তারা তোমার অশ্রুর যোগ্য ছিল না, আনাস!
Published: 12th, August 2025 GMT
‘যাবতীয় যন্ত্রণার মধ্যে ছিল আমার বসবাস এবং বারবার সম্মুখীন হয়েছি বেদনা ও শোকের। তা সত্ত্বেও, সত্যকে বিকৃত বা মিথ্যাচার ছাড়াই তুলে ধরতে আমি কখনো দ্বিধা করিনি। যারা আমাদের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ড দেখে নীরব ছিল এবং যারা আমাদের নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে, যাদের হৃদয় আমাদের নারী ও শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখেও বিচলিত হয়নি এবং যারা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের জনগণের ওপর চলা এই গণহত্যা থামাতে কিছুই করেনি, আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী থাকুন।’
আনাস আল-শরিফ এ কথাগুলো লিখেছিল তার অসিয়তনামা হিসেবে, শহীদ হওয়ার চার মাস আগে। সে নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি পোস্ট করা হয়। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে মিডিয়ার একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় আনাস, সাংবাদিক মোহাম্মদ কোরইকেহ, ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোমেন আলিওয়া শহীদ হয়।
আনাস আল-শরিফ গাজার একজন বীর, সে নিঃসন্দেহে আমাদের সবার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের একজন সাংবাদিক ছিল।
গাজার মানুষ সাধারণত গণমাধ্যমকে ঘৃণা করে। তারা সাংবাদিকদের দুটি ভূমিকায় দেখে: হয় তারা আমাদের অতিরঞ্জিতভাবে এমনভাবে তুলে ধরে—যেন আমরা অতিমানব, যারা অবিরাম বোমা হামলা, খাদ্য ও পানির অভাব এবং প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে; অথবা তারা আমাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিত্রিত করে, যা আমাদের পরিবারের হত্যাকাণ্ড এবং আমাদের বাড়িঘর ধ্বংসের ন্যায্যতা দেয়।
আনাস ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। সে সত্যকে বিকৃত করেনি। সে ছিল আমাদেরই একজন। আমাদের শরণার্থীশিবিরেই তার বেড়ে ওঠা। বোমার নিচে ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমাদের সঙ্গে কষ্ট ভোগ করে, প্রিয়জনদের জন্য শোক করে এবং নিজ সম্প্রদায়কে ছেড়ে না গিয়ে সে বেড়ে উঠেছে। সে গাজাতেই থেকে গেছে, জলপাইগাছের মতো দৃঢ়ভাবে, একজন সত্যিকারের ফিলিস্তিনির জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে।
গণহত্যা শুরুর পর আনাস আল-শরিফ আল–জাজিরার জন্য রিপোর্টিং শুরু করে এবং দ্রুতই সে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে। ক্রমাগত হুমকির মুখেও সে ও ইসমাইল আল-ঘুল উত্তর গাজা থেকে সম্প্রচার বন্ধ করেনি। তাদের উষ্ণ বন্ধুত্ব, আনন্দ ও দুঃখের মুহূর্তগুলো দুজনকে আমাদের কাছে আরও বেশি আপন করে তুলেছিল।
গাজায় ধ্বংসস্তূপের সামনে আনাস আল–শরিফ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে নৌকায় রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ চার জেলের মধ্যে মো. ফারুক (৩৯) নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে, একই ঘটনায় শনিবার (৯ আগস্ট) মারা যান আমজাদ হোসেন (৪০)। দুজনই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আরো পড়ুন:
বিদ্যালয়ের সিঁড়ির রেলিং থেকে পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের হাওরে পর্যটকের মৃত্যু
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট সকালে রামগতি মাছ ঘাট সংলগ্ন একটি খালে নৌকায় থাকা অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডারে রান্নার সময় লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চার জেলে গুরুতর দগ্ধ হন।
আহতদের প্রথমে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এবং সেখান থেকে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে ৬৬ শতাংশ দগ্ধ আমজাদ হোসেন এবং পরে ৪৫ শতাংশ দগ্ধ ফারুক মারা যান। এ ঘটনায় ৩৫ শতাংশ দগ্ধ আব্দুল খায়ের (৩২) ও ৪০ শতাংশ দগ্ধ গনি খাঁ (৫০) এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নৌকার মালিক মিরাজ উদ্দিন কবি ব্যাপারী জানান, দগ্ধদের মধ্যে ফারুক ও আমজাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। অন্যদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন জানান, চারজন দগ্ধের মধ্যে আমজাদ ও ফারুকের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন তারা। বাকিদের চিকিৎসা চলছে।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মেহেদী