গাজা সিটিতে গত রোববার ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ২৮ বছর বয়সী প্রতিবেদক আনাস আল-শরিফ। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তিনি প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন। নিহত বাকি চারজন হলেন প্রতিবেদক মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরাম্যান ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফল ও মোআমেন আলিওয়া।

সাংবাদিকদের ব্যবহৃত তাঁবুতে সুনির্দিষ্ট হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ, কাতার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার সংস্থাগুলো কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, শরিফ ‘হামাসের সন্ত্রাসী সেলের’ প্রধান ছিলেন। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ তাঁরা দেখাতে পারেনি। শরিফ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এ ছাড়া আল-জাজিরা ও গণমাধ্যমের অধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলোও তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিবিসির তথ্যমতে, সংঘাত শুরুর আগে শরিফ হামাসের একটি মিডিয়া টিমের সঙ্গে কাজ করতেন।

সাংবাদিকদের অধিকারবিষয়ক সংস্থা কমিটি ফর দ্য প্রটেকশন অব জার্নালিস্টের সিইও জোডি গিন্সবার্গ বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, শরিফের হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।

গাজা সিটিতে ‘অবশিষ্ট একমাত্র কণ্ঠস্বর’

গাজায় যুদ্ধের সময় আনাস আল-শরিফ আল-জাজিরার অন্যতম শীর্ষ প্রতিবেদক হিসেবে পরিচিতি পান।

শরিফ গাজা উপত্যকার উত্তরের জনবহুল জাবালিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। আল-জাজিরার সঙ্গে প্রায় দুই বছর কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমটি।

আল-জাজিরা ইংলিশের বার্তাপ্রধান সালাহ নেগম বলেছেন, যুদ্ধ চলাকালে শরিফ গাজার ভেতর থেকে প্রতিদিন মানুষের দুর্দশা ও সেখানে সংঘটিত হামলার খবর পৌঁছে দিতেন।

আনাস আল-শরিফের পরিবারে স্ত্রী, চার বছরের মেয়ে শাম এবং এক বছরের ছেলে সালাহ রয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে গাজার উত্তরের এলাকা থেকে সংবাদ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে গেছেন। এ কারণে তিনি পরিবার থেকে দীর্ঘ সময় দূরে ছিলেন।

শরিফ ছিলেন সাহসী, নিবেদিতপ্রাণ এবং সৎ। এসব কারণেই তিনি একজন সফল সাংবাদিক হতে পেরেছিলেন। বিশ্বজুড়ে তাঁর লাখ লাখ সোশ্যাল মিডিয়া অনুসারী রয়েছেনআল–জাজিরার অ্যারাবিক চ্যানেলের ইনপুট ম্যানেজার

এ বছরের জানুয়ারিতে শরিফ ও তাঁর স্ত্রীর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে যৌথ পোস্টে দুই সন্তানের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি শেয়ার করা হয়। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ১৫ মাসের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো তিনি ছেলে সালাহর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন।

শরিফ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সরাসরি সম্প্রচারে হাজির হতেন এবং বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতেন।

শরিফ তাঁর সহকর্মীদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস ও নির্বিচার হামলার খবর তুলে ধরেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন আল-জাজিরার বিশিষ্ট সাংবাদিক ইসমাইল আল-ঘৌল ও ক্যামেরাম্যান রামি আল-রিফি। তাঁরা দুজনেই ২০২৪ সালে গাজা সিটিতে একটি বিমান হামলায় নিহত হন।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শরিফদের বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে তাঁর বাবা নিহত হন। মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি গাজা সিটিতে তীব্র ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের খবর পোস্ট করেছিলেন।

আল-জাজিরার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ মোয়াদ তাঁকে ‘গাজা সিটিতে অবশিষ্ট একমাত্র কণ্ঠস্বর’ বলে অভিহিত করেছেন।

আল-জাজিরার অ্যারাবিক চ্যানেলের ইনপুট ব্যবস্থাপক রায়েদ ফাকিহ বলেন, শরিফ ছিলেন সাহসী, নিবেদিতপ্রাণ এবং সৎ। এসব কারণেই তিনি একজন সফল সাংবাদিক হতে পেরেছিলেন। বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর লাখ লাখ অনুসারী রয়েছেন।

ফাকিহ আল-জাজিরার ব্যুরো ও প্রতিবেদকদের দেখভাল করেন। শরিফের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘তাঁর নিষ্ঠা তাঁকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যেখানে অন্য কোনো সাংবাদিক পৌঁছান না। বিশেষ করে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এমন সব জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন তিনি। একজন সত্যিকারের সাংবাদিক হিসেবে তাঁর সততা তাঁকে উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হতে দেয়নি।

ফাকিহ জানান, যুদ্ধ চলাকালে তিনি অনেকবার শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

শেষ কথোপকথনে শরিফ তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি ক্ষুধা ও অনাহারে ভুগছেন এবং এত কম খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ইসরায়েলের এ অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে ঘোষণা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

শরিফ মনে করতেন, গাজাবাসীদের কষ্টের কথা সবাইকে জানানোই তাঁর একমাত্র কাজ। তিনি নিজেও তাঁদের মতো ক্ষুধা ও কষ্টে ভুগছিলেন এবং প্রিয়জনদের জন্য শোক জানাচ্ছিলেন।

শরিফের বাবা ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছিলেন। সেভাবে চিন্তা করলে, তিনি সব গাজাবাসীর দুঃখ, ব্যথা ও ধৈর্যের প্রতীক ছিলেন। মৃত্যুর মুখেও তিনি থেমে যাননি। কারণ, এটা এমন এক গল্প, যা অবশ্যই সবার জানা প্রয়োজন।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, নিহত আরেক সাংবাদিক ৩৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ কুরেইকেহও ছিলেন দুই সন্তানের বাবা। শরিফের মতো তিনিও যুদ্ধ চলাকালে গাজার উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকায় মাসের পর মাস তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।

আল–জাজিরা অ্যারাবিক জানায়, রোববার সন্ধ্যায় হামলার কয়েক মিনিট আগে কুরেইকেহর শেষ সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল।

ইসরায়েলের অভিযোগ, নেই প্রমাণ

শরিফের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী সেলের’ নেতৃত্বের অভিযোগ ইসরায়েলের। কিন্তু তাদের কাছে নেই পর্যাপ্ত প্রমাণ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আনাস আল-শরিফকে ‘সাংবাদিকের ছদ্মবেশে হামাসের সন্ত্রাসী সেলের প্রধান’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। ইসরায়েলিদের লক্ষ্য করে তিনি রকেট হামলা চালিয়েছেন বলে তারা দাবি করেছে। তবে তারা এসব অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন নথি রয়েছে, যা ‘তর্কাতীতভাবে’ শরিফের হামাসের সঙ্গে সামরিক যোগসূত্র প্রমাণ করে। এসবের মধ্যে রয়েছে কর্মী তালিকা, সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণের কাগজপত্র, ফোন ডিরেক্টরি ও বেতন–সংক্রান্ত তথ্য।

ইসরায়েল গাজা উপত্যকার উত্তরের হামাস সদস্যদের তালিকাসংবলিত কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছে। এতে আহত সদস্যদের তথ্য এবং বাহিনীর ইস্ট জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের ফোন ডিরেক্টরি বলে ধারণা করা একটি অংশও রয়েছে।

ইসরায়েল এর আগেও শরিফের বিরুদ্ধে হামাসের সামরিক শাখার সদস্য হওয়ার অভিযোগ তুলেছিল। শরিফ ও তাঁর নিয়োগকর্তা আল-জাজিরা কঠোরভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ইসরায়েলের এ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

আরএসএফ বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শক্ত পদক্ষেপ না নিলে আরও অনেক সাংবাদিককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল জ জ র র ন আল জ জ র ইসর য় ল র ম হ ম মদ ব ষয়ক স

এছাড়াও পড়ুন:

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বদলে যেতে পারে শিক্ষার্থীর জীবন

লেখাপড়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এক বছর লেখাপড়া শেষে একটা পরিপূর্ণ মূল্যায়ন পেতে চায়। পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া সম্ভব। তাই জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। একজন শিক্ষার্থীর জীবন এ বৃত্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়েই বদলে যেতে পারে।

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা শুধু একটি পরীক্ষাই নয়, বরং একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গঠনের একটি শক্তিশালী ভিত্তি। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে এই পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে। এতে করে তার মধ্যে লক্ষ্য নির্ধারণ, পড়ার প্রতি আগ্রহ এবং নিয়মিত অধ্যবসায়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে।

একজন শিক্ষার্থী যখন বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, তখন তার মানসিক বিকাশের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। এই আত্মবিশ্বাস একজন শিক্ষার্থীর জন্য অনেক দরকার। ভবিষ্যৎ লেখাপড়ার প্রতিযোগিতামূলক সড়কে একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম।

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা আবার শুরু হতে যাচ্ছে। অবশ্য এ উদ্যোগ ঘিরে বিভক্ত মত রয়েছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের অভিমত ছাপা হচ্ছে শিক্ষায়

আর এই বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ে একটি স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ পায়। একজন শিক্ষার্থী যখন বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়, তখন সে শুধু নিজেই গর্বিত হয় না, তার পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজও তার ওপর গর্ববোধ করে। এতে তার মধ্যে আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়। পড়াশোনায় সে আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে ভালো ফলাফলের জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। এই সাফল্য পরবর্তীকালে তার শিক্ষা ও কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুনঅষ্টম শ্রেণিতে আবারও বৃত্তি পরীক্ষা ফিরছে, আছে প্রশ্নও২৮ জুলাই ২০২৫রাবেয়া সুলতানা, সিনিয়র শিক্ষক, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবর ভেঙে ফেলার আহ্বান ইসরায়েলি মন্ত্রীর
  • ডলার কাছে নিতেই আর কিছু মনে নেই, ব্যবসায়ীর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট
  • নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু
  • মহানবী (সা.)-এর জীবনে নারীদের অবদান 
  • বডিক্যাম কী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কাজে দেবে
  • উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে নিয়ে আসেন না কেন: দুদক চেয়ারম্যান
  • দাম্পত্য–জীবনে মতভেদ হলে ইসলামের নির্দেশনা
  • এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকের শেয়ার গ্রহণের ঘোষণা
  • জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বদলে যেতে পারে শিক্ষার্থীর জীবন