বেলাই বিল ভরাটে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা
Published: 12th, August 2025 GMT
গাজীপুর জেলার সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় চারশ’ গ্রামজুড়ে বিস্তৃত ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল রক্ষায় ভরাট কার্যক্রমের উপর আগামী তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসাথে দখল ও দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিচারপতি মো.
তিনি জানান, ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিলটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভরাট ও দূষণের শিকার। ‘বিল’ শ্রেণির জলাশয়কে এক ফসলি জমি দেখিয়ে নর্থসাউথ গ্রুপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রুপ, বাংলা মার্ক লিমিটেড, আমার বসতি ও ইন্টেলিজেন্ট কার্ডসহ কয়েকটি আবাসন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সাইনবোর্ড টানিয়ে নির্বিচারে মাটি ভরাট করে আসছে।
এছাড়া একুতা ও মূলগাঁও অংশে ‘প্রাণ কোম্পানি লিমিটেড’ এবং জয়দেবপুর এলাকায় ‘এ এন্ড এ ট্রাউজার লি.’ নামের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড রয়েছে। বিলের মাঝের মাছের অভয়ারণ্য এলাকায় ‘এ্যাকুয়া বিলাস রিসোর্ট’ ভরাটের পাশাপাশি দূষণ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে কচুরিপানায় বিলের পানি প্রবাহ কমে গিয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
রুল জারির পাশাপাশি আদালত বিলে চলমান ভরাট ও দূষণ বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। রাজউকের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জের ইউএনওদের বিলের সীমানা চিহ্নিত করে সকল দখলদারের তালিকা প্রণয়ন এবং সময়সীমাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্ত পালনে নিয়মিত তদারকি, বিল ও সংলগ্ন কৃষিজমির অবস্থা নিরূপণ, অবৈধ ভরাট প্রতিরোধ এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তিন মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
মামলার বিবাদী হিসেবে ভূমি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, কৃষি এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ রাজউকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অভিযুক্ত আবাসন প্রকল্প ও রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আদালতে বেলা’র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না, সহায়তায় ছিলেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খাঁন জিয়াউর রহমান।
ঢাকা/রফিক/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ: জামায়াত
গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় দখলদার ইসরাইলের ন্যক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দেওয়াকে মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধও বলেছে দলটি।
ত্রাণবাহী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ব্রাজিল ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে জামায়াত ৫ পার্সেন্ট এগিয়ে: দুদু
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষ শহীদ হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে হাজার হাজার নারী-শিশুর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়বে।”
“আমরা জেনেছি, ইসরাইল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ১৩টি ত্রাণবাহী নৌযান এবং সেখানে থাকা বহু মানবাধিকার কর্মীকে আটক করেছে। অথচ এই নৌযানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ বহন করছিল। আমি ইসরাইলের এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মানবিক সহায়তা গন্তব্যে পৌঁছাতে কাউকে বিরত রাখা যায় না। দখলদার ইসরাইল নৌযান ও মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে। ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরাইলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নিরীহ মানুষের জীবনকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।”
তিনি বলেন, “মূলত দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দিয়ে তারা চরম অপরাধ সংঘটিত করেছে। এ হামলা মানবতার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্যতম অপরাধ।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে গাজায় পৌঁছতে পারে, সেজন্য ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে আটক মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা ও নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি