মাইন বিস্ফোরণে আহত হাতিটি হাঁটছে খুঁড়িয়ে, ভুগছে রক্তশূন্যতায়
Published: 13th, August 2025 GMT
মাইন বিস্ফোরণে হাতিটির সামনের ডান পা প্রায় অবশ। ওই পায়ের তলা ও নখ উড়ে গেছে। বাকি তিনটি পায়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে হাতিটিকে। পায়ের ক্ষতের যন্ত্রণা নিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে হাতিটি। গত রোববার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে হাতিটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, রক্ত ও পানিশূন্যতায় হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে নিবিড় পরিচর্যা দরকার আহত হাতিটির।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আহত হাতিটি গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা দক্ষিণ হামিদিয়াপাড়া এলাকায় ছিল। সেখানে বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হাতিটির তত্ত্বাবধান করছেন। গতকাল দুপুরে হাতিটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাতিটির জন্য আশপাশে বেশ কিছু কলাগাছ কেটে রাখা হয়েছে।
রক্তশূন্যতা কীভাবে দূর করা যায়, সেটিই হাতিটির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে রক্তশূন্যতা কাটাতে হবে। তাই হাতিটির দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা দরকার। না হলে এটিকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।হাতেম সাজ্জাদ মো.জুলকারনাইন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন জানান, গতকাল দুপুরে হাতিটিকে ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে শান্ত করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাতিটির একটি পায়ের তলা ও নখ উড়ে গেছে। প্রচণ্ড ফুলে গেছে ওই পা। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের আঘাতের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাতিটির শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পানি ও খাবার না পাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছে হাতিটি। রক্তশূন্যতা কীভাবে দূর করা যায় সেটিই হাতিটির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে রক্তশূন্যতা কাটাতে হবে। তাই হাতিটির দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা দরকার। না হলে এটিকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।’
আরও পড়ুনমাইন বিস্ফোরণে সাড়ে ৮ বছরে পা হারালেন ৪৪ জন০১ জুলাই ২০২৫বন বিভাগের নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সরকার বলেন, সীমান্তের মিয়ানমারের অংশে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে মাদি হাতিটি আহত হয়। আহত অবস্থায় সেটি গত রোববার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি ও আশারতলির মাঝামাঝি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে।
বন বিভাগ হাতিটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হাতিটির সামনের ডান পা প্রায় অবশ। হাঁটাচলাও খুব একটা করতে পারছে না। বয়স্ক হাতিটি পাল হারিয়ে একাকী হয়ে পড়ায় মানসিকভাবেও খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তে মাইন কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ; কেউ পঙ্গু, কেউ নিঃস্ব০৩ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত শ ন যত আহত হ
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ