গাজীপুর জেলার সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় চারশ’ গ্রামজুড়ে বিস্তৃত ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল রক্ষায় ভরাট কার্যক্রমের উপর আগামী তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। 

একইসাথে দখল ও দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) বিচারপতি মো.

আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থমূলক মামলার (নং ৯২৮৯/২০২৫) প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেলা’র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।

তিনি জানান, ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিলটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভরাট ও দূষণের শিকার। ‘বিল’ শ্রেণির জলাশয়কে এক ফসলি জমি দেখিয়ে নর্থসাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, বাংলা মার্ক লিমিটেড, আমার বসতি ও ইন্টেলিজেন্ট কার্ডসহ কয়েকটি আবাসন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সাইনবোর্ড টানিয়ে নির্বিচারে মাটি ভরাট করে আসছে।

এছাড়া একুতা ও মূলগাঁও অংশে ‘প্রাণ কোম্পানি লিমিটেড’ এবং জয়দেবপুর এলাকায় ‘এ এন্ড এ ট্রাউজার লি.’ নামের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড রয়েছে। বিলের মাঝের মাছের অভয়ারণ্য এলাকায় ‘এ্যাকুয়া বিলাস রিসোর্ট’ ভরাটের পাশাপাশি দূষণ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে কচুরিপানায় বিলের পানি প্রবাহ কমে গিয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

রুল জারির পাশাপাশি আদালত বিলে চলমান ভরাট ও দূষণ বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। রাজউকের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জের ইউএনওদের বিলের সীমানা চিহ্নিত করে সকল দখলদারের তালিকা প্রণয়ন এবং সময়সীমাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্ত পালনে নিয়মিত তদারকি, বিল ও সংলগ্ন কৃষিজমির অবস্থা নিরূপণ, অবৈধ ভরাট প্রতিরোধ এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তিন মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

মামলার বিবাদী হিসেবে ভূমি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, কৃষি এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ রাজউকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অভিযুক্ত আবাসন প্রকল্প ও রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আদালতে বেলা’র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না, সহায়তায় ছিলেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খাঁন জিয়াউর রহমান।

ঢাকা/রফিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ