আরো ৭ দেশে ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ ওয়ালটনের
Published: 12th, August 2025 GMT
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হয়ে উঠার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেক জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। সেই লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপক সাফল্য দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিনিয়ত ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার নতুন নতুন দেশে নিজস্ব ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করে চলেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অন্যতম শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন ৭টি দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস।
ওয়ালটন গ্লোবাল বিজনেস শাখার সূত্রমতে, গত অর্থবছরে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণকৃত দেশের তালিকায় রয়েছে উত্তর ও মধ্য আমেরিকায় অবস্থিত ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোস, ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি ও ভানুয়াতু, আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুন ও ক্যাপভার্ড এবং এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুর।
আরো পড়ুন:
ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স পরিদর্শন করলেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের প্রতিনিধিরা
এবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ
আন্তর্জাতিক বাজার কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের গ্লোবাল বিজনেস ডিভিশনের প্রধান আব্দুর রউফ বলেন, “পণ্যের সর্বাধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, টেকসই ও উচ্চ গুণগতমান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধব এবং মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ওয়ালটন। ফলে বৈশ্বিক বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ড অতি অল্প সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে নতুন নতুন দেশে প্রতিনিয়ত ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করে চলেছে ওয়ালটন।”
তিনি বলেন, “গত এক বছরে (২০২৪-২৫) নতুন ৭টি দেশের বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ড বিজনেস কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।”
আব্দুর রউফ জানান, চলতি দশকের শুরু থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। সেই লক্ষ্য অর্জনে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারে নিজস্ব ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণে কাজ করছে ওয়ালটন। সেজন্য সুদক্ষ এবং চৌকস গ্লোবাল বিজনেস টিম গঠন করা হয়েছে।পাশাপাশি কয়েকটি দেশে সাবসিডিয়ারি এবং শাখা অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটনের গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। সেখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের উদ্ভাবনী পণ্যের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড, আবহাওয়া এবং ক্রেতাদের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণার প্রেক্ষিতে পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। যার ফলে একের পর এক নতুন দেশে ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে।”
ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, কম্প্রেসর, ফ্যানসসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যসামগ্রী রপ্তানিকারক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন পণ্য। বাংলাদেশে ওয়ালটন পণ্য ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।যার ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে ওয়ালটন আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ঢাকা/সাহেল/পলাশ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ক লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%
দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান আসে নানা ধরনের মাছ থেকে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ৬৩ গ্রাম মাছ খেয়ে থাকে। তবে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামের মাছই আমিষের বড় উৎস। সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামি মাছে মধ্যে পছন্দের শীর্ষে তেলাপিয়া মাছ। বছর বছর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক দশকে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টন।
এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পুরুষ তেলাপিয়া চাষের উৎপাদনই বেশি বাড়ছে। তবে মাছ চাষের খরচের প্রায় ৭০ শতাংশই খাবারের পেছনে। তাই উৎপাদন বাড়লেও তেলাপিয়া মাছের দামও এখনো নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৮ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ১৯১ টন। ১০ বছর আগেও ২০১৩–১৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল মাত্র ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬২ টন। সেই হিসাবে এক দশকের ব্যবধানে তেলাপিয়ার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১৬ টন।
বড় বাজারের দরদামরাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা মডেল টাউন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ২২০ টাকা দরে ৫০ কেজি মাছ বিক্রি করেছেন মাছ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি মাছ তিনি ১৮০ টাকায় কিনেছেন। কামাল হোসেন জানান, এক বছরের ব্যবধানে পাইকারিতে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে প্রায় ৮০ টাকা। মাছের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, মাছ উৎপাদনে ৭০ শতাংশ খরচই হয় খাবারের পেছনে। গত কয়েক বছরে খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়লেও দাম কমেনি। তবে তিনি বলেন, খাবারের দাম যতটা বেড়েছে, মাছের দাম ততটা বাড়েনি।
এদিকে মাছচাষিরা বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি। এ কারণে অনেক মাছচাষি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাষির মুনাফা বৃদ্ধি না পাওয়ার জন্য ব্যাংকের উচ্চ সুদকে দায়ী করছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, অনেক চাষি উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষে বিনিয়োগ করেন। ভালো মুনাফা না পেলে তাঁদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। এ বিষয়ে ময়মনিসংহের ত্রিশালের মাছচাষি নাহিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মাছচাষিরা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। মাছের খাবার, বিদ্যুৎ বিল, ওষুধ, শ্রমিকের খরচ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ মিলিয়ে মাছ চাষ করে লোকসান গুনছেন বেশির ভাগ চাষি।
নাদিম মাহমুদ জানান, বর্তমানে মাছের এক টন খাবারের দাম ৭২ হাজার টাকা। তাঁর তিন একরের পুকুরে দিনে প্রায় আধা টন খাবার লাগে। একজন শ্রমিকের বেতন মাসে ১৮ হাজার টাকা। তাই মাছ চাষে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা না গেলে অনেকেই আগ্রহ হারাবেন।
মাছ চাষের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক মাস আগে নিয়োগ পাওয়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি খাতের মতো মৎস্য খাতেও বিদ্যুৎ বিল কমাতে আমরা কাজ করছি।’
মাছ চাষে শীর্ষ ১০ জেলা২০২৩ সালের মৎস্য অধিদপ্তরের উৎপাদন হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর তেলাপিয়ার মোট উৎপাদনের মধ্যে পুকুরে চাষ হয়েছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৪২ টন। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ জেলার পুকুরে চাষ হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। পুকুরে তেলাপিয়া চাষে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা। এ জেলায় ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার টন তেলাপিয়া পাওয়া যায়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ময়মনসিংহ জেলায় উৎপাদিত হয় প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার টন। যশোর থেকে আসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ১৯৭ টন। চট্টগ্রাম ও বরিশালে উৎপাদিত হয় যথাক্রমে প্রায় ২০ হাজার ও ১১ হাজার ৭১৪ টন। এরপরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাজীপুর, বগুড়া ও নোয়াখালী।
আফ্রিকা থেকে দেশেমৎস্য কর্মকর্তারা জানান, ১৯৬৯ সালে আফ্রিকা থেকে প্রথম দেশে আনা হয় তেলাপিয়া। তবে ২০১০ সালের পর তেলাপিয়ার ব্যাপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) মো. মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন মোনোসেক্স জাতের পুরুষ তেলাপিয়ার বেশি চাষ হচ্ছে। কারণ, এসব মাছ আকারে বড় হয়। আগে মিশ্র জাতের তেলাপিয়ার বেশি চাষ হতো।
একদিকে বেড়েছে চাহিদা, অন্যদিকে কম সময়ে এ মাছ দ্রুত বড় হয়। তাই দেশে তেলাপিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এ মাছ বিক্রি উপযোগী হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মো. মোতালেব হোসেন বলেন, গরম বা ঠান্ডা যেকোনো আবহাওয়ায় তেলাপিয়া চাষ করা যায়। এ ছাড়া খাবার না দিলেও এ মাছ বড় হয়। কই, শিং ও পাবদা মাছের মতো তেলাপিয়া আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয় না। খেতেও সুস্বাদু। তাই তেলাপিয়ার চাষ এক দশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
তেলাপিয়া বিতর্কশেওলা ও বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে বলে এটিকে গারবেজ/ট্র্যাশ ফিশ বা আবর্জনা মাছ বলেও ডাকা হয়। এক সময় এ মাছে নানা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির অভিযোগ উঠেছিল। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত খাবারের জন্য মূলত এটি হয়ে থাকতে পারে। তাই মানসম্পন্ন খাবার দেওয়া হলে এ মাছে ক্ষতির কিছু নেই।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক
মো. মোতালেব হোসেন বলেন, এখন পুকুরে গোবর, হাঁস–মুরগির উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করাও আইনিভাবে নিষিদ্ধ।
অধ্যাপক ও গবেষক রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, বর্তমানে দেশে মাছ চাষে যে ধরনের খাবার ব্যবহার করা হয়, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির সুযোগ নেই।