কল্পবিদ্রুপ

কফিনের বিছানায় শোয়ার সাধ ছিল বরাবর।

করতলে আঁকা হয় যতবার পরাজয়ের মানচিত্র...

ততবারই জেগে ওঠে ঘুমন্ত চরাচর।

তাই তো...

কুয়াশাগুলো বড্ড চেনা-অচেনা লাগে।

ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় চাঁদকে ধোয়া-আধোয়া লাগে।

আমিও তো শীত। আগুনে সেঁকা হাত।

খারাপ না, ভালোই তো লাগে।

প্রবোধের বারান্দায়

কী একটা কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল সে।

তাকে বললেম, ‘ওকে চুমু খাও?’

উত্তর দিলে না।

একটু থেমে বললাম, ‘আদর করো?’

এবার বললে, ‘ওটুকুতে তোমার এক কানাও ভরবে না।’

শেষে বললাম,

‘ও বুঝি খুব দামি? মার্বেল পাথরের মতো? তাই দেখিয়ে বেড়াও?’

সে বললে, ‘তুমি প্রত্নতত্ত্ব। হাজার বছরের খনি। তোমায় সিন্দুকে তুলে লুকিয়ে রাখি।’

শেষে বললাম, ‘ওর স্বাদ খুব মিষ্টি, তাই না?’

সে বললে, ‘তুমি প্রাচীন কাঠামো। সোঁদা ইটের ঘ্রাণ। বোতলে ভরা যায় না।’

দ্বিতীয় নারী অথবা তৃতীয় মানুষ

রাইত হইলেই তোমার লিগা হাপুসহুপুস করে

অন্তর.

..

দিন ফুরাইলে তোমারে খালি গাপুসগুপুস চায়

তোমার লিগা দুইটা চক্ষু ঘুমের বাড়িত যায়

বিহানবেলা নজর খালি তোমার পানেই ধায়।

নিদ ভাইঙ্গা আইবা তুমি আমার শয্যা ’পরে

সেই পন্তক জানটা আমার ছটরফটর করে।

রাইত হইলেই তোমার খোঁজে উজাড় হয়া কান্দে!

গতর...

আন্ধার হইলেই তোমায় ভাইবা খিদায় মইরা যায়

দিনদুফোরে আইসা তুমি সোহাগ করো যতই

রাইতের বিছান উপবাসে তড়পায় খালি ততই

চাষাবাদে ভরাও যতই আমার দেহজমিন

ঘুমের ঘোরে অনাবাদে ধুলা উইড়া যায়

বেলা বাড়লেই পাও দুইখান পলাই পলাই করে

তোমার...

সারা শরীর কোন হাজতে শিকল পরতে যায়

আমারে থুইয়া কোন উজানে নৌকা বাইতে যায়?

আমার উদাম জলে ডুব দিয়া তুমি গামছা বিছরাও

সোহাগের রস দিল-দেহ থিকা মুইচ্ছা ফালাও।

তুমি টুকপলান্তি খেলো, আমার পরান ফাইটা যায়,

আমার গতরটা তড়পায়

আমার জানটা মইরা যায়

তুমি কোন বিছানে পাশ ফিরা শোও

আমার হৃদয় জানতে চায়।

দিন ফুরাইলে তোমার লিগা হাপুসহুপুস করে।

অন্তর...

রাইত হইলেই তোমারে খালি গাপুসগুপুস চায়।

দুঃখ ভুলে গেলে

দুঃখ কি ভোলা যায়?

দুঃখ কি হয় কখনো রোজকার ডাইনিং টেবিল?

দুঃখ ভুলে গেলে কি গলার ভেতর আটকে থাকে সুখ?

দুঃখ ভুলে গেলে ডুকরে ওঠে কি বুকের উষ্ণ বাতাস?

দুঃখ ভুলে গেলে কষ্টরা হাসে না।

দুঃখ ভুলে গেলে নষ্টরা ভালোবাসে না।

দুঃখ ভোলা গেলে ভালোবাসা যায় না।

তেড়ে ওঠে না রোষ,

কেঁপে ওঠে না হুঁশ।

দুঃখ ভুলে গেলে জমাট বাঁধে না রক্ত চোখের কোণে।

দুঃখ ভুলে গেলে ভোরের বাতাসে ঘুমাতে যায় কি রাতের শিশির

যেমন করে রাস্তা পার হয় একাকী অনাথ কুকুর

দুঃখ ভুলে গেলে আসে কি চোখে সুখনিদ্রা?

যেমন করে ব্লেন্ডারে মিশে তৈরি হয় মৌসুমি জুস।

দুঃখ ভুলে গেলে আর ভাত খাওয়া যায় না।

দুঃখ ভুলে গেলে আর কবিতা লেখা যায় না।

দুঃখ ভুলে গেলে আর দুঃখ পাওয়া যায় না।

দুঃখ ভুলে গেলে আর তোমার কাছে আসা যায় না।

শামুক উবাচ

অথচ সেই নীলচে শামুক পাড়ি দিতে চেয়েছিল হলদে ঢালের পাহাড়,

জেব্রা ক্রসিংয়ের লালচে ব্যারিকেডে বাসনা ছিল না কোনো বাসর গড়ার।

যদিও তুমি মগ্ন ছিলে চিলেকোঠার বাগানঘরে,

আমি তখন নূপুরবাড়ি, পিচের ছাদে মহুয়া ঝড়ে।

দাহকালের গহনবেলায় সন্ধ্যে নামার মোহ,

শামুকের তখন উষ্ণ সময়, ভেজা নষ্ট দেহ।

তারপর তুমি রক্ত ছুঁলে। পাতালজুড়ে নামল দ্রোহের নেশা,

তুলসীতলায় টুকরো শরীর;

পার্বতী নয়, মহাদেবের বিষের লালা মেশা।

আজকে যদি নহরমাঝে লাশের গন্ধ ভাসে,

আর শামুকসমাজ প্রতিবাদে ইথারপাতায় ভাসে,

তুমি, তোমরা ঈষৎভোরে নগ্ন হয়ে সঙ্গ দেবে গোধূলির সব ধুলায়,

আমি কেবল ফেনার প্রাসাদ সজ্জাকর্মে ব্যস্ত ভীষণ, জল দিচ্ছি চুলায়।

এই যে তুমি শামুক মাড়াও, খোলস ভেঙে ছিন্নভিন্ন নার্সিসিজমঘাতক,

অথচ দেখো, আমিই কেবল পানের আশায় নর্দমাখোর চাতক।

কিন্তু শামুক বিদ্যা খোঁজে, হন্তাপন্থা জানে না, তাও শিখরপানে চায়,

চন্দ্রাহত ভোগের বাসনা চিতার পরেও,

হায়, বলো হায়, কে না চায়!

কে না চায়?

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হইল ই ত বলল ম

এছাড়াও পড়ুন:

লিফলেট বিতরণে যাওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার অভিযোগ

মাদারীপুরের শিবচরে তারেক রহমানের ৩১ দফা–সংবলিত লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাত আটটার দিকে শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট নিয়ে বের হন মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাবলু সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকেরা। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেন তাঁরা। ফেরার পথে উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এলে শিবচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান বাবুল ফকিরের লোকজনের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ।

এ সময় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন। ভাঙচুর করা হয় পাঁচটি মোটরসাইকেল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবচর থানা–পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া সুমন আহম্মেদ ও রাশেদ মৃধা বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা লিফলেট নিয়ে তাঁরা চরশ্যামাইল এলাকার কাজীর দোকান নামক স্থানে এলে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল ফকিরের ছেলে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা সুমন ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাঁদের অনেক লোকজন আহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল রেখে তাঁদের অনেকে সেখান থেকে ফিরেছেন।

বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন অনুসারীর কথাকাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি মিটমাটও হয়ে গেছে। লিফলেট বিতরণ শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার সময় রাস্তায় গতিরোধ করে দুই দিক থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলায় যারা আহত বেশির ভাগই বিএনপির কর্মী সমর্থক। তিনি হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতের বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাবলু ফকিরের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। এ ঘটনায় থানায় এখনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ