Prothomalo:
2025-11-17@07:47:45 GMT

শোধনাগার ছাড়াই বড় প্রকল্প

Published: 12th, August 2025 GMT

কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে পানি তুলে তা পরিশোধনের মাধ্যমে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। চারটি শোধনাগারে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি লিটার পানি শোধন করতে পারে সংস্থাটি। তবে শোধনাগার পর্যাপ্ত নয়। পানির চাহিদাও মিটছে না। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প নিলেও সেখানে শোধনাগার নির্মাণ হবে না। শুধু পাইপলাইন আর গভীর নলকূপ বসানো হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শোধনাগার ছাড়া পাইপলাইন বসিয়ে পানির সংকট কমানো যাবে না। পাইপলাইন কিংবা ডিজিটাল মিটারের পাশাপাশি শোধনাগার কীভাবে নির্মাণ করা যায়, সেটিও পরিকল্পনায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে দাতা সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে।

ওয়াসার বিভিন্ন নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে দিনে পানির চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদনের সবটুকু গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় না। ৩০ ভাগ পানি সিস্টেম লসের নামে নষ্ট হয়। তাই দিনে ২৫ থেকে ৩০ কোটি লিটারের ঘাটতি থেকে যায়। আবার দিন দিন চাহিদাও বাড়ছে।

জানা গেছে, ওয়াসা প্রথম পানি শোধনাগার নির্মাণ করে ১৯৮৬ সালে। হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহের জন্য মোহরা পানি শোধনাগার চালু হয়, যার দৈনিক শোধনক্ষমতা ৯ কোটি লিটার। এরপর ২০১৬ সালে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার–১ চালু হয়, যা দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। ২০১৮ সালে চালু হয় ৯ কোটি লিটার শোধনক্ষমতার মদুনাঘাট পানি শোধনাগার। সর্বশেষ ২০২১ সালে চালু হয় কর্ণফুলী পানি শোধনাগার–২, এখান থেকেও দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব। চারটি শোধনাগার মিলিয়ে ওয়াসা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। এর বাইরে চলতি বছর চার উপজেলার জন্য ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার চালু হয়েছে, তবে সেখান থেকে নগরে পানি সরবরাহ করা হয় না।

ওয়াসার বিভিন্ন নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে দিনে পানির চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদনের সবটুকু গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় না। ৩০ ভাগ পানি সিস্টেম লসের নামে নষ্ট হয়। তাই দিনে ২৫ থেকে ৩০ কোটি লিটারের ঘাটতি থেকে যায়। আবার দিন দিন চাহিদাও বাড়ছে। সংস্থাটির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩২ সালে পানির চাহিদা পৌঁছাবে দিনে ৭০ থেকে ৮০ কোটি লিটারে, ২০৪২ সালে ১২২ কোটি লিটার ও ২০৫২ সালে চাহিদা দাঁড়াবে ১৩৭ কোটি লিটারে। মূলত এই বিপুল চাহিদা মেটানোর জন্য দরকার পানি শোধনাগার।

১৯৬৩ সালে তিনটি গভীর নলকূপ নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার যাত্রা শুরু হয়। গত ৬২ বছরে সংস্থাটির পরিধি ও সক্ষমতা দুটোই বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রাহক সংযোগ রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার।

এখন আবার প্রকল্প

গত দেড় দশকে পানি সরবরাহের জন্য ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি ছোট-বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ওয়াসা। এখন আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। গত ২০ এপ্রিল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালের মার্চে। এ প্রকল্পে ৫৫টি গভীর নলকূপ ও ৩৭০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হবে। কেনা হবে পানির ১ লাখ ডিজিটাল মিটার। কিন্তু শোধনাগারের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, পানি শোধনাগার নির্মাণের বিষয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন একটি শোধনাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। দিনে ২০ কোটি লিটার পরিশোধন সক্ষমতার এই শোধনাগার হবে মোহরা এলাকায়। শিগগিরই দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করবে। ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।

তবে ওয়াসার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পানি সরবরাহ নিয়ে ওয়াসা এখনো মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে পারেনি। কয়টি শোধনাগার প্রয়োজন, কোথায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে, তা পরিষ্কার নয়। এ কারণে দাতা সংস্থা শোধনাগার নির্মাণে আগ্রহী হয়নি।

সংকট বাড়ছে

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা ও সূচকসমূহ’-এর ৬ নম্বর অভীষ্ট হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াসার এখনো এই জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। সংস্থাটি কোনো গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি দিতে পারে না। এখনো ‘রেশনিং’ করে বা এক এলাকায় বন্ধ রেখে আরেক এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। শতাধিক এলাকায় ওয়াসার পাইপলাইনও বসেনি। ফলে সংকট বাড়ছে।

উত্তর কাট্টলীর ঈশান মহাজন সড়কের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সংযোগ নিলেও তিনি পানি পান না। কেনা পানিতে রান্না সারেন। এতে প্রতি মাসেই বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ পানি দেওয়ার দায়িত্ব ওয়াসার। একই অবস্থা দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিমের। তিনিও ওয়াসার পানি পান না। সেলিম বলেন, ওয়াসার কোনো লাইন তাঁর এলাকায় এখনো প্রবেশ করেনি। তাই তিনিও কেনা পানিতে দিন পার করছেন।

মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ কুমার পাল। তিনি বলেন, নতুন পানি শোধনাগার নির্মাণ অথবা বিদ্যমান শোধনাগারের সক্ষমতা বাড়িয়ে চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন প্রকল্পে পানি শোধনাগার নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র জন য এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো