গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে নাশতার বিলসহ বাকি টাকা চাওয়া নিয়ে বাগ্‌বিতাণ্ডার জেরে বাড়ি থেকে পিস্তল এনে চা–দোকানিকে গুলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত চা-দোকানিকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আজ বুধবার সকালে উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের নাপিতের বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ইদিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চকদাড়িয়া গ্রামের গোলাপ প্রামাণিক (৩১) নামের এক যুবক এই গুলি ছুঁড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলছুমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন গোলাপ প্রামাণিক। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তিনি মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন। তাঁর নামে একাধিক মামলাও রয়েছে।

গুলিতে আহত চা-দোকানির নাম ওয়াসিম (১৮)। ইদিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চকদাড়িয়া গ্রামে তাঁদের বাড়ি। ওয়াসিম ও তাঁর বাবা সিদ্দিক আকন্দ মিলে নাপিতের বাজার এলাকায় চা-নাশতার দোকানটি পরিচালনা করেন।

পুলিশ, হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাপিতের বাজারে আসেন গোলাপ প্রামাণিক। তিনি সিদ্দিক আকন্দের দোকানে খাজা (একপ্রকার নাশতা) খান। খাবার পর বিল না দিয়ে চলে যেতে চান। এ সময় সিদ্দিক আকন্দ তাঁর কাছে টাকা চান। গোলাপ টাকা দিতে পারব না বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে সিদ্দিককে ধাক্কা দেন গোলাপ। এ সময় ওয়াসিম তাঁর বাবা ও গোলাপকে সরিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলাপ ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে চলে যান।

কিছুক্ষণ পর গোলাপ বাড়ি থেকে পিস্তল এনে ওয়াসিমকে গুলি করেন। এতে ওয়াসিমের বাঁ পায়ের ওপরের দিকে ঊরুতে গুলি লেগে পাশ দিয়ে চলে যায়। এ সময় ওয়াসিমকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে গোলাপ তাঁর ভাবি সেলিনা বেগমকে গুলি করেন। গুলি সেলিনার পায়ে লেগে এক পাশ দিয়ে চলে যায়। ফলে তিনিও আহত হন।
এদিকে হইচই শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে গোলাপ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। পরে আহত অবস্থায় ওয়াসিম ও সেলিনা বেগমকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের পর সেলিনা বেগম হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। ওয়াসিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গুলিবিদ্ধ ওয়াসিম আকন্দ বলেন, ‘গোলাপ আমাদের দোকানে খেয়ে টাকা দেন না। তাঁর কাছে অনেক টাকা পাই। টাকা চাইলেই তিনি হুমকি দেন। ভয়ে আমরা টাকা চাইতে পারি না। আজ টাকা চেয়ে গুলিবিদ্ধ হলাম। তিনি আজ তিনটি গুলি করেছেন। আমি তাঁর বিচার চাই।’

ওয়াসিমের বাবা সিদ্দিক আকন্দ জানান, ‘আমরা গরিব মানুষ। বাজারে চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাই। আমার ছেলে কী দোষ করেছিল, তাকে গুলি করা হলো। আমি এই ঘটনার বিচার ও সন্ত্রাসী গোলাপকে গ্রেপ্তার দেখতে চাই।’

এই ঘটনার পর থেকে গোলাপ প্রামাণিক পলাতক। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ আসিফ বলেন, গুলির ক্ষতে সাধারণত বার্ন থাকে। ওয়াসিমের ঊরুতে যে ক্ষত হয়েছে, তাতে বার্ন বা পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তবে ওয়াসিম আশঙ্কামুক্ত। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন, এ ঘটনা শোনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অপরাধীকে ধরতে অভিযান চলছে। ঘটনার সময় তিনি পিস্তল, বন্দুক নাকি অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স দ দ ক আকন দ

এছাড়াও পড়ুন:

লিখিত পরীক্ষায় প্রতারণা, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা, ৮ জনকে কারাদণ্ড

কারারক্ষী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় ৮ জনের ১০ মাস করে কারাদণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকার দিতে আসার পর তাঁরা ধরা পড়েন। বিষয়টি আজ বুধবার কারা কর্তৃপক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারের সময় জানা যায় ৮ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁদের নাম করে অন্যরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু প্রকৃত প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার দিতে এলে বিষয়টি ধরা পড়ে। লিখিত পরীক্ষার সময় কারা কর্তৃপক্ষ সব চাকরিপ্রার্থীর ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখে। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সেই ছবি মিলিয়ে দেখা হয়। এভাবে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, জালিয়াতিতে যুক্ত ৮ জন প্রার্থীকে শনাক্ত করার পর বিষয়টি চকবাজার থানা-পুলিশকে জানানো হয়। থানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের আটক করে স্পেশাল মেট্রোপলিটন আদালত লালবাগে উপস্থিত করলে বিচারক তাঁদের কারাদণ্ড দেন।

আসামিদের জবানবন্দি থেকে দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, চক্রের সদস্যরা নিয়োগপ্রার্থীদের বাবা, মা, ভাই বা নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করেন। কেউ কেউ সন্তানের পক্ষে অলিখিত স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে এবং ব্ল্যাঙ্ক চেক দালালদের কাছে জমা দিয়ে চুক্তি করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দালালদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে আদালত চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একটি এজাহার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ