চোখের যে ৫ লক্ষণ জানাবে কিডনির সমস্যা
Published: 12th, August 2025 GMT
১. সারা দিন চোখ ফোলা
ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকেরই চোখ ফোলা থাকে। সেটা এক বিষয়। কিন্তু সেই ফোলা চোখ যদি সারা দিন থাকে, তাহলে চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে চোখের পাতার চারপাশে ফোলাভাব থাকলে সতর্ক হোন। এটি প্রোটিনুরিয়া হতে পারে, যেখানে প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রোটিন বের হয়ে যায়। এতে শরীরের নরম টিস্যুতে তরল জমে যায়। যেমন জমে চোখের চারপাশে। কিডনির ক্ষতির অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ এটি।
২.ঝাপসা বা দ্বিগুণ দেখা
হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, ফোকাস করতে কষ্ট হওয়া বা দ্বিগুণ দেখা—এসব হতে পারে চোখের সূক্ষ্ম রক্তনালির ক্ষতির ফলাফল হিসেবে, যা হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত। উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি রোগের প্রধান কারণ এবং এসব রেটিনার রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফলে রেটিনায় তরল জমা, ফোলা ভাব, এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে দৃষ্টি হারানোর ঝুঁকি থাকে। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকে এবং হঠাৎ দৃষ্টি পরিবর্তন হওয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটে, চোখের পরীক্ষা সঙ্গে কিডনি পরীক্ষা করানোও জরুরি।
আরও পড়ুনদুই মিনিট রিকশায় ঘুরে গুনতে হলো আড়াই হাজার টাকা০৪ আগস্ট ২০২৫৩. চোখ শুষ্ক, চুলকানো বা জ্বালাচোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া, শুষ্ক বোধ হওয়া বা চুলকানি অনেক কারণেই হতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ীভাবে শুষ্ক চোখ উচ্চ পর্যায়ের কিডনি রোগ বা ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগীদের মধ্যে সাধারণত হতে দেখা যায়। এর কারণ হতে পারে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের ভারসাম্যহীনতা বা শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে গিয়ে অশ্রু উৎপাদন ও চোখের লুব্রিকেশন কমে যাওয়া। যদি পরিবেশগত কারণ ছাড়াই চোখ বারবার শুষ্ক হয়ে যায়, লাল হয়ে যায়, খচ খচ করে, তাহলে কিডনি পরীক্ষা করে ফেলুন। কৃত্রিম অশ্রু বা চোখ আর্দ্র রাখার উপায় সাময়িকভাবে স্বস্তি দিলেও আসল কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
৪. লাল বা রক্তাভ চোখচোখ লাল হওয়ার পেছনে অ্যালার্জি, ক্লান্তি বা সংক্রমণ—এসব সাধারণ কারণ থাকতে পারে। তবে কিডনি রোগের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কারণও থাকতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে গেলে চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালি ফেটে গিয়ে চোখ রক্তাভ দেখাতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে লুপাস নেফ্রাইটিসের মতো অটো ইমিউন রোগ কিডনি ও চোখ উভয়কেই প্রদাহগ্রস্ত করে তোলে। চোখ লালের সঙ্গে যদি জয়েন্টে ব্যথা, ফোলা বা ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই পরীক্ষা ও চিকিৎসা করান।
আরও পড়ুনভাই বা বোন কি টক্সিক আচরণ করছে০৮ আগস্ট ২০২৫৫. রং বুঝতে ঝামেলাকিডনিতে কোনো সমস্যা তৈরি হলে এর প্রভাব পরে রং বোঝার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে নীল ও হলুদ রং। এর কারণ হতে পারে অপটিক নার্ভ বা রেটিনার ক্ষতি, যা দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা ইউরেমিক টক্সিন জমে যাওয়ার কারণে হয়। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে শুরু হয়। প্রথমে চোখ এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট হতে থাকে। সঠিকভাবে রং ধরতে না পারলে অথবা দৃষ্টি নিস্তেজ হলে, বয়স হয়েছে ভেবে বসে থাকবেন না। চিকিৎসকের কাছে যান। পরীক্ষা করান।
সতর্ক থাকুনচোখের সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সঙ্গে ক্লান্তি, শরীর ফোলা বা প্রস্রাবে পরিবর্তন হয়, তাহলে চোখ ও কিডনি দুটোই পরীক্ষা করান।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখতে রোজ কয় লিটার পানি খাবেন১১ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে বিরতির মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ল
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের পাল্টাপাল্টি শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা আরও ৯০ দিন বাড়িয়েছে। এতে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত তিন অঙ্কের শুল্ক আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতারা যখন বছর শেষের ছুটির মৌসুমকে সামনে রেখে পণ্যের মজুত বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই এমন ঘোষণা এল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, তিনি একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এর আওতায় আগামী ১০ নভেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট (ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত থাকবে। পারস্পরিক শুল্ক বিরতির অন্য সব শর্তও অপরিবর্তিত থাকবে।
রোববার ট্রাম্প চীনের কাছে দাবি করেছিলেন, দেশটি যেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কেনার পরিমাণ চার গুণ বাড়ায়। তবে নির্বাহী আদেশে অতিরিক্ত কেনাকাটার বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না।আজ মঙ্গলবার সকালে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বলেছে, তারা শুল্কবহির্ভূত পদক্ষেপ স্থগিত বা বাতিল করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে এবং তা বজায় রাখবে।
রোববার ট্রাম্প চীনের কাছে দাবি করেছিলেন, দেশটি যেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কেনার পরিমাণ চার গুণ বাড়ায়। তবে নির্বাহী আদেশে অতিরিক্ত কেনাকাটার বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্যিক অসমতা এবং এর ফলে তৈরি হওয়া জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগগুলো সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র এখনো গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। এই আলোচনার মাধ্যমে (চীন) বাণিজ্যিক অসমতা দূর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত উদ্বেগগুলো মোকাবিলা করছে।’
বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ বিরতির মেয়াদ সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত সময় মেয়াদ বাড়ায় বড়দিনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিকস, পোশাক ও খেলনাসহ নানা পণ্য কম শুল্কে আনার সুযোগ তৈরি হলো।
নতুন আদেশের মধ্য দিয়ে চীনা পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আর মার্কিন পণ্যের ওপর বেইজিং আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হলো। এতে আপাতত চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ আর মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক বজায় থাকবে।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নতুন আদেশের মধ্য দিয়ে চীনা পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আর মার্কিন পণ্যের ওপর বেইজিং আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হলো। এতে আপাতত চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ আর মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক বজায় থাকবে।গত সপ্তাহে ট্রাম্প সিএনবিসিকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি বাণিজ্যচুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং যদি চুক্তি হয়, তাহলে তিনি বছর শেষ হওয়ার আগে শি চিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করবেন।
এ ব্যাপারে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, ‘এটা ইতিবাচক খবর। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তেজনা কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে বোঝা যায়, দুই পক্ষই এমন একটা চুক্তিতে পৌঁছাতে চাইছে, যার ভিত্তিতে শি আর ট্রাম্প এই শরৎকালে বৈঠক করতে পারেন।
আরও পড়ুনচীন–যুক্তরাষ্ট্র, আবারও তিন মাসের বাণিজ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা২৯ জুলাই ২০২৫গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই পক্ষ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনার পর তাদের বাণিজ্যিক বিরোধে সাময়িক বিরতি টানার ঘোষণা দেয়। আরও আলোচনার সুযোগ পেতে তারা ৯০ দিনের জন্য বিরতিতে পৌঁছেছিল। জুলাই মাসের শেষ দিকে উভয় পক্ষ সুইডেনের স্টকহোমে আবারও দেখা করে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকদের বলা হয় তারা যেন ট্রাম্পকে সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বারবার বলেছেন, বসন্তকালে দুই পক্ষই একে অপরের পণ্যে তিন অঙ্কের যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা চালানো সম্ভব নয়। পাল্টাপাল্টি শুল্ককে কেন্দ্র করে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে অনেকটা বাণিজ্যিক অবরোধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।