জামিনে মুক্ত ৩ পুলিশ সদস্য, পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিহতের মায়ের
Published: 12th, August 2025 GMT
সিলেটে পুলিশ হেফাজতে নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার আসামিদের একে একে জামিন হওয়ায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছে পরিবার। রায়হানের মা সালমা বেগমের দাবি, এতে করে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মামলাটি থেকে সর্বশেষ গত রোববার প্রধান আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আকবরের জামিনের পর একই মামলায় আরও দুই পুলিশ সদস্য জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তাঁরা হলেন কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস (৩৮) ও হারুন অর রশিদ (৩২)। ২০ ফেব্রুয়ারি টিটু এবং ১৭ এপ্রিল হারুন অর রশিদ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
আরও পড়ুনসিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরের জামিন১১ আগস্ট ২০২৫এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুন জামিন পেয়ে পলাতক আছেন এসআই হাসান উদ্দিন (৩২)। এ ছাড়া মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই দেশের বাইরে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ আল নোমান নামের আরেক আসামি। তিনি সম্পর্কে আকবরের আত্মীয়।
সালমা বেগম গতকাল সোমবার বিকলে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার অভিযুক্তরা একে একে জামিনে বের হয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার আকবর হোসেন জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। বিষয়টি তিনি গতকাল আদালতে গিয়ে জানতে পেরেছেন। এর আগে জামিন পাওয়া দুজন মামলার তারিখে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। আসামিরা উল্টো বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আবুল ফজল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ৬৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বর্তমানে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত আগামী ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করেছেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন।
আরও পড়ুনএসআই আকবরের হুমকি—বুকে গুলি করব, পিঠ দিয়ে বের হবে২৪ অক্টোবর ২০২০এই আইনজীবী বলেন, মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩)।
এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২–এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, উচ্চ আদালত থেকে আকবর হোসেনের জামিন মঞ্জুরের পর নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে এ–সংক্রান্ত তথ্যের নথি কারাগারে পাঠানো হলে গত রোববার সন্ধ্যায় তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল একই কারাগার থেকে হারুনুর রশীদ জামিনে বের হয়েছেন। গত ২৫ মার্চ থেকে তাঁরা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।
আরও পড়ুন‘আমার রায়হানই যেন পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর শেষ নাম হয়’২৩ অক্টোবর ২০২০অভিযোগ আছে, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। পরে ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর অভিযোগের সত্যতা পায় সিলেট মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ওই বছরেই ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।
আরও পড়ুন‘টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আসো, আমাকে বাঁচাও’১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনপুলিশের দাবি করা গণপিটুনির চিত্র মেলেনি সিসি ক্যামেরায় ১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনইনচার্জসহ বরখাস্ত ৪, প্রত্যাহার ৩ পুলিশ১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনপুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু: আসামি উল্লেখ না করে মামলা১২ অক্টোবর ২০২০.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আকবর হ স ন আকবর র
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে আরো দুই মামলায় আসামি ৫৫২
আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দুটি মামলায় ১৫২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় জেলায় মোট চারটি মামলা দায়ের হলো।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিক ও কাশিয়ানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এ দুটি মামলা দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, গত ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ ২৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, কাশিয়ানী থানার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কাশিয়ানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ মোট ২৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দুটি মামলায় ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ২৮৫ জনসহ মোট ৩৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ দুই মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহরের গণপূর্ত অফিসের গাড়িতে ও সদর উপজেলার উলপুরে গ্রামীণ ব্যাংক অফিসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া জেলার কয়েকটি স্থানে সড়কে গাছ ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।
ঢাকা/বাদল/এস