ফেনী পুলিশ লাইন্সে সহকর্মীর বঁটির কোপে আনসার সদস্য আহত
Published: 14th, August 2025 GMT
ফেনী পুলিশ লাইন্সে সহকর্মীর বঁটির কোপে মো. রহমত আলী (৫৪) নামে বিশেষ আনসারের এক সদস্য আহত হয়েছেন। অভিযুক্ত আনসার সদস্য আলী মনোয়ার হোসেনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুলিশ লাইন্স মেসে ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আলী মনোয়ারকে আসামি করে পুলিশ লাইন্সের মেস ম্যানেজার নায়েক সুব্রত দাস বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় আলী মনোয়ারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আরো পড়ুন:
রাঙামাটিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
টাঙ্গাইলে ফারুক হত্যা: খালাসপ্রাপ্ত ১০ আসামিকে আত্মসমর্পণের নিরদে
আটক আলী মনোয়ার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া এলাকার মৃত মোজায়েরের ছেলে। আহত রহমত আলী খুলনার ভাটিয়াঘাটা এলাকার মৃত সৈয়দ এমদাদ আলীর ছেলে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিশেষ আনসারের দুই সদস্য ফেনী পুলিশ লাইন্সে দায়িত্বরত ছিলেন। দুপুরে পুলিশ লাইন্সের মেসে খাবার খেতে গিয়ে তারা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রহমত আলীকে মেসের তরকারি কাটার জন্য রাখা বঁটি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন আলী মনোয়ার। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আলী মনোয়ারকে আটক করে পুলিশ।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, “আহত আনসার সদস্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত আনস র সদস য প ল শ ল ইন স মন য় র
এছাড়াও পড়ুন:
‘তোমাদের কাছে ফিলিস্তিনকে আমানত রেখে যাচ্ছি’
গাজায় আলজাজিরার সাংবাদিক আনাস আল শরিফ রবিবার (১০ আগস্ট) রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশ্ববাসীর জন্য তিনি একটি শক্তিশালী বার্তা রেখে গেছেন। সংবাদের বাইরে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার সারকথা রয়েছে তার এই বার্তায়, যেটিকে তার শেষ বার্তা বলা হচ্ছে।
এই শেষ বার্তায় আনাস আল শরিফ প্রতিশ্রুতি ব্যক্তি করে গেছেন, বলে গেছেন- মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও তিনি তার জনগণের অবিচল কণ্ঠস্বর হয়ে থাকবেন এবং গাজার দুঃখ-কষ্ট ও স্বাধীনতার আশার সত্যকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেবেন।
জন্মভূমির প্রতি, নিজভূমের মানুষের প্রতি, গাজার সন্তানদের প্রতি; বিশ্ববাসীর প্রতি এই বছরের এপ্রিলে আনাস আল শরিফ তার শেষ ইচ্ছা জানিয়ে যান। ইসরায়েল তাকে হত্যার পর আনাসের সহকর্মীরা তার বার্তাটি এক্সে পোস্ট করেছেন।
সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ আনাস আল শরিফের বার্তাটি হুবহু ও বিনা সম্পাদনায় পুনঃপ্রকাশ করছে:
এটি আমার আকাঙ্ক্ষা এবং আমার শেষ বার্তা। যদি এই কথাগুলো তোমাদের কাছে পৌঁছায়, জেনে রেখো, ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে এবং আমার কণ্ঠস্বর নীরব করতে সফল হয়েছে।
প্রথমেই, তোমাদের প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আল্লাহ জানেন, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের গলিপথ ও রাস্তায় চোখ মেলবার পর থেকেই আমি আমার সর্বশক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আমার জনগণের কণ্ঠ ও অবলম্বন হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার আশা ছিল, আল্লাহ আমার আয়ু বাড়িয়ে দেবেন, যাতে আমি আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে আমাদের মূল শহর দখলকৃত আসকালানে (আল-মাজদাল) ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই আগে এসেছে, আর তার ফয়সালা চূড়ান্ত।
আমি জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতে যন্ত্রণা অনুভব করেছি, বহুবার দুঃখ-কষ্ট ও হারানোর স্বাদ পেয়েছি। তবু আমি কখনো সত্যকে যেমন আছে তেমনভাবে তুলে ধরতে দ্বিধা করিনি; বিকৃত বা ভ্রান্ত না করে, যাতে আল্লাহ সাক্ষী থাকেন তাদের বিরুদ্ধে, যারা নীরব থেকেছে, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছে, যারা আমাদের নিঃশ্বাস রুদ্ধ করেছে, আর যাদের হৃদয় আমাদের শিশু ও নারীদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাবশেষে নড়েনি; যারা কিছুই করেনি এই গণহত্যা থামাতে, যা আমাদের জনগণ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সহ্য করছে।
আমি তোমাদের কাছে ফিলিস্তিনকে আমানত রাখছি, যা মুসলিম বিশ্বের মুকুটের রত্ন, সারা বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন মানুষের হৃদস্পন্দন।
আমি তোমাদের কাছে আমানত রাখছি এর জনগণকে, এর অবিচারপীড়িত ও নির্দোষ শিশুদের, যারা স্বপ্ন দেখার বা নিরাপদে শান্তিতে বাঁচার সুযোগই পায়নি। তাদের পবিত্র দেহ হাজার হাজার টন ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের নিচে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে, ছিন্নভিন্ন হয়ে দেয়ালে ছিটকে পড়েছে।
আমি তোমাদের অনুরোধ করছি— শৃঙ্খল যেন তোমাদের নীরব না করে, সীমানা যেন তোমাদের আটকাতে না পারে। তোমরা যেন সেতু হও, এই ভূমি ও এর জনগণের মুক্তির পথে; যতক্ষণ না মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য আমাদের লুট হয়ে যাওয়া মাতৃভূমির আকাশে উদিত হয়।
আমি তোমাদের কাছে আমার পরিবারকে আমানত রাখছি। আমি তোমাদের কাছে আমার প্রিয় কন্যা শামকে আমানত রাখছি, যে আমার চোখের আলো; যাকে আমি আমার স্বপ্নের মতো বড় হতে দেখতে কখনোই পারিনি। আমি তোমাদের কাছে আমার প্রিয় পুত্র সালাহকে আমানত রাখছি, যাকে আমি জীবনপথে সমর্থন দিতে এবং তার শক্তি বাড়িয়ে তুলতে চেয়েছিলাম, যাতে সে আমার বোঝা বহন করে মিশন চালিয়ে যেতে পারে।
আমি তোমাদের কাছে আমার প্রিয় মাকে আমানত রাখছি, যার বরকতময় দোয়া আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে, যার প্রার্থনা ছিল আমার দুর্গ, আর যার আলো আমার পথ প্রদর্শন করেছে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাকে শক্তি দান করেন এবং আমার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেন।
আমি আমার জীবনসঙ্গিনী, প্রিয় স্ত্রী উম্মে সালাহকেও (বায়ান) তোমাদের কাছে আমানত রাখছি, যার কাছ থেকে যুদ্ধ আমাকে দীর্ঘদিন ও মাস আলাদা করে রেখেছে। তবু সে আমাদের সম্পর্কের প্রতি অনুগত থেকেছে, জলপাই গাছের কাণ্ডের মতো অবিচল থেকেছে; ধৈর্যশীল, আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা, আর আমার অনুপস্থিতিতে পূর্ণশক্তি ও ঈমান নিয়ে দায়িত্ব বহন করা।
আমি তোমাদের আহ্বান করছি, তোমরা যেন তাদের পাশে থাকো, আল্লাহ সর্বশক্তিমানের পর তাদের অবলম্বন হও।
যদি আমি মারা যাই, তবে আমি আমার নীতিতে অবিচল থেকে মরব। আমি আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি তার ফয়সালায় সন্তুষ্ট, তার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে নিশ্চিত এবং নিশ্চিত যে, আল্লাহর কাছে যা আছে তা-ই উত্তম ও চিরস্থায়ী।
হে আল্লাহ, আমাকে শহীদদের কাতারে কবুল করুন, আমার অতীত ও ভবিষ্যতের গোনাহ মাফ করুন, আর আমার রক্তকে এমন আলো বানান, যা আমার জনগণ ও পরিবারকে স্বাধীনতার পথে আলোকিত করবে। যদি আমি কোনো ক্ষেত্রে ত্রুটি করে থাকি, তবে আমাকে ক্ষমা করুন, আর আমার জন্য রহমতের দোয়া করুন, কেননা আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি এবং কখনো তা পরিবর্তন বা বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।
গাজাকে ভুলে যেও না… আর আমাকে ভুলে যেও না; তোমাদের আন্তরিক ক্ষমা ও কবুলিয়াতের দোয়ায়।
আনাস জামাল আল-শরিফ
০৬.০৪.২০২৫
ঢাকা/রাসেল