জর্জিয়ায় আছড়ে পড়া উল্কাপিণ্ডের বয়স পৃথিবীর চেয়েও বেশি
Published: 12th, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের একটি বাড়িতে আছড়ে পড়া উল্কাপিণ্ডটির বয়স পৃথিবীর চেয়ে প্রায় দুই কোটি বছর বেশি বলে জানিয়েছেন জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্কট হ্যারিস। ২৩ গ্রাম ওজনের উল্কাখণ্ডটি পরীক্ষা করে তিনি জানান, মহাকাশ থেকে আসা উল্কাপিণ্ডটি প্রায় ৪৫৬ কোটি বছরের পুরোনা, যা পৃথিবীর বয়সের তুলনায় প্রায় ২ কোটি বছর বেশি।
জর্জিয়ায় আবিষ্কৃত উল্কাপিণ্ডটির বিষয়ে স্কট হ্যারিস বলেন, ম্যাকডোনাফ শহরে আছড়ে পড়া এই উল্কাপিণ্ডের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ যাত্রার ইতিহাস। সেটি পুরোপুরি বুঝতে হলে জানতে হবে যে এর শিলাটি আসলে কোন ধরনের এবং এটি সৌরজগতের কোন গ্রুপের গ্রহাণু থেকে এসেছে। আগে এমন ঘটনা কয়েক দশকে একবার ঘটত, কিন্তু এখন ২০ বছরের মধ্যেই একাধিকবার ঘটেছে।
আরও পড়ুননিলামে মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড০৬ জুলাই ২০২৫গত জুনে দিনের আলোয় দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উজ্জ্বল এক অগ্নিগোলক দেখা যায়। সে সময় জর্জিয়ার এক বাসিন্দা জানান, একটি পাথর তাঁর বাড়ির ছাদ ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সা নিশ্চিত করে যে জুনের শেষ দিকে ঘটে যাওয়া ‘বুটিডস’ উল্কাবৃষ্টির সঙ্গে এই উল্কাপিণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উল ক প ণ ড
এছাড়াও পড়ুন:
দূর সমুদ্রে ভাসে ফেনায়িত বোধ
বৃষ্টিযাপনের জন্য একটি নির্জন বাড়ি
চলো আজ বৃষ্টিযাপনের জন্য একটা গল্প তৈরি করি
ধনুকের ছিলার মতো টান টান উত্তেজনাময়...
প্রথমেই তৈরি করি একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি
ঘন বনের ভেতর বেছে নিই
কোনো একটি নির্জন স্থান
বনের পাশে থাকা চাই একটি মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ও
ইকোট্যুরিজমের কথা মাথায় রাখতেই হবে
বাড়ি তৈরিতে অবশ্যই চাই বাঁশ, কাঠ, ছন ইত্যাদি উপকরণ
দোতলা এই বাড়িটি বনের ভেতর সাহসী বনরক্ষীর মতো
দাঁড়িয়ে থাকবে কোনো এক অন্তরঙ্গ যুগলের জন্য
আমরাই হব এই বাড়ির কাঙ্ক্ষিত প্রথম যুগল
চারদিক অন্ধকার করে
হঠাৎ ঝুমবৃষ্টি নেমে এলে
বাড়ির টেরেসে দাঁড়িয়ে
আমরা ভিজতে ভিজতে
খুনসুটিতে
পরস্পরের গায়ে হেলে পড়ব
তৈরি হবে ঘনসম্পর্কের সংবেদনময় দৃশ্য
কে জানে কোনো ধূর্ত পাপারাজ্জি
বাড়ির আড়ালে লুকিয়ে আছে কি না!
তুমি কি চাও এই অন্তরঙ্গতা ছড়িয়ে পড়ুক অন্তর্জালে?
আমি কিন্তু এই প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর থাকতে চাই!
কারণ, তোমাকে ছাড়া আমার পৃথিবী একদমই অচল!
কখনো কোনো অজুহাতে তুমি যেন আর
নতুন কোনো বাড়ি রচনা করতে না পারো
আমি তো তা-ই চাই!
হয়তো ওই পাপারাজ্জিই আমাদের সম্পর্কের
একমাত্র রাজসাক্ষী হয়ে থাকবে!
চলো, এবার ভেজা পোশাক পালটে নিই
তারপর ক্যাজুয়াল ড্রেস পরে ডাইনিংয়ের নরম আলোয়
পরস্পর মুখোমুখি বসি
দৃষ্টিনন্দন বেতের চেয়ার
সেগুন কাঠের তৈরি ডাইনিং টেবিল
টেবিলের ওপর নকশাতোলা ক্লথ
খাবার টেবিলে থরে থরে সাজানো
আমাদের পছন্দের খাবার
ঝাল ঝাল হাঁসের ভুনা মাংস, গরম গরম চালের রুটি
পাঁচমেশালি মাখা–মাখা সবজি
টমেটো, পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা আর
শসাসহযোগে তৈরি পুষ্টিকর সালাদ
আরও আছে আতপচালের সুগন্ধি পায়েস
এ ছাড়া লিচু, আমসহ আরও কিছু মৌসুমি ফল তো আছেই
চলো এবার ভোজনের গল্পে মেতে উঠি...
কিন্তু এর আগে কিচেন কাম খাবারঘরে
আর কী কী থাকা দরকার
চলো, এরও একটি তালিকা তৈরি করে নিই
পানির পাত্র হিসেবে চাই নকশাতোলা
একটি মাটির কলসি
ঘরের ভেতরে স্থাপন করা হোক
একটি দুমুখো মাটির চুলা
রান্না হবে মাটির হাঁড়িতে
কাঠের খড়ি দিয়ে রান্না
খাবারের মেনুতে কী কী থাকবে
তা তো আগেই বলা হলো
খাবার পরিবেশিত হবে নকশাদার
মাটির সানকিতে
মগটিও চাই মাটির তৈরি
কারণ, একদিন তো এই মাটিতেই মিশে যেতে হবে!
মাটির সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে
আগে থেকেই একটি হৃৎসম্পর্ক গড়ে তোলা ভালো না?
চলো, বাড়িটি তৈরির জন্য এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি
কারণ, সময় হয়তো তেমন সময় দেবে না আমাদের!
কবিতা যখন ভুল বানানের ‘প্রীয়তমা’পাশে এসে বসো, দেখো কীভাবে শিকার করি
রাশি রাশি শব্দ, কীভাবে নতুন শব্দে গেঁথে তুলি
কবিতার জাল, আগে কিছু চিত্রকল্প তৈরি করো
অতঃপর দু–চারটি অনুপ্রাস, দাও কিছু রূপকের জোগানও
ভুলে যেয়ো না উপমা-যমকের কথা, অক্ষরবৃত্তের চিরচেনা চালটি
উঠুক দুলে এই ছন্দহীনতার কালে
বিড়ালের গলে কে পরাবে শুনি কাঙ্ক্ষিত ঘণ্টিটি?
ভুল বানানের পদ্যটি বসে আছে বারান্দায় মুখ ভার করে!
দরজা গলিয়ে ভেতরে প্রবেশ তার মানা!
যত্রতত্র ভুল বানানের পক্ষে কেন তর্ক তোলো?
তর্কে তর্কে ডুবে যায় কবিতার সদাগরি নাও
একবার এই বানানে লেখো তো ‘প্রীয়তমা’!
চোখ খুলেই দেখবে অন্য কারও হাতে হাত রেখে সে
দিগন্তে উধাও! কারণ, প্রেমে ঢুকে গেছে বিষাক্ত গরল!
কবিতা কি শুধু উশকোখুশকো চুলের লাবণ্যময়ী নারী?
বসন্তবাতাসে হু হু করা মন?
জানি, কবিতারা পরিপাটি চুলে বারান্দায় বসে রোজ
মধুক্ষরা ঠোঁট তার কথার লাবণ্য ছড়ায় গভীরতর প্রেমে
পাশে এসে বসো, মনে মনে পঙ্ক্তি সাজাও
পঙ্ক্তিভোজের কিন্তু এখনই সময়
সময় গড়ালে তাকে আর কখনো পাবে না খুঁজে!
আমি এক অতীতের সাম্পানলন্ঠন জ্বালো
তোমাদের আজ পেছনে ফেরাতে চাই
হ্যাজাক বাতিটার কথা মনে পড়ে?
এর উষ্ণ আলোয় পতঙ্গকুলের
কী সবাক উপস্থিতি!
ম্যান্টলটা পুড়ে গেছে প্রায়
আরেকটা লাগাও শিগগির
নিশানে নিশানে সজ্জিত বৈঠকঘর
নওশা এল বলে!
সকাল থেকে বাজছে গ্রামোফোন
ছায়ানিবিড় পুকুরপাড়ে
শীতলপাটিতে হল্লা জমেছে যে বেশ!
মীনা কুমারীর ‘বাচপান কি মুহাব্বাত’
লতাজি এলেন, এলেন মোহাম্মদ রফিও
সুরের নৌকায় অদ্ভুত আনন্দঢেউ...
ফরসি হুঁকা থেকে উড়ছে হালকা ধোঁয়া
সুগন্ধি ভাসে বাতাসে
কলাগাছ পোঁতা গেইটটা তো আছে ঠিক?
লন্ঠন জ্বালো
তোমাদের আজ অতীতে ফেরাতে চাই
দেখো, ভোরবিহানে রেহেলে উঠেছে ঢেউ
সুললিত সুর ভাসে বাড়ির মক্তবে
হয়তো থেমে গেছে মরুবেদুইন
উটের কাফেলা
দরজায় কড়া নাড়ে মায়াময় ভোর!
লন্ঠন জ্বালো
চোখ রাখো তবে টাইমমেশিনের স্ক্রিনে
দেখো, অতীত জেগেছে
ডানা মেলে রোদ্দুরে
চিনির বাসনে বাহারি নকশি পিঠা
চিলমচিটা আনো
নওশা বসেছে দলবলসহ
নাশতায় হাসে নকশি পিঠা আর রসপুলি যত
শস্যভরা ডোল-মটকা
পুকুরের জলে রুই-কাতলার লাফ
ঝাঁকিজাল আনো, আজ তবে মৎস্য শিকার
সিন্দুকে আছে কাঁড়ি কাঁড়ি কড়ি
দৌড়ে ধরো লেজতোলা রাতাটা
কোরমা–পোলাও দুপুরের ভোজ
সঙ্গে মুরগি–দুরুস
এক্ষুনি আনো তবক দেওয়া পান
ওরে ও নাগর, দমে দমে চিবাও
আমি এক অতীতের সাম্পান!
বুড়ি নদী ও মনসুর হাল্লাজও আমার বুড়ি নদী,
বুকের বাঁপাশে খচখচ করা নস্টালজিয়া
ফেলে আসা রঙিন শৈশব
কৈশোরের বর্ণময় রূপকথা
মনে পড়ে আমাকে?
হাফপ্যান্ট পরা সেই লিকলিকে ছেলেটি
শর্ষে খেতের দিগন্তছোঁয়া হলুদ পেরিয়ে
ঠিক লাল ফড়িংয়ের মতো লাফাতে লাফাতে
পার হতো তোমার অগভীর জল
আহা! দড়িটানা গুদারা নাও
ঘাটের মালিক
মাধবপুরের ননী মাঝি আর প্রাণবন্ধু
মামা-ভাগনের কী উষ্ণ সম্পর্কের দিন
কেমন আছ তোমরা?
গাঁটের কড়িতে ছিল যাত্রী পারাপার
আমরাও যেতাম
সিনা টান টান করে
টাকাকড়ির কোনো তোয়াক্কা ছিল না
সাকিন কোরবানপুর ভূঁইয়াবাড়ি
ধানশস্যের ‘তোলা’ যেত ফি বছর
তোমাদের হা-মুখ গোলায়
আহা! কী রঙিন শৈশব আমার...
বুড়ি নদী, লক্ষ্মী বোন আমার,
তোমার কাকচক্ষু জল
যেন শীতের সম্বল
হালের বলদেরা সাঁতরে সাঁতরে হতো পার
কাঁধে নিয়ে লাঙল-জোয়াল
চাষা ভাইও খাসা গলায় ধরত গান!
তুমি ভাই ভাটির রাখাল, আমি যেন দূরবর্তী উজান!
ও আমার বুড়ি নদী
তুমি গ্রিক পুরাণের লিথি নও
কেন হবে বিস্মরণের লিথি?
তুমি তো আমার জনম জনমের স্মৃতিকাতরতা
হৃৎসম্পর্কের রোদবৃষ্টিঝড়
তোমাকে পাড়ি দিই স্বপ্নে ও সম্ভাবনায়
তুমি যে আমার হৃদয়ের ঈশ্বর!
ও আমার বুড়ি নদী,
আষাঢ়ের তীর ভাঙা প্লাবনের ঘোলা জল
তীব্রস্রোতা...
গোমতী তোমার মা
দূর তিতাসের সহোদর তুমি
মেঘনা তোমার পিসি কি মাসি
সঙ্গমে সঙ্গমে জীবনের ইতিকথা
দূর সমুদ্রে ভাসে ফেনায়িত বোধ
আমার সুফিবাদী মন
‘আনাল হক, আনাল হক’
পরোয়া করি না মৃত্যু পরোয়ানা
আমি এক পূর্ণপ্রাণ সাধুসন্ত
সদা প্রস্তুত আমার মৃত্যুসাজ
আমার নাম মনসুর হাল্লাজ!
সন্ধ্যা ও শঙ্খলাগা সাপযৌবনের এক সন্ধ্যাবেলায়
দেখেছিলাম
এক জোড়া সাপ
শঙ্খলাগা
বাড়ির চাতালে
ঘাসের মধ্যে গড়াগড়ি
বিষের ছোবল?
নেই!
বাড়িজুড়ে হইহল্লা
নেই পরোয়া কোনো
সন্ধ্যা থেকে রাত গড়াল
সিনীবালী রাত
বৃষ্টিভেজা
গাছগাছালি
কাছে-দূরের সকল সবুজ
গজারিবন
আজ
রঙ্গপ্রিয় মনটা আমার
করে যে গুঞ্জন
কোথায় আছে
ডাকবাংলো?
দূরের বনে!
রিজারভেশন?
হুম!
রাত নেমেছে
ফরেস্টজুড়ে
শরীর বেয়াড়া!
ও সাপ যুগল
ভোরের আগে শেষ হবে তো
তোদের শঙ্খলীলা?
আমিও যে লীলাপ্রিয়
যদি ডাকে
গোধূলিবন
পাঠ করেছি
রতিশাস্ত্র
কলা চৌষট্টি
শিল্প থেকে চুম্বনকলা
সব পড়েছি
একাকিত্বকালে
বাৎসায়ন তো
আমার স্বজন
কাম-সূত্রে
মন বেঁধেছি
রঙিন ঘুড়ি এক
উড়ছে উড়ুক
ঘুরছে ঘুরুক
ডুবুক লিথির জলে
মন পুড়ছে
পুড়ুক তবে
শরীরবিদ্যা পাঠ
এই চিন্তা, এই ভাবনা
আলোছায়া রোদ্দুরে
ফ্রয়েড আসুক
ভালোবাসুক
ভালোবাসুক
জীবন এবং মৃত্যুরে
শঙ্খলাগা সাপ
উথলে ওঠে মনযমুনা
দেহের অভিশাপ!