চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) গঠনতন্ত্রে প্রশাসনের নারীবিদ্বেষী মনোভাব স্পষ্ট বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন সংগঠনের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে চাকসু নির্বাচন ও ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান। এ সময় তাঁরা প্রশাসনের করা চাকসুর নতুন গঠনতন্ত্রের সমালোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে এই দুই নেতা বলেন, চাকসুর গঠনতন্ত্রের ৭(ক) ধারায় দপ্তর সম্পাদক পদটি শুধু পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এটি নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়নের পরিপন্থী হিসেবে নির্দেশিত হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নারীবিদ্বেষী মনোভাব দেশজুড়ে সমালোচিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার্থে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রশাসনের কাছে ছাত্রদল দাবি জানাচ্ছে।

এর বাইরেও চাকসুর গঠনতন্ত্রে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি না থাকা, উপাচার্যের ক্ষমতা বেশি থাকা, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার সমালোচনা করেছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন, এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। লিখিত বক্তব্যে তারা জানায়, ‘চাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারে প্রশাসন দুই দফা ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। সর্বশেষ বৈঠকে চাকসুর প্রার্থিতার ক্ষেত্রে নিয়মিত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হতে পারবেন, এমন কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় দেখা গেল এমফিল ও পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত তাদের আগের প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটায়। একটি বিশেষ সংগঠন ছাড়া চাকসুসংক্রান্ত সব অংশীজনের সম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রশাসন কী কারণে পরিবর্তন করেছে, সে ব্যাপারে ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমরা ওয়াকিবহাল নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মামুনুর রশীদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.

ইয়াসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এতে তাঁরা গত আমলে অপকর্মে যুক্ত সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিচার চেয়েছেন। এতে তাঁরা অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রনেতা সম্প্রতি উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপাচার্য নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার করতে ব্যর্থ হলে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার কীভাবে করবেন, এই প্রশ্নও তুলেছেন নেতারা।

গঠনতন্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) ও চাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন চাকসু নির্বাচনে কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে চাকসু নির্বাচন কমিটির সভাপতি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয় প্রশাসনের হাতে। তিনি এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি।

অদৃশ্য শক্তি দখলদারি ও নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে অদৃশ্য একটি শক্তি দখলদারি কায়েমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি হলের ডাইনিংয়ের খাবারে মিল সিস্টেম চালুর মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার, মব সৃষ্টি, নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও শ্রেণিকক্ষকে রাজনৈতিক কার্যালয় বানানো হয়েছে।

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘শহীদ হৃদয় ও ফরহাদদের রক্তে পাওয়া এই মুক্ত ক্যাম্পাসে আবার কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তির জন্ম হোক, সেটা আমরা চাই না। গুপ্ত কায়দায় শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অপরাজনীতি করার চেষ্টা করা হলে ছাত্রদল তা প্রতিরোধ করবে। সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা শিক্ষার্থীদের দ্বিধাবিভক্ত করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে তাঁরা ক্যাম্পাসে এখনো বেশ তৎপর। বিশেষ ওই সংগঠনকে প্রত্যক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে বিরুদ্ধে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য ছ ত রদল র জন ত স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে

সম্প্রতি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গণতন্ত্র শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন।

যেকোনো রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্র ও নীতি-কর্মসূচির ভিত্তিতে। কিন্তু আমাদের নেতা-নেত্রীরা দেশবাসীকে গণতন্ত্রের সবক দিতে যতটা উদ্‌গ্রীব, দলের গণতন্ত্রায়ণ নিয়ে ততটাই উদাসীন। তারেক রহমানের এ বক্তব্যে যদি সেই উদাসীনতা কাটানোর সদিচ্ছা প্রকাশ পায়, আমরা স্বাগত জানাই।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর বাইরে অনেক অনিবন্ধিত দল আছে, যারা নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকুক আর না-ই থাকুক, তাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। তারা যে জনগোষ্ঠীর সমর্থন চায়, তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়। মানুষ দলটির নীতি-আদর্শের পাশাপাশি নেতৃত্ব গঠনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও দেখতে চাইবে। বিশেষ করে দলটি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি কতটা মেনে চলছে, সেসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি কম থাকায় এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন প্রতিটি দলের সব স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়, যা ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো দলই সেই শর্ত পূরণ করেনি। বাংলাদেশে কিছু দল আছে, তারা নারী নেতৃত্বের ঘোর বিরোধী। তারা কমিটিতে নারীর উপস্থিতি দেখতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব দল দশকের পর দশক নারী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে, সেসব দলও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। এ কারণে কোনো দলের কোনো স্তরে ১০ শতাংশ নারী নেতৃত্বের দেখা পাওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়।

যে রাজনৈতিক দল জনগণকে নেতৃত্ব দেবে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের কর্মকাণ্ডে কেন জবাবদিহি থাকবে না। একনায়ক পদ্ধতিতে দল পরিচালিত হওয়ার পরিণাম কতটা বিপজ্জনক হয়, তার প্রমাণ আমরা নিকট অতীতে কিংবা তারও আগে বহুবার পেয়েছি। তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানসিকতার দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে দলে গণতন্ত্রায়ণের কথা বলেছেন, সেটি সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য। প্রতিটি দল পরিচালিত হতে হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। সেই সঙ্গে যেসব দলের গঠনতন্ত্রে দলীয় প্রধানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা পরিবর্তন করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও দলে গণতন্ত্রায়ণের বিষয়টি সামনে আসে। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক দলের গণতন্ত্রায়ণের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ মুহূর্তে সেই সুযোগ না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব গঠনের কাজটি এগিয়ে নেওয়া।

বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা যখন দলে গণতন্ত্র সংহত করার কথা বলেছেন, তখন সেই দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কতটা মজবুত, দলটির নেতৃত্বের উচিত সেটা খতিয়ে দেখা। বিএনপির তৃণমূল স্তরে যে নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তার জন্য নেতৃত্ব গঠনের দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। যে দলটি ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে চাইছে, সেই দলটির নেতৃত্ব দলের গণতন্ত্রায়ণের বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকসু নির্বাচন নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল
  • নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে