২০ হাজার টাকায় বিক্রির চেষ্টা, সরকারি আশ্রয়ে ৭ বছরের শিশু
Published: 11th, August 2025 GMT
রাঙামাটিতে বিক্রির জন্য আনা এক শিশুকে উদ্ধার করে সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার জেলা পরিষদের উদ্যোগে শিশুটিকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভেদভেদী এলাকার সরকারি শিশু পরিবারে নেওয়া হয়। সেখানে থেকে সে পড়াশোনা করবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে এক নারী তাঁর মেয়েকে বিক্রির জন্য আনেন। এক ব্যক্তি ২০ হাজার টাকায় শিশুটিকে নিতে চাইলে বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেন। পরে ওই নারী ও শিশুকে স্থানীয় লোকজন নিজেদের হেফাজতে রাখেন এবং স্বজনদের খবর দেন।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তার মা–বাবার মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। প্রায়ই মা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন। একসময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শিশুটির বাবা অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান এবং মা–মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কয়েক বছর ধরে মা–মেয়ে রাঙামাটি শহরের দেবাশীষনগর এলাকায় বসবাস করছিলেন।
পরিবারের দাবি, কয়েক মাস ধরে আয়রোজগার না থাকায় এবং অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় শিশুটিকে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শিশুটির এক আত্মীয় বিষয়টি অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী কাজ খুঁজতে গেছেন, শিশুকে বিক্রির জন্য নয়।
ঘটনার পর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিশুটিকে সরকারি আশ্রয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আজ দুপুরে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে স্বজন ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শিশুটিকে শিশু পরিবারে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, বাজারে এক শিশু বিক্রির চেষ্টা চলছে। পরে জেলা পরিষদের সহায়তায় শিশুটিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে শিশু পরিবারে ভর্তি করানো হবে।’
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, ‘শিশুটিকে আমরা সম্পূর্ণ দায়িত্বে নিয়েছি—খাওয়া, থাকা, পড়াশোনা সবকিছুই দেখভাল করা হবে। শিশুটির অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্যও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিহত শিশুর গোসলের সময় গলায় দাগ দেখে পুলিশে ফোন স্বজনদের, সৎমা আটক
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন থেকে তিন বছর বয়সী এক কন্যাশিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত শিশুর নাম সুমাইয়া আক্তার। স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার বেলা পৌনে দুইটার দিকে ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের চাপরাশি বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত শিশুর সৎমা শিউলী আক্তারকে আটক করেছে।
নিহত শিশু সুমাইয়া আক্তারের চাচা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই ফয়সাল আহমেদ সৌদিপ্রবাসী। দুই বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। পরে বিয়ে করেন শিউলী আক্তারকে (২৪)। সুমাইয়া তাঁর ভাইয়ের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। ফয়সাল বিদেশে যাওয়ার সময় বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার করিমপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে রেখে যান। তাঁরা সেখানেই থাকতেন।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, তাঁর ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলীর বক্তব্য অনুযায়ী কয়েক দিন ধরে তাঁর ভাতিজি সুমাইয়া অসুস্থ ছিল। গতকাল দুপুরে তাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে শিউলী আক্তারকে ঘুম ভাঙাতে গিয়ে দেখেন তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান প্রায় ৩০ মিনিট আগে শিশুটি মারা গেছে।
সাইফুল ইসলাম জানান, ভাতিজির মৃত্যুর পর লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আজ সকালে লাশ গোসল করানোর সময় সেখানে উপস্থিত স্বজনেরা সুমাইয়ার গলায় দাগ দেখতে পান। পরে তারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে বেগমগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বেগমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় মৃতদেহের ডান কানের গোড়ায় কালো দাগ দেখেছেন। এ ছাড়া শিশুটির শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। উদ্ধার করা লাশ তাঁরা ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে হত্যা বলে মনে হচ্ছে। শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির সৎমা শিউলী আক্তারকে আটক করা হয়েছে। শিশুর স্বজনদের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।