জি এম কাদের ছাড়া আইনত অন্য কারও জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আইনি ব্যাখ্যায় দেখিয়েছেন, লাঙ্গল অন্য কারও নেওয়ার সুযোগ নেই।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। শামীম হায়দার বলেন, তাঁরা আশা করছেন, ইসি আইনের সঠিক ব্যাখ্যা করে ন্যায়বিচার করবে।

৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক। ওই সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করা হয়। পরদিন বিষয়টি ইসিকে লিখিতভাবে জানানো হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ইসির সঙ্গে বৈঠক করে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশের প্রতিনিধিদল।

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জি এম কাদেরের বিরোধীদের সম্মেলন বৈধ নয় দাবি করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, কিছু লোক সমাবেশ করলেই সেটা বৈধ কাউন্সিল হতে পারে না। এর আগেও আরেকটি গ্রুপ দশম সম্মেলন করেছিল। ওই সম্মেলনে থাকা তিনজন এবারও সম্মেলন করেছেন, তাঁরা দুবার দশম সম্মেলন করেছেন। জি এম কাদের ছাড়া অন্য কারও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ দলের গঠনতন্ত্র ও আইনে নেই। এরশাদের লাঙ্গল জি এম কাদেরের কাছেই আছে এবং থাকবে।

শামীম হায়দার বলেন, তাঁরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। তাঁরা আশা করেন, নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর ভোটের মাধ্যমে দেশে নতুন গণতন্ত্রের আলো ফুটবে। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারকে পুরোপুরি নিরপেক্ষ মনে করেন না। তবে তাঁরা ইসিকে নিরপেক্ষ দেখতে চান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামীম হায়দার বলেন, নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য যেসব শর্তের কথা আইনে আছে, তার কোনোটাতেই জাতীয় পার্টি পড়ে না। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি তোলা হচ্ছে, তা দুঃখজনক।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শামীম হায়দার বলেন, চরমোনাই (ইসলামী আন্দোলন) বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী অংশ নিয়েছিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে জামায়াত নেতাদের অনেকে নির্বাচিত হয়ে এখনো আছেন।

আরও পড়ুনআনিসুল-হাওলাদাররা জাপাকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন, অভিযোগ কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজারের১৩ আগস্ট ২০২৫

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখানে জাতীয় পার্টিকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। জাতীয় পার্টি ভোটে অংশ নিয়েছিল, অন্যরাও অংশ নিয়েছিল। শুধু ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য কাউকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে না। এটা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক। সব দল নিষিদ্ধ হয়ে গেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া ভোটে সরকার গঠিত হলে, সেটা টেকসই হবে না। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

আরও পড়ুননির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি চেয়ে আনিসুল-হাওলাদার কমিটির চিঠি১৩ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র র দ র বল ন ল ঙ গল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের

প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।

প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।

প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।

তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।

অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।

সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।

ইসরাত জাহান

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাংলাদেশ জাতীয় লীগ’: নিবন্ধন পেতে যাওয়া দল গঠনতন্ত্র দেখাতে চায় না
  • এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন
  • দল থেকে বহিষ্কৃত ওসমান পরিবারের দোসররা আপনার আশপাশে : টিপু 
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
  • পিআরের নামে জামায়াত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে: কায়সার কামাল