গাজায় গণহত্যা নিয়ে ভারত সরকারের নীরবতা ‘লজ্জাজনক’: প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
Published: 12th, August 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় নীরব থাকা ‘লজ্জাজনক’। ভারত সরকারের এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা করলেন কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। একই সঙ্গে তিনি আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক হত্যারও সমালোচনা করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে প্রিয়াঙ্কা পরপর দুটি পোস্ট করেন। আল-জাজিরার সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা ও অর্থের কাছে বিশ্বের বেশির ভাগ গণমাধ্যম যখন ক্রীতদাস হয়ে রয়েছে, তখন এই সাহসী সাংবাদিকেরা আমাদের দেখালেন সৎ সাংবাদিকতা কেমন হওয়া উচিত।’
প্রিয়াঙ্কা আল-জাজিরার সাংবাদিকদের হত্যা নিয়ে ‘এক্স’-এ বার্তা দেন আজ সকাল সাড়ে ৯টায়। ঠিক এক ঘণ্টা পর গাজা গণহত্যার নীরবতায় সমালোচনা করেন ভারত সরকারের।
আজই বেলা পৌনে একটায় প্রিয়াঙ্কার সমালোচনা করে ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার ‘এক্স’ মারফত দাবি করেন, তাঁর প্রতারণা ও শঠতা লজ্জাজনক। ইসরায়েল ২৫ হাজার হামাস সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। বাকিদের হত্যা করছে হামাসই। যাঁরা পালাতে চাইছেন, তাঁদের তারা হত্যা করছে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার এও দাবি করেন, গাজায় তাঁরা ২০ লাখ টন খাদ্য পাঠিয়েছেন। হামাস সন্ত্রাসীরা সেসব খাদ্য জব্দ করে নিচ্ছেন। অনাহার তাতেই বাড়ছে। রেউভেন বলেন, গত ৫০ বছরে গাজার জনসংখ্যা ৪৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে কোনো গণহত্যা হচ্ছে না। হামাসের কথা বিশ্বাস করবেন না।
গাজা গণহত্যা নিয়ে প্রিয়াঙ্কা এর আগেও সরব হয়েছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ‘ফিলিস্তিন’ লেখা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করেছিলেন তিনি।
আজ প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ইসরায়েলের গণহত্যা অব্যাহত। ৬০ হাজার মানুষকে তারা ইতিমধ্যেই হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৪৩০ জন শিশু। অভুক্ত রেখে তারা শিশুসহ শয়ে শয়ে মানুষকে মেরে ফেলছে। লাখ লাখ মানুষকে অভুক্ত রাখার হুমকি দিচ্ছে। এই অপরাধে চুপ করে থাকা, এর বিরুদ্ধে কিছু না করা আরেক অপরাধ।
আরও পড়ুনপ্রিয়াঙ্কা নজর কাড়ছেন ভারতের পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে১৮ ডিসেম্বর ২০২৪কংগ্রেসনেত্রী লিখেছেন, ফিলিস্তিনবাসীদের ওপর আক্রমণ হেনে ইসরায়েল যখন সব তছনছ করে দিচ্ছে, তখন ভারতের নীরবতা লজ্জাজনক।
শুধু প্রিয়াঙ্কা নন, সাংবাদিক হত্যার সমালোচনা নানা দেশ থেকে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। তারা ফিলিস্তিনকে পৃথক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চলেছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, আগামী মাসে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় সেই স্বীকৃতি তাঁরা দেবেন। এর আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স।
আরও পড়ুনলোকসভায় প্রিয়াঙ্কার শপথের পরই আদানি–কাণ্ডে মুলতবি সংসদের অধিবেশন২৮ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র গণহত য হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
‘গণহত্যার বিচার না হলে আবারও ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে’
শহীদদের হত্যার বিচার না হলে পরবর্তী সময়ে নতুন সরকারকেও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে। এ সরকার আসলে বুঝতে পারেনি—পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কত ভারী। ‘জুলাই জাগরণী’ সমাবেশে কথাগুলো বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সারা দেশে জুলাই গণহত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবি সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সমাপনী সমাবেশ ‘জুলাই জাগরণী’ আয়োজন করা হয়।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত হয় এ সমাবেশ। এতে উপস্থিত হন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা–কর্মী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নানা ধরনের বিপদে আছে। আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে এক বছর পরও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি। শহীদ ও আহতদের পরিবার অবহেলিত হচ্ছে। অথচ সরকারের দায়িত্ব ছিল পরিবারগুলোর যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা।
যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া। —শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবাআনু মুহাম্মদ বলেন, যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, সেখানে ত্রুটি থাকছে। সরাসরি যাঁরা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এ সরকার আসার পর দেশ থেকে পালিয়েছেন। পাইকারি মামলা করায় মামলা আরও দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষায় আন্দোলন হয়েছিল, তার বাস্তবায়িত হয়নি।
সমাবেশে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া।’
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। অথচ সরকারের সেদিকে (ফ্যাসিবাদের অবসান) যাত্রা দেখছি না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী দীপা মজুমদার বলেন, আন্দোলনে নিহত শ্রমিক ও নারীদের খবর রাখা হয় না। বিচারপ্রক্রিয়ার ভেতরে রয়েছে ফাঁক। তিনি আরও বলেন, যতবার ফ্যাসিবাদ আসবে, ততবারই এ দেশের মানুষ জেগে উঠবে। প্রয়োজনে প্রাণ দেবে।
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু এখন নারীবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, নারী নিপীড়ন চলছে। নারীদের যথাযথ সুযোগ ও মর্যাদা না দিয়ে বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদের বিলোপ সম্ভব নয়।’
আলোচনা শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় পর্বে। শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানসহ একক সংগীত পরিবেশন করেন কয়েকজন শিল্পী।
শহীদদের বাবা–মায়ের হাতে স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান।
আয়োজনের শুরুতেই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান...’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন।