গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১২৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৩৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত মোট ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬১ হাজার ৭২২ জনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ জনে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয়ের আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

আরো পড়ুন:

নেতানিয়াহু পথ হারিয়ে ফেলেছেন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

গাজায় গণহত্যার মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুক্তি মিশরের

মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৮৫ জনে আহত হয়েছেন। এতে করে গত ২৭ মে থেকে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো ১৩ হাজার ৫৯৪ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

এছাড়াও জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন শিশুসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে গাজায় মানবিক সংকট আরো গভীর হওয়ার সাথে সাথে দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ২৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৬ জন শিশুও রয়েছে।  

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

দীর্ঘ ১৫ মাস ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ২০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪২ হাজার ৪৮৪ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল য় ইসর য় ল ম নব ক স

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেটা টুনবার্গসহ গাজা ফ্লোটিরার ২০০ জনকে আটক করেছে ইসরায়েল

গণহত্যার নৃশংসতায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ঝঞ্ঝামুখর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উপকূলে পৌঁছানো গাজা ফ্লোটিলার ২০০ জনকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

আলজাজিরা লিখেছে, গাজা ফ্লোটিলা অর্থাৎ গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া নৌকার বহরে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অধিকারকর্মী, রাজনীতিক, কূটনীতিক ও জলবায়ুকর্মীরা। 

আরো পড়ুন:

বুকে আবু সাঈদ হাতে বাংলাদেশ, গাজার পথে শহিদুল আলম

গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চান ট্রাম্প

এই অধিকারকর্মীদের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু আন্দোলনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত গ্রেটা টুনবার্গ রয়েছেন, যাকে আটক করেছে ইসরায়েলি হানাদারা বাহিনী। তাকে গ্রেপ্তারের মুহূর্তের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। 

এই ফ্লেটিলায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী ও অধিকারকর্মী শহিদুল আলম। তিনি এখনো আটক হননি বলে মনে করা হচ্ছে।  

গাজামুখী নৌকার বহরের নাম ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা‘। এই বহরের মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামের পোস্টে ‘মিশন আপডেট’ শিরোনামে  সবশেষ তথ্য দিচ্ছেন। 

আবুকেশেক তার সবশেষ পোস্টে নিশ্চিত করেছেন,  ইসরায়েলি বাহিনী সমুদ্রে ১৩টি নৌকা তাদের কব্জায় নিয়েছে।

তিনি বলেছেন, এসব নৌকায় ৩৭টি দেশের ২০০ জনের বেশি অধিকারকর্মী ছিলেন। এর মধ্যে স্পেন থেকে ৩০ জন, ইতালি থেকে ২২ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন এবং মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন অংশ নিয়েছেন।

গ্রেপ্তার সত্ত্বেও মিশন এখনো চলছে বলে জানিয়েছেন আবুকেশেক। তিনি লিখেছেন, গ্রেপ্তার সত্ত্বেও  নৌকাগুলো গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রায় ৩০টি নৌকা আছে, যারা এখনো দখলদার বাহিনীর সামরিক জাহাজগুলোর কাছ থেকে লড়াই করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে এবং গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা অনুপ্রাণিত এবং তারা যা কিছু সম্ভব তা করছেন; যেন ভোরের মধ্যে একসঙ্গে এই অবরোধ ভাঙতে পারেন এবং গাজায় পৌঁছাতে পারেন।”

এদিকে গাজা ফ্লোটিলা থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ওয়ালে মাঝে মাঝে পোস্ট দিচ্ছিলেন শহিদুল আলম। সবশেষ তিন ঘণ্টা আগে এক বার্তায় তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে বলে দৃঢ় ভাষ্য উচ্চারণ করেছেন।

অবশ্য পাঁচ ঘণ্টা আগে দেওয়া আরেক পোস্টে শহিদুল আলম লেখেন, “আজ (বুধবার) রাতে সমুদ্র ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল, আর আমরা বজ্রপাত ও ঝড়ের আগে আগে যেতে লড়াই করেছি।”

একই পোস্টে তিনি লেখেন, “আমাদের দ্রুত চলার আরেকটি কারণ ছিল, খবর এসেছে যে ইসরায়েলি জলদস্যুরা সামনের জাহাজ ‘আলমা’র দিকে এগিয়ে আসছে। এটাই তাদের কৌশল। আমাদেরটা সবচেয়ে বড নৌকা, আর আলমাকে আক্রমণ করে তারা আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে। কিন্তু আমরা ভীত হব না।”

“আমরা এই ঝড়ো রাতে বের হয়েছি একটি বার্তা দেওয়ার জন্য এবং গান গাওয়ার মাধ্যমে আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। আমরা জানি আপনিও আমাদের পাশে আছেন। উঠে দাঁড়ান। প্রতিরোধ করুন। ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে আমরা হাল ছাড়তে পারি না,” বলেন শহিদুল আলম।

নৌকা বহরের একেবারে শেষটাতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহিদুল আলম। আর ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে সামনের কয়েকটি। ফলে তিনি আটক হয়েছেন কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানে গাজার অন্তত ৬৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়ে জীবনের সঙ্গে লড়ছেন প্রায় দেড় লাখ। বহু শিশু অনাহার-অর্ধাহারে মায়ের কোলে মারা যাচ্ছে, কঙ্কালসার সন্তান প্রসব করছেন গাজার মায়েরা। আর সব বয়সি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে ধুকছে। 

শুরুর দিকে বিশ্ব সম্প্রদায় নিশ্চুপ থাকলেও কয়েক মাস হলো ইউরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিক ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সহ অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও। 

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থনে এখনো গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বিশ্বের অধিকারকর্মীরা যখন গাজা ফ্লোটিয়া নিয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এবং অধিকাংশ দেশ যখন এই ফ্লোটিলার পক্ষে রয়েছে, তখনো গাজায় নরহত্যা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল।

আলজাজিরার সবশেষ খবরে বলা হয়েছে, বুধবারও (১ অক্টোবর) গাজায় ৪৫ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

অবশ্য গাজা ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হানার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ইতালিতে বিশাল র‌্যালি হয়েছে। মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ইসরায়েলের নিন্দা করে অধিকারকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্লোটিলার কর্মীদের আটক করা ইসরায়েলি আগ্রাসনের নগ্ন রূপ: গণসংহতি আন্দোলন
  • ফ্লোটিলায় কেমন আছেন শহিদুল আলম?
  • গাজাবাসীর সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশের কেন এই বড় বিশ্বাসঘাতকতা
  • সুমুদ ফ্লোটিলার ‌‘মাত্র চারটি নৌকা’ এখন গাজার পথে
  • বুয়েটে স্নাতক শ্রেণির বিভিন্ন লেভেল বা টার্মের সংশোধিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ
  • ধাওয়া, গ্রেপ্তার সত্ত্বেও গাজা অভিমুখী যাত্রায় ‘অবিচল’ ফ্লোটিলা
  • ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%
  • গ্রেটা টুনবার্গসহ গাজা ফ্লোটিরার ২০০ জনকে আটক করেছে ইসরায়েল
  • ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থীর সাজা