কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় গাড়িসহ ২০ ড্রাম মাছ ছিনতাইয়ের মামলায় কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবুর রহমানের ছেলে মফিজুর রহমান ওরফে সুমনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে ভুক্তভোগী আবু তাহের ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা করেন। দুপুরে পুলিশ ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সুমনকে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী আবু তাহের বলেন, ‘‘আমার বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার শোভারামপুর গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে আমি মাছ চাষে যুক্ত। নিজের পুকুর থেকে ধরা ২০ ড্রাম পাঙাশ মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে রবিবার (১০ আগস্ট) ভোরে টমটম গাড়িতে করে কটিয়াদীর চরিয়াকোনা স্বনির্ভর বাজারে যাচ্ছিলাম। পথে বাজিতপুর বাজার সংলগ্ন সেতুর কাছে পৌঁছালে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সুমন টমটমের গতিরোধ করেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে চালক ও আমাকে নামিয়ে দিয়ে তারা মাছসহ টমটম নিয়ে স্বনির্ভর বাজারে যায়। সকাল ৬টার দিকে আমিও ওই বাজারে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে আমি সুমন ও তার সহযোগীদের মাছ বিক্রির প্রস্তুতি নিতে দেখি। তখন কটিয়াদী থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে সুমনকে আটক করে। তবে এ সময় তার সহযোগীরা মাছভর্তি টমটম নিয়ে পালিয়ে যায়।’’ 

আরো পড়ুন:

নাফ নদীতে বড়শিতে ধরা পড়ল সাড়ে ৩৪ কেজির ২ কোরাল

চাঁদপুরে ‘কমেছে’ ইলিশের দাম 

ভুক্তভোগী আবু তাহের বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্ত সুমনকে পুলিশ আটক করেছে। মামলাও করেছি কিন্তু এখনো মাছ ফিরে পাইনি।’’ 

কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে সুমনকে মাছ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে আটক করি। যেহেতু ঘটনাস্থল বাজিতপুর থানা এলাকায়, সেই কারণে অভিযুক্তকে বাজিতপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।’’ 

বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সুমনকে আদালতের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’’ 

বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘মাছ ছিনতাইয়ের অভিযোগে প্রয়াত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের ছেলে মফিজুর রহমান সুমন আটক হয়েছেন— এ কথা জেনেছি। তবে সুমন বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠনে কোনো পদে নেই।’’ 

পুলিশ হেফাজতে সুমন সাংবাদিকদের কাছে মাছ ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে স্বনির্ভর বাজারে ভোরে কী করছিলেন, এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নীরব থাকেন।

সুমনের বাবা মজিবুর রহমান বাজিতপুর-নিকলী উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৫ সালের ১৮ মে তিনি মারা যান। 

ঢাকা/রুমন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই ক শ রগঞ জ র রহম ন উপজ ল স মনক

এছাড়াও পড়ুন:

১১ কিলোমিটার সড়কে চলে ২৩ হাজার তিন চাকার যান

সরকারি ছুটির দিনে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পৌরসভার হোটেল-মোটেল জোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কে তখন দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া কিংবা অবসর বিনোদনের জন্য কোথাও যেতে চাইলে লম্বা সময় বসে থাকতে হয় সড়কে। আর এমন যানজটের অন্যতম কারণ তিন চাকার যানবাহন। তিন চাকার এসব যানবাহন টমটম ও ইজিবাইক নামে পরিচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার ১১ কিলোমিটার সড়কে ২৩ হাজারের বেশি তিন চাকার যান চলাচল করে। এর বাইরে দূরপাল্লার আরও চার শতাধিক গণপরিবহন, পাঁচ হাজারের বেশি মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কার-জিপ চলাচল করে। টানা কয়েক দিনের ছুটিতে যখন কক্সবাজারে পাঁচ থেকে ছয় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে, তখন যানবাহনের সংখ্যা আরও চার থেকে পাঁচ হাজার বেড়ে যায়। ফলে যানজট সীমাহীন হয়ে দাঁড়ায়।

শহরের বাইরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে মাত্র দুই শতাধিক বাস রাখার জায়গা রয়েছে। অবশিষ্ট গাড়ি ফেলে রাখা হয় বাইপাস, কলাতলী ও সৈকত সড়কের দুই পাশে। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া সরু সড়কের দুই পাশ ও ফুটপাত দখল করে হাজারো ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের হাঁটাচলার জায়গাও থাকে না। সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে হয় যাত্রীদের।

সবচেয়ে বেশি যানজট ও ভোগান্তি দেখা দেয় শহরের অভ্যন্তরে প্রধান সড়কের ঝাউতলা, বিমানবন্দর সড়কের মোড় ঘুমগাছতলা, পানবাজার সড়কের ভোলাবাবুর পেট্রলপাম্প এলাকা, ফায়ার সার্ভিস এলাকা, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, হাসপাতাল সড়ক, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, কালুরদোকান এলাকা, তারাবুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল রাস্তার মোড়, রুমালিয়ারছড়া, কলাতলীর বাইপাস মোড় ও সুগন্ধা সড়ক এলাকায়।

যে কারণে বাড়ছে তিন চাকার যান

কক্সবাজার শহরে তিন হাজার ইজিবাইক চলতে পারে। কিন্তু এখন চলছে ২৩ হাজার। গত এক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে এসব যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছৈয়দুল হক আজাদ বলেন, এক যুগ আগে শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিল। সম্প্রতি আরও ৫০০ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করা হলেও গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

এক যুগ আগে শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিল। সম্প্রতি আরও ৫০০ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করা হলেও গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।—ছৈয়দুল হক আজাদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কক্সবাজার পৌরসভা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সড়কে হঠাৎ ইজিবাইক নামানোর হিড়িক পড়ে। তখন সড়কে ট্রাফিক পুলিশও ছিল না। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় ও পুলিশের কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তিন মাস পর ট্রাফিক পুলিশ মাঠে নেমে অবৈধ যানবাহন জব্দ করা শুরু করলে চালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এর পর থেকে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ৬২ জন পুলিশ সড়কের নিরাপত্তা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। কিন্তু ধারণক্ষমতার ১০ গুণ ইজিবাইক চলাচলের কারণে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে পুলিশ লাইসেন্স পাওয়া ইজিবাইকের চালকদের ডেটাবেজের আওতায় নিয়ে এসেছে। অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, তিন চাকার যান এতই বেড়েছে যে সড়কে হাঁটার জায়গাও পাওয়া যায় না। শহরের লালদীঘিরপাড় থেকে বার্মিজ মার্কেট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সও প্রতিবন্ধকতায় পড়ে। যানজটের কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, তিন চাকার যানগুলো সারা দিন যাত্রীর আশায় সড়কে ঘুরতে থাকে। যখন যেখানে ইচ্ছা দাঁড়িয়ে থাকে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ লোকজন যান চালানোর কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

বিদ্যুতের ঘাটতি

কক্সবাজার শহরে চলাচল করা তিন চাকার গাড়িগুলোয় ব্যাটারি চার্জ দিতে দৈনিক দুই থেকে তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে বলে জানান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, শহরের নানা জায়গায় গ্যারেজে এসব যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টমটম ও মিশুক গাড়ির ব্যাটারি চার্জের জন্য শহরের ঝাউতলা, গাড়ির মাঠ, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলী, বাস টার্মিনাল, সমিতিপাড়া, কলাতলী, নাজিরারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। কিছু অসাধু গ্যারেজের মালিক অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ টেনে ব্যাটারি চার্জ দিচ্ছেন।

সমিতিপাড়ার টমটমের চালক আকবর আলী (৩৪) বলেন, আগে সাগরে মাছ ধরতেন। গত ৪ অক্টোবর মাছ আহরণের ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে তাঁর আয়রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি ইজিবাইক চালাচ্ছেন। দৈনিক ১ হাজার ৪০০ টাকা আয় হলেও টমটমের ভাড়া ৬০০ টাকা মালিককে পরিশোধ করতে হয়। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে গ্যারেজের মালিককে দিতে হয় ১৫০ টাকা।

যানজট কমানোর পদক্ষেপ

পর্যটকসহ যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি দূর, নিরাপত্তা ও গণপরিবহনের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে জেলা পুলিশের উদ্যোগে দেশের প্রথম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘অনলাইন বাস টার্মিনাল’ চালু করা হয়। গত এক বছরে এর সাফল্য অনেক দাবি করে জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, অনলাইন বাস টার্মিনালে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে চলাচলরত ৭৩টি আন্তজেলা বাস পরিবহনের শিডিউল অ্যাপসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া দেশের ১০৫টি আন্তজেলা পরিবহনের ১ হাজার ৭৬৮টি বাস, ১ হাজার ৬৮০ চালক ও ২ হাজার ৩৮৬ গাইডের তথ্য অ্যাপসে সন্নিবেশ করা হয়েছে। ডিজিটাল এই প্ল্যাটফর্মে যাত্রী সাধারণদের ঘরে বসে সব পরিবহনের টিকিট প্রাপ্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। শহরের ভেতরে শিক্ষাসফর কিংবা পিকনিকে আসা বাস প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের পূর্বানুমতি লাগে। গত এক বছরে অ্যাপস ব্যবহার করে শহরে প্রবেশ করেছে প্রায় ১১ হাজার বাস। এতে যানজট কিছুটা কমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১১ কিলোমিটার সড়কে চলে ২৩ হাজার তিন চাকার যান