শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয় ভালো ক্রীড়াবিদ হিসেবেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সেরা অবস্থানে নিয়ে যেতে চান জাতীয় দলের স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান ক্যালি। 

ভারত সিরিজ পিছিয়ে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের নিয়ে লম্বা ফিটনেস ট্রেনিং করাচ্ছেন ক্যালি। বিরতি দিয়ে যখনই ক্রিকেটাররা মাঠে ফিরছেন দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা। অনেকের দাবি, এমন ফিটনেস সেশন আগে কখনো হয়নি তাদের। ক্রিকেটাররা অ্যাথলেটিক টার্ফে ১৬০০ মিটার দৌড়েছেন একাধিকবার।

আরো পড়ুন:

‘হাজার কোটি টাকা থাকলে বিপিএলে আসা উচিত’

বিসিবির বোর্ড সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হলো

ঢাকা স্টেডিয়ামের টার্ফে চলে এই ট্রেনিং। যেখানে পেসার নাহিদ রানা ১৬০০ মিটার শেষ করেছেন ৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে। তরুণ নাহিদ যেখানে চমক দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিম মুগ্ধ করেছেন। ৩৮ পেরোনো মুশফিকুর ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডে টাচ করেছেন ফিনিশিং লাইন। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে শুরুর দিকে ফিটনেস টেস্ট বলতেই ছিল বিপ টেস্ট। মারিও ভিল্লাভারায়েনে যে টেস্টে ক্রিকেটারদের তৈরি করতেন। পরবর্তীতে যুক্ত হয় ইয়ো ইয়ো টেস্ট। নাথান ক‌্যালি বাংলাদেশে যুক্ত করেছেন ‘টাইম ট্রায়াল’ পরীক্ষা। তিনটি পর্যায়ে দেওয়া হয় ফল। এলিট, কম্পিটেন্ট ও লিমিটেড। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই পেয়েছেন কম্পিটেন্ট। 

নিজের এই টাইম ট্রায়াল পরীক্ষা নিয়ে নাথান কেলি মঙ্গলবার গণমাধ‌্যমে বলেছেন, ‘‘এটার ফল নিয়ে কম বিতর্ক হয়। যখন আপনি ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্ট করান, কখনো কখনো খেলোয়াড়েরা খুব অল্পের জন্য পিছিয়ে যায়, কিন্তু তখন তাদের থামিয়ে দিয়ে বলাটা কঠিন হয়ে যায় যে তোমার টেস্ট শেষ। টাইম ট্রায়ালে ভালো জিনিস হচ্ছে, ঘড়ি মিথ্যা কথা বলে না। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যারা ইয়ো ইয়ো বা বিপ টেস্টে পাস করে, তারা টাইম ট্রায়ালেও জেতে। যারা ওখানে (বিপ বা ইয়ো ইয়ো) ভালো না, তারা এখানেও (টাইম ট্রায়াল) না।’’ 

ফিটনেস নিয়ে কাজ করার প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তাড়নার কমতি দেখেন না ক‌্যালি। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সূচির বাস্তবতার পার্থক্যটি আবারও তুলে ধরলেন তিনি, ‘‘ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে। আজকেও সেটির প্রমাণ দেখা গেছে। যে ধরনের কন্ডিশনিং আজকে আমরা করেছি, কিছু চ্যালেঞ্জিং ড্রিল ছিল। আপনারা যদি মনে করেন এসব চ্যালেঞ্জিং নয়, তাহলে স্বাগত জানাচ্ছি একদিন আমাদের সঙ্গে এসব করতে। আপনারা তখন বুঝতে পারবেন। তাদের মানসিকতা ও প্রচেষ্টা অসাধারণ। তারা নিজেদের তাড়িত করে প্রবলভাবে।”

“আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো শারীরিক কাজ বড় পরিসরে করার সুযোগ বের করা। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক বা ঘরোয়া ক্রিকেট, ১৫ সপ্তাহের মতো প্রাক-মৌসুম থাকে। আমাদের কেবল ছোট ছোট উইন্ডো থাকে। কাজেই যখনই সুযোগ মেলে, ওই শারীরিক কাজগুলো করার নিয়মিত চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।” - যোগ করেন তিনি।

এজন‌্য যখনই সময় পান ক্রিকেটারদের শুধু ক্রিকেট ভিত্তিক ফিটনেস নয়, ভালো ক্রীড়াবিদদের মতো ফিটনেস পেতে সহায়তা করেন তিনি, ‘‘২০২৪ সালের এপ্রিলে যোগদানের পর থেকে আমরা গত ১৮ মাস ধরে এই টেস্টিং করে আসছি। তাই, খেলোয়াড়দের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের কাছে টাইম ট্রায়াল, স্ট্রেংথ টেস্টিং এবং স্প্রিন্ট টেস্টিং জুড়ে কিছু ধারাবাহিক তথ্য রয়েছে। এবং দলটি যে উন্নতি করছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়দের দল, যারা এই মুহূর্তে আমাদের জন্য প্রচুর টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছে। তারা কেবল তাদের ক্রিকেটের উন্নতির দিকেই নয়, বরং আরও ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়ার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন র জন য আম দ র ফ টন স

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ