অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে লোকজন ভিডিও ধারণ করে, প্রতিহত করতে আসে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 11th, August 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে লোকজন ভিডিও ধারণ করে। কিন্তু তারা প্রতিহত করতে আসে না। আগে বাচ্চারা লঞ্চ থেকে নদীতে পড়ে গেলে লোকজন ঝাঁপ দিয়ে তাকে উদ্ধার করত। এখন কোনো ঘটনা দেখলে তারা ভিডিও করে, কিন্তু প্রতিহত করতে আসে না। অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিহত করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব।’
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ওই সময়ে থানা খালি ছিল। অন্যান্য বাহিনী তেমন সক্রিয় ছিল না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে যেভাবে রয়েছে, আমার মনে হয় নির্বাচন করতে তেমন অসুবিধা হবে না।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি। আমার দায়িত্ব হলো ভোটকেন্দ্র দেখা না, ভোটের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। বাইরে থেকে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া। এসব কার্যক্রম অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় দুই উপজেলা মিলে একটি আসন। আর শুধু কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩–এর দুটি সংসদীয় আসন রয়েছে। এক উপজেলায় দুই আসন দেশের আর কোথাও নেই।’
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জনগণেরও সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, এবার ভোটটা যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়, সে জন্য সব ধরনের চেষ্টা থাকবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ৮০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্বে থাকবেন। এবার প্রতিটি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নিরাপত্তার জন্য আগের দুজন আনসারের সঙ্গে বাড়তি একজন অস্ত্রধারী আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণ করার জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে তাঁদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে। তা ছাড়া নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা বুথ তো থাকছেই।
সারা দেশে ভুয়া মামলা ও মামলা–বাণিজ্যের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোনো নিরীহ ব্যক্তি যেন আইনের আওতায় না আসে, সে জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অর্থের লোভে কাউকে ফাঁসানোর প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
সারা দেশে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ থাকায় নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা আমরা নেব। আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আমরা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছি।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের আগে র্যাব-১০–এর সদর দপ্তর ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। পরে তিনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পরিদর্শন করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ টক ন দ র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। দুর্বৃত্তরা যখন এক ভদ্রলোককে নিশানা করে ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ বলে সহযোগীদের ডাকছিল, তখন আসাদুজ্জামান পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে ঘটনার ছবি তুলছিলেন। এরপর পাঁচ–ছয়জন দুর্বৃত্ত তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। তিনি দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি। তারা দোকানে ঢুকে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এটা গাজীপুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগের দিন বুধবার নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে আনোয়ার হোসেন নামের আরেক সাংবাদিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত সাত মাসে গাজীপুরে শতাধিক হত্যা ও অসংখ্য ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে দেশের আরও অনেক স্থানের মতো গাজীপুরেও মব সন্ত্রাস বেড়ে যায়। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য যারা দায়ী, সরকার তাদের না ধরে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। এই অপরাধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে এলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যে ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নিহত হন, তা–ও ছিল অপরাধীদের অপকৌশলের অংশ।
আসাদুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি, যিনি দুটি কাজ করে সংসার নির্বাহ করতেন। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাজীপুরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার পেছনে পেছনে হাঁটে। তারা যদি জানেই যে সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র আছে, তাদের ধরতে আগে থেকে অভিযান চালাল না কেন?
পুলিশের লোকবলের অভাব আছে, মানুষ এই অজুহাত শুনতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত আছেন। এতগুলো বাহিনী দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে ছিনতাই–ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটতে থাকলে মানুষ কীভাবে ভরসা পাবে? গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে একজন সাংবাদিক খুন হওয়ার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকদের চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। তাঁরা বরাবরের মতো সাংবাদিকদের ওপর সরকার কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না বলে সাফাই গাইছেন। সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
কেবল গাজীপুর নয়, সারা দেশেই জননিরাপত্তা হুমকির মুখে। সন্ত্রাসীরা যদি একজন কর্তব্যরত সাংবাদিককে খুন করে পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বলে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এক বছর পরও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধের কমবেশি পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা যাবে না। তারা তখনই আশ্বস্ত হবে, যখন দেখবে সরকার সত্যি সত্যি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সন্ত্রাসীদের হাতে যে সাংবাদিক নৃশংসভাবে খুন হলেন, কোনোভাবেই তাঁকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু জননিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আগেই সরকারকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।