স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন এখনো দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাত–সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এক বছরে কাগজে–কলমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ হয়েছে, বাস্তবে সেবায় কোনো উন্নতি হয়নি। 

অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় কাজ হিসেবে মানুষের সামনে এসেছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়টি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করাই তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে। গত শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এতে আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগপন্থী বিভিন্ন চিকিৎসক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের সরিয়ে বা বদলি করে দক্ষ জনবল পদায়ন করা ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 

প্রথম ধাক্কাটি আসে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে। মন্ত্রণালয় অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রোবেদ আমিনকে মহাপরিচালকের পদে নিয়োগ দিয়েছিল। বিএনপিপন্থী ও জামায়াতপন্থী চিকিৎসকেরা এই নিয়োগের বিরোধিতা করেন। তাঁরা প্রায় এক মাস স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরোধ করে রাখেন। রোবেদ আমিন এক দিনের জন্যও মহাপরিচালকের চেয়ারে বসতে পারেননি। মন্ত্রণালয় পিছু হটতে বাধ্য হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। পরে শিশুরোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো.

আবু জাফরকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। 

স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ বছরের আওয়ামী শাসন স্বাস্থ্য প্রশাসনে ব্যাপক ও গভীর বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রেখেছিল। নিয়মনীতির বালাই ছিল না। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এক বছরে প্রায় সাড়ে আট হাজার চিকিৎসক বদলি করা হয়েছে। বঞ্চনা দূর করার চেষ্টা হয়েছে, চেষ্টা অব্যাহতও আছে। পদায়ন–পদোন্নতিতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। এটা বড় কাজ।’ 

অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা

বর্তমান সরকারের বড় কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া বা বাস্তবায়ন করার সুযোগ কম। অভিযোগ আছে, আমলাদের ও সরকারি চাকরিতে থাকা চিকিৎসকদের একটি অংশ সরকারকে সহযোগিতা করছে না। দাতাদের কেউ কেউ প্রতিশ্রুত সহায়তা দিতেও বিলম্ব ঘটাচ্ছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরকারি অথচ জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে রাজনৈতিক সরকার করতে চায় না, এমন কাজই অন্তর্বর্তী সরকারের করা উচিত। যেমন স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা। এখন সংসদ না থাকায় আইন পাস করার সুযোগ নেই। তবে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তা করার সুযোগ আছে।’

তবে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন এবং সেই কমিশনের প্রতিবেদন বড় ধরনের অগ্রগতি বলে মনে করেন সৈয়দ আব্দুল হামিদের মতো অনেকেই। গত তিন মাসে নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) আয়োজিত অন্তত পাঁচটি সেমিনারে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা কী করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, তা নিয়ে মতামত দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সেবা প্রদানকারীদের সুরক্ষাবিষয়ক তিনটি আইন অধ্যাদেশ আকারে জারি করা যেতে পারে। এগুলো দরকার অথচ করা হয়নি। 

সমস্যা আগের মতোই

জনস্বাস্থ্যবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন যে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। অনেকে আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। দুই দশক ধরে বরাদ্দ মোটামুটি ৫ শতাংশ বা তার কাছাকাছি ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার বাঁধা ছক থেকে বের হতে পারল না।

হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ও সমস্যা আগের মতোই আছে। ৭ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন দেশের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এখনো হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। বিশেষ রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিয়ে সংকট নিরসনে উদ্যোগ না নিলে ১০ বছর পরও হাজার হাজার রোগী হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকবেন।

সরকারি হাসপাতালে যন্ত্র নষ্ট বা অব্যবহৃত থাকার কারণে মানুষ সেবা নিতে এসে ফিরে যান, অনেকে বেশি খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চলে যান। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নষ্ট সব যন্ত্র এক বছরেও পুরোদমে চালু হয়নি। একই অবস্থা দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাজধানীর বাইরে এ রকম উদাহরণ আরও আছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ৯ আগস্ট ঘটা করে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নির্বাচন হলো। এই ড্যাবেরই একটি অংশ জুন–জুলাই মাসে অনিয়ম–দুর্নীতি করে শিশু হাসপাতালে ৬৫ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়েছিল। আগে স্বাস্থ্য খাতে আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) দৌরাত্ম্য ছিল, এখন অন্য দুটি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা (অন্যটি জামায়াত সমর্থিত ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম–এনডিএফ) চিকিৎসকদের দাপট দেখা যাচ্ছে। সেবা খাতে এই দলবাজি বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন কোনো উদ্যোগ নেই, অন্তর্বর্তী সরকারেরও তেমন সদিচ্ছা এই এক বছরে দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্য খাত কর্মসূচি বা হেলথ সেক্টর প্রোগ্রাম বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, দাতা সংস্থার অগ্রাধিকার অনুসরণ করে স্বাস্থ্য খাত কর্মসূচি পরিচালিত হতো। এখন জাতীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারই পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করবে। তবে ওই কর্মসূচি বাতিল হওয়ার কারণে অনেক কর্মচারী প্রায় এক বছর বেতন পাচ্ছেন না। 

দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে ওষুধশিল্প–সংশ্লিষ্ট কিছু সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশ ধরে কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেমন মন্ত্রণালয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি না রেখে ওষুধ–সংশ্লিষ্ট অন্তত চারটি কমিটি তৈরি করেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়াতে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে এটা হয়েছে। আবার হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের যাতায়াতের ব্যাপারেও বিধিনিষেধ আরোপ করছে মন্ত্রণালয়। 

এ রকম উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ওষুধশিল্পের মালিকেরা বলেছেন, সরকার ওষুধশিল্পকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে শিল্পমালিকেরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। 

মন্ত্রণালয় কী করেছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮১১ জন আহতের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যাচাই–বাছাই করে গেজেটে আহতের সংখ্যা ১২ হাজার ৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, নেপাল, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডের ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ হাজার ৩৬৩ জনকে হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই কার্ড নিয়ে তাঁরা সরকারি হাসপাতালে সারা জীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

এই এক বছরে দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ২৩টিতে নতুন অধ্যক্ষ ও ১৭টিতে নতুন উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে সাত হাজার চিকিৎসককে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা খুব শিগগির বাস্তবায়ন হবে। ৮৬টি বিষয়ে ৮০০ চিকিৎসককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে তিন হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ ও সাড়ে তিন হাজার নতুন নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

সংস্কার কী হচ্ছে, কী হবে

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সংস্কারের প্রস্তাব আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতা ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা ধারণা করেছেন, স্বাস্থ্য খাতে মূল সমস্যা ১০টি। ওই ১০টি সমস্যা সমাধান করতে পারলেই সংস্কার হবে: বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতা বিচ্ছিন্ন; এই ব্যবস্থা অতিকেন্দ্রীভূত; এই ব্যবস্থায় প্রথমিক স্বাস্থ্যসেবা উপক্ষিত, বিশেষায়িত সেবায় উৎসাহী; এখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রবল; এখানে কাজ করেন উৎসাহ ও মনোবলহীন জনবল; আছে মনন ও মানসিকতার সংকট; এই খাতে নৈতিকতার অবক্ষয় ও স্বাস্থ্যের দ্বন্দ্ব প্রবল; আছে পরনির্ভরশীলতা; এখানে নেতৃত্ব দুর্বল এবং চলছে বরাদ্দের ঘাটতির সঙ্গে পরিকল্পনাহীনভাবে।

মন্ত্রণালয় মেডিকেল শিক্ষায় সব ধরনের কোটা বাতিল করেছে। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজের মান যাচাই করা হচ্ছে। মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামী শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজগুলোতে আসন কমানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখন বদলি ও নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কাজের সুবিধা ও দুর্নীতি কমানোর জন্য স্বাস্থ্য খাতের সব ক্রয় বাধ্যতামূলকভাবে ই–জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) ব্যবস্থার মাধ্যমে হবে। 

রাষ্ট্রীয় একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। ইডিসিএল থেকে এক বছরে ৭০০ অতিরিক্ত জনবল ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শিরায় দেওয়া স্যালাইন উৎপাদন শুরু করেছে। যে ওষুধের দাম ৭০০ টাকার বেশি ছিল, সেগুলো ৪০০ টাকার কমে বিক্রি করছে ইডিসিএল। 

অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করাসহ ওষুধ উৎপাদন, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, বিপণন বিষয়ে আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ১৮ মাস করার চিন্তা আছে, এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে ৬ মাস গ্রামে থাকতে হবে। খুলনায় নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামে প্রবীণ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং রংপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘স্বাস্থ্যনগর’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে মন্ত্রণালয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভাবছি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে রাখা উচিত স্বাস্থ্যকে। আর স্বাস্থ্যের কেন্দ্রে থাকবে ওষুধ।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ প রথম আল ক চ ক ৎসকদ র র জন ত ক সরক র র চ ক ৎসক ব যবস থ এক বছর র জন য বর দ দ সমস য আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত

বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়! 

বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ। 

তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। 

কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’

বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।

যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালক

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।

বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’

একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।

বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।

সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।

ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।

পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহাল

টানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।

মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।

পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ