জলবায়ু সংকটে হাওরের নারীরা বেশি ঝুঁকিতে
Published: 11th, August 2025 GMT
হাওরকে ঘিরেই লাখ লাখ নারীর জীবন আবর্তিত হচ্ছে। তাঁদের সংকট চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।
আজ সোমবার ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন: হাওরাঞ্চলের নারীর জীবন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।
সুইডিশ সরকারের সহযোগিতায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, হাওরে ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ সরাসরি জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে ২ থেকে ৩ লাখ নারীর জীবিকা ও জীবন হাওরকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।
এসব নারীর সংকট, সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে জানিয়ে সেখ ফরিদ বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত হাওরে কত ধান উৎপাদন হলো, কত মাছ আহরণ হলো, সেটা হিসাব করে। এখন নারীর সংকটগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সময়।
তিনি বলেন, আজকের গোলটেবিল থেকে হাওরে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে নারীরা কী ধরনের সংকটে আছে, সেটা উঠে এসেছে। সেগুলো শনাক্ত করে সরকার সমাধানের পথ খুঁজবে।
হাওরে সংকট মোকাবিলায় আন্তমন্ত্রণালয় ও আন্তসংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে আসা পরামর্শ, সুপারিশ সরকারের কাছে পৌঁছানো এবং নীতি প্রণয়নে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ সরকার বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি।
গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা শুরু করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য অস্তিত্বসংকট তৈরি করলেও সেটার মোকাবিলায় আমরা সে রকম কোনো উদ্যোগ দেখি না। যেকোনো দুর্যোগে পুরুষ ও শিশুদের ওপর প্রভাব পড়লেও নারীর ওপর সে প্রভাবের মাত্রা হয় দ্বিগুণ।’
তিনি বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ ও নারীর জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার নিতে হবে আমাদের। সামনে নির্বাচন আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে জলবায়ু ও নারী নিয়ে অঙ্গীকার আদায় করে নিতে হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ও ব্যবস্থাপনা) মো.
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা ভুক্তভোগী হয়ে থাকতে চান না। পরিবেশ ও সুযোগ পেলে তাঁরা নিজেদের কর্তাসত্তা চর্চা করতে চান। আমাদের পলিসি আছে অনেক। কিন্তু কোনো পলিসি অ্যাকশন নেই। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয়ও দেখি না।’
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি দিলরুবা হায়দার হাওরে নারীর সংকট নিয়ে আরও গভীর ও বিস্তারিত গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘হাওরে নারীর জীবন অনেক কঠিন। ঘন ঘন বন্যার কারণে নারীর সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জায়গায় এত বেশি সন্তুষ্ট হয়ে গেছি যে এসব নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করিনি। নারীর ভাগ্য উন্নয়নে কী করা যায়, সেটা নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে।’
সুইডিশ সরকারের সহযোগিতায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র র জ বন শ সরক র র জন য র ওপর জলব য় সমন ব
এছাড়াও পড়ুন:
মব সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠা ৮০ শতাংশ মানুষের
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ মানুষ, যাঁদের ৫৬ শতাংশ পুরুষ আর ৬৬ শতাংশ নারী। পোশাকের জন্য রাস্তাঘাটে হয়রানি নিয়ে উৎকণ্ঠিত ৬৭ শতাংশ মানুষ। তাদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ আর ৭১ শতাংশ নারী।
এমন চিত্র উঠে এসেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, গত ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে এই জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহুরে।
উত্তরদাতাদের মধ্যে উচ্চমধ্যবিত্ত ও বিত্তবানেরা ছিলেন না, মতামত দিয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। জরিপে রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে টেলিফোনে প্রশ্ন করে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর আগে অক্টোবরের তথ্যের ভিত্তিতে গত ডিসেম্বরে বিআইজিডির দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এ মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জরিপে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৫ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসায় মন্দা, ৯ শতাংশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ১৮ শতাংশ মানুষ নির্বাচিত সরকার না থাকার কথা বলেছেন। গত বছরের অক্টোবরের জরিপে ৫০ শতাংশ মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। আর ১০ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসায় মন্দা আর ৭ শতাংশ আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছিলেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতির প্রয়োজনের কথা বলেছেন ১৬ শতাংশ। ১১ শতাংশ মানুষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসা চাঙা করা, ১৩ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, ১০ শতাংশ বেকারত্ব কমানো এবং ১৭ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি দমনের কথা বলেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছেন ১৯ শতাংশ করে মানুষ।
বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৫ শতাংশ মানুষের মত হলো, দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। গত বছরের অক্টোবরে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৩ শতাংশ বলেছিলেন, অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে।
জরিপ অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন চান ৫১ শতাংশ মানুষ। কিছু জরুরি সংস্কার করে নির্বাচন চান ১৭ শতাংশ। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন দেওয়া ভালো বলে মনে করেন ১৪ শতাংশ মানুষ। আর সংস্কার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত যেসব প্রচেষ্টা, সেগুলোকে আপনি ১০০-তে কত নম্বর দেবেন—এই প্রশ্নে সরকারকে ৬৩ নম্বর দিয়েছেন উত্তরদাতারা। গত অক্টোবরের জরিপে ছিল ৬৮।
কাকে ভোট দেবেন, সিদ্ধান্তহীন ৪৮.৫০% মানুষআগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন—এই প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৩৮ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আট মাস পরে বিআইজিডির জরিপে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বলছেন, কাকে ভোট দেবেন, তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। কাকে ভোট দেবেন, বলতে চান না ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ভোট দেবেন না বলেছেন ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
একই প্রশ্নের উত্তরে ১২ শতাংশ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অক্টোবরে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত ও ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
অক্টোবরের জরিপে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটি এখন কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ভোট শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ, অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে।
এবার জরিপে নতুন প্রশ্ন ছিল, আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে। জবাবে ৩৮ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াত ও ১ শতাংশ এনসিপির কথা বলেছেন। আর আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন ৭ শতাংশ মানুষ।
জাতীয় নির্বাচন কখন চান—এমন একটি প্রশ্নও ছিল জরিপে। জবাবে ৩২ শতাংশ মানুষ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চেয়েছেন। ডিসেম্বর (২০২৬) অথবা পরে নির্বাচনের কথা বলেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ।
৭০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
‘মব সহিংসতা বন্ধে দরকার আইনের শাসন’জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
প্যানেল আলোচনায় মির্জা এম হাসান বলেন, মব সহিংসতা বন্ধে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন-পরবর্তী সরকার আইনের শাসন মেনে চললে এটা কমবে। নির্বাচন হয়ে গেলে সংস্কার নিয়ে আর কোনো কথা হবে না বলে মানুষ মনে করেন। এ জন্যই তাঁরা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা হাসান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিইনি বা বলতে চাই না—এখানে আওয়ামী লীগও লুকিয়ে আছে। ভোটের চিত্র মোটামুটি আগের মতোই আছে।’
রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান আসিফ মোহাম্মদ শাহান। তিনি বলেন, মানুষ হয়তো মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দল কেউই তাঁদের উদ্বেগগুলো নিয়ে চিন্তিত নয়। হয়তো এ কারণেই ভোটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীন মানুষের সংখ্যা বেশি।