তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী। রপ্তানি সম্ভাবনা, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায় ব্যাংকগুলো এই দুটি খাতে বেশি আগ্রহ দেখায়। ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর কম আগ্রহ উৎপাদন বা শিল্প ও নির্মাণ খাতে।

আজ সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়েছে। কর্মশালায় একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। বিআইবিএমের চার শিক্ষক মোট ৩৭টি ব্যাংকে প্রশ্ন-উত্তরের তথ্য দিয়ে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন। গবেষণার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার ব্যনার্জী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার ফারুক এম আহমেদ, সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো.

আলী হোসেন প্রধানিয়া, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ, বিআইবিএমের মহাপরিচালক এস এম আবদুল হাকিম প্রমুখ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২০২৪ সালে মোট ঋণের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপির হার ছিল ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপির পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ। গবেষণার প্রশ্নে ২৯ দশমিক ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, ব্যবসায়িক ব্যর্থতার কারণে ঋণখেলাপি হয়।

ব্যাংকিং খাতে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে বন্ডের বাজারে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহ হচ্ছে না। এর সঙ্গে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও সুশাসনের অভাব রয়েছে।—নুরুন নাহার, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর দেশীয় ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ অনুপাত কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়। এটি বাড়ানো না গেলে দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না।

কোন অঞ্চলে কত ঋণ

গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালে দেশে মোট ঋণের মধ্যে প্রায় ৮৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ দেওয়া হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। বাকি ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ ঋণ যায় অন্যান্য বিভাগে। বিদেশি ব্যাংকগুলো তাদের মোট ঋণের ৯৩ শতাংশ ঢাকায় বিতরণ করে। গবেষণায় নগর ও গ্রামীণ অঞ্চলে ঋণ বিতরণে বড় ধরনের পার্থক্য উঠে আসে। যেমন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণের ৯১ দশমিক ৮৪ শতাংশ নগর অঞ্চলে প্রদান করা হয়। গ্রামীণ অঞ্চলে এই পরিমাণ মাত্র ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বড় শিল্পঋণ অনুমোদন হয় ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে। তাই ঋণখেলাপি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত যোগ্য ও সৎ ঋণগ্রহীতা নির্বাচন। পরিচালনা পর্ষদ যদি নিরপেক্ষভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সুচিন্তিত নির্দেশনা দেয় তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব।—কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, এমডি, রূপালী ব্যাংক।

প্রশান্ত কুমার বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবাসন খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। দেশের প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে ব্যাংকের সেবার আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানের আগে সেটির আর্থিক স্থিতিপত্রের ওপর নির্ভর না করে সম্পদ ও মূলধন অর্থায়নের মতো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে বন্ডের বাজারে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহ হচ্ছে না। এর সঙ্গে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও সুশাসনের অভাব রয়েছে।’

কোন খাতে কত ঋণ

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ দেয় ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর শিল্পের চলতি মূলধন খাতে ঋণ দেয় ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কৃষি, মৎস্য ও বনসম্পদে ঋণের হার ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবহন ও নির্মাণ খাতে দেওয়া ঋণের হার হচ্ছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৬৭ ও ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে এই দুটি খাতে ঋণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কমেছে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ সম্পর্কিত ধারণা; বিশেষ করে ঋণ বাছাই ও পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয়ভাবে ঋণ পর্যবেক্ষণ ও বাছাইয়ের কাজ করে, তারা তুলনামূলকভাবে ভালো ফল পায়। ব্যাংকগুলোর এক মডেলে সব ধরনের ঋণ দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।’

গবেষণায় বলা হয়, ২০২৪ সালে নেওয়া ১ থেকে ২০ কোটি টাকার ঋণ হচ্ছে মোট ঋণের ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০ কোটি টাকার বেশি এমন অঙ্কের ঋণ হচ্ছে মোট ঋণের ৪৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। শতাংশের হিসাবে এই দুই শ্রেণির ঋণ নেওয়ার হার বেড়েছে।

শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব ও উদ্দেশ্য নিয়ে কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থে বলপ্রয়োগ করে ঋণ নেওয়া হয়েছিল—এসবই ছিল বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে আমরাও পুরোপুরি দায়মুক্ত নই। বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। ব্যাংকগুলো যখন সরকারি বন্ড থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ পায়, তখন তাদের অন্য খাতে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়াই স্বাভাবিক।’

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বড় শিল্পঋণ অনুমোদন হয় ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে। তাই ঋণখেলাপি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত যোগ্য ও সৎ ঋণগ্রহীতা নির্বাচন। পরিচালনা পর্ষদ যদি নিরপেক্ষভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সুচিন্তিত নির্দেশনা দেয় তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল ম ট ঋণ র ল ইসল ম আম দ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

বুয়েটে স্নাতক শ্রেণির বিভিন্ন লেভেল বা টার্মের সংশোধিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ সেশনের স্নাতক শ্রেণির বিভিন্ন সংশোধিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার নিচের সময় অনুসারে ঘোষণা করা হয়েছে। উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক এন এম গোলাম জাকারিয়া এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

প্রকৌশল অনুষদগুলোর সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য—
প্রকৌশল অনুষদগুলো:
২০২৪-২৫ সেশনের লেভেল-১/টার্ম-২,
                               লেভেল-২/টার্ম-১।
২০২৩-২৪ সেশনের লেভেল-২/টার্ম-২,
                                 লেভেল-৩/টার্ম-২,
                                 লেভেল-৪/টার্ম-২।
স্থাপত্য বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য—
স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ:

২০২৪-২৫ সেশনের লেভেল-১/টার্ম-২,
                               লেভেল-২/টার্ম-১।
২০২৩-২৪ সেশনের লেভেল-২/টার্ম-২,
                                লেভেল-৩/টার্ম-২,
                                 লেভেল-৪/টার্ম-২,
                                লেভেল-৫/টার্ম-২।

আরও পড়ুনএডিবি বৃত্তি: টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়নে মাস্টার্সের সুযোগ৭ ঘণ্টা আগেকোর্স রেজিস্ট্রেশনের তারিখ—

কোর্স রেজিস্ট্রেশন: ২৯ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর ২০২৫,
বিলম্ব ফিসহ কোর্স রেজিস্ট্রেশন: ১৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫,
কোর্স অ্যাডজাস্টমেন্ট (Add or Drop): ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৪ জানুয়ারি ২০২৬।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সে আইসিটি বিষয়, কারা পড়াবেন২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ক্লাস ও পরীক্ষার সময়

১. ক্লাস : ২৯-১১-২০২৫ থেকে ১৯-১২-২০২৫:  ৩ সপ্তাহ,
২. শিক্ষকের শীতকালীন অবকাশ: ২০-১২-২০২৫ থেকে ২-০১-২০২৬: ২ সপ্তাহ
৩. ক্লাস:  ৩-০১-২০২৬ থেকে ১৩-০৩-২০২৬: ১০ সপ্তাহ,
৪. ঈদুল ফিতর ও পরীক্ষা প্রস্তুতির ছুটি : ১৪-০৩-২০২৬ থেকে ১০-০৪-২০২৬: ৪ সপ্তাহ,
৪. পরীক্ষা: ১১-০৪-২০২৬  থেকে ৭-০৫-২০২৬: ৩ সপ্তাহ ৬ দিন,
৫. পরবর্তী টার্মের ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ : ৬ জুন ২০২৬।

#বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট: www.buet.ac.bd

আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা...
  • বুয়েটে স্নাতক শ্রেণির বিভিন্ন লেভেল বা টার্মের সংশোধিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ
  • সাতক্ষীরায় ভারতীয় ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা
  • আফগানিস্তানে কী কী বই নিষিদ্ধ হলো, তালেবান কী বার্তা দিচ্ছে
  • লোপেজ বললেন, ‘বিচ্ছেদ জীবনের সেরা ঘটনা’