছে জানলে সালিস করতাম না।’ চেক বা টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চেক যাদের পাওয়ার কথা, তাদের কাছেই দেওয়া হয়েছে।’

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন গুলজার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কাদায় পড়ে গিয়েছিল। তাকে ওঠাতে গেলে সে ভয়ে চিৎকার দেয়। তখন লোকজন সন্দেহ করে তাঁর ওপর মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি সালিসে নেতাদের হাতে চেক তুলে দিয়েছেন। পরে তিনি ওই চেক উদ্ধারের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান।

বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ধর্ষণচেষ্টার কথা আমরা অনেক পরে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পাইনি। গুলজার হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ ঘটনায় চেক উদ্ধারের ব্যাপারেও লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্তে মাঠে নেমেছি। পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১ ল খ ২০ হ জ র ট ক পর ব র ব এনপ ঘটন ট

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ