হাওরকে ঘিরেই লাখ লাখ নারীর জীবন আবর্তিত হচ্ছে। তাঁদের সংকট চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।

আজ সোমবার ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন: হাওরাঞ্চলের নারীর জীবন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।

সুইডিশ সরকারের সহযোগিতায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, হাওরে ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ সরাসরি জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে ২ থেকে ৩ লাখ নারীর জীবিকা ও জীবন হাওরকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

এসব নারীর সংকট, সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে জানিয়ে সেখ ফরিদ বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত হাওরে কত ধান উৎপাদন হলো, কত মাছ আহরণ হলো, সেটা হিসাব করে। এখন নারীর সংকটগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সময়।

তিনি বলেন, আজকের গোলটেবিল থেকে হাওরে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে নারীরা কী ধরনের সংকটে আছে, সেটা উঠে এসেছে। সেগুলো শনাক্ত করে সরকার সমাধানের পথ খুঁজবে।

হাওরে সংকট মোকাবিলায় আন্তমন্ত্রণালয় ও আন্তসংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে আসা পরামর্শ, সুপারিশ সরকারের কাছে পৌঁছানো এবং নীতি প্রণয়নে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ সরকার বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা শুরু করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য অস্তিত্বসংকট তৈরি করলেও সেটার মোকাবিলায় আমরা সে রকম কোনো উদ্যোগ দেখি না। যেকোনো দুর্যোগে পুরুষ ও শিশুদের ওপর প্রভাব পড়লেও নারীর ওপর সে প্রভাবের মাত্রা হয় দ্বিগুণ।’

তিনি বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ ও নারীর জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার নিতে হবে আমাদের। সামনে নির্বাচন আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে জলবায়ু ও নারী নিয়ে অঙ্গীকার আদায় করে নিতে হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ও ব্যবস্থাপনা) মো.

জিয়াউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর সংকট চিহ্নিত করতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনায় এ মন্ত্রণালয়ের কাউকে দেখা যায় না। তিনি আন্ত্রমন্ত্রণালয় ও আন্তসংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা ভুক্তভোগী হয়ে থাকতে চান না। পরিবেশ ও সুযোগ পেলে তাঁরা নিজেদের কর্তাসত্তা চর্চা করতে চান। আমাদের পলিসি আছে অনেক। কিন্তু কোনো পলিসি অ্যাকশন নেই। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয়ও দেখি না।’

জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি দিলরুবা হায়দার হাওরে নারীর সংকট নিয়ে আরও গভীর ও বিস্তারিত গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘হাওরে নারীর জীবন অনেক কঠিন। ঘন ঘন বন্যার কারণে নারীর সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জায়গায় এত বেশি সন্তুষ্ট হয়ে গেছি যে এসব নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করিনি। নারীর ভাগ্য উন্নয়নে কী করা যায়, সেটা নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে।’

সুইডিশ সরকারের সহযোগিতায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র র জ বন শ সরক র র জন য র ওপর জলব য় সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘ভিশনএক্স: এআই পাওয়ার্ড ন্যাশনাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক জাতীয় প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৫ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১টি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এই প্রতিযোগিতার ‘ভিশনএক্স’-এ দুটি ট্র্যাক ছিল। বিজনেস আইডিয়া ট্র্যাকে ৪১টি উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক ধারণা উপস্থাপন করা হয়। প্রজেক্ট শোকেসিং ট্র্যাকে এআই–ভিত্তিক প্রকল্প ও উদ্ভাবন প্রদর্শন করা হয়।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফেলোশিপ, ৬ খাতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ৭ ঘণ্টা আগেপ্রতিযোগিতায় পুরস্কার—

প্রতিযোগিতার প্রজেক্ট শোকেসিং ট্র্যাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি প্রথম রানার্সআপ এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়। বিজনেস আইডিয়া ট্র্যাকে লিডিং ইউনিভার্সিটি ও শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চ্যাম্পিয়ন হয়। এই ট্র্যাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম রানার্সআপ ও শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়। প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দল ১ লাখ টাকা ও ২ দিনের ব্যাংকক ভ্রমণ, প্রথম রানার্সআপ দল ৮০ হাজার টাকা ও কক্সবাজার ভ্রমণ এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ দল ৫০ হাজার টাকা ও কক্সবাজার ভ্রমণের সুবিধা পেয়েছে।

প্রতিযোগিতায় অতিথি ছিলেন—

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনমেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা : দেখে নিন আবেদনের নিয়মাবলি১৩ নভেম্বর ২০২৫

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবির এবং ইউএস–বাংলা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

অতিথিদের কথা—

উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও মননশীলতার চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুননিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যে নতুন সুযোগ দিল ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সরকারি অর্থের অপচয় রোধ এবং জনস্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, তাত্ত্বিক জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি এর প্রায়োগিক সফলতা নিয়েও কাজ করতে হবে।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তরুণেরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ