টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন মানবিক ও পরিবেশসচেতন চিন্তা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন দুর্যোগপ্রবণ ও পরিবেশঝুঁকিতে থাকা এলাকায় বাস্তব পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। 

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত ঘটনা। বিশেষ করে বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক চালু করেছে ‘ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স ব্যাগ’ বিতরণ কর্মসূচি। এই বিশেষ ব্যাগে রাখা হয় শুকনা খাবার, পানিশোধন ট্যাবলেট, জরুরি ওষুধ, স্যানিটারি প্যাড, টর্চলাইটসহ নানা প্রয়োজনীয় উপকরণ। দুর্যোগের সময় এসব সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক সহায়তা দেয়, যা দুর্যোগ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব কৃষিচর্চা প্রসারে কাজ করছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। বন্যাপ্রবণ এলাকায় কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে পানি সহনশীল বীজ, জৈব সার এবং প্রদান করা হচ্ছে টেকসই কৃষি প্রশিক্ষণ। এর ফলে কৃষকেরা পরিবেশের ক্ষতি না করে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে পারছেন। এটি শুধু টেকসই কৃষির পথ প্রশস্ত করছে না, বরং জলবায়ু–সহনশীলতা বৃদ্ধির দিক থেকেও একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পানির সংকটে থাকা এলাকায় বিদ্যালয়কেন্দ্রিক সুপেয় পানির ইউনিট স্থাপন করছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। উন্নত মানের ফিল্টার ও পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাসম্পন্ন এই ইউনিটগুলো থেকে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও উপকৃত হচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে একটি কমিউনিটি ওয়াটার হাবে (কেন্দ্র)। এটি একদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে সামাজিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বন্ধনও জোরদার করছে।

পরিবেশ রক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্য সামনে রেখে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে। এসব প্রতিযোগিতায় শিশুদের আঁকার মাধ্যমে উঠে আসে গাছ লাগানো, পানির অপচয় রোধ, প্লাস্টিক বর্জনের মতো পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ নানা বার্তা। শিশুদের মধ্যে পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলার এটি একটি সৃজনশীল ও কার্যকর উদ্যোগ। 

এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক ‘প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার বন্ধে সচেতন হচ্ছেন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন। এসব কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের পরিবেশবান্ধব জীবনের অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এসব উদ্যোগ শুধু করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ নয়; একই সঙ্গে এগুলো সমাজ, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল অঙ্গীকার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে এ কর্মসূচিগুলো হয়তো আকারে ছোট, কিন্তু প্রভাবের দিক থেকে গভীর ও সুদূরপ্রসারী। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বিশ্বাস করে, একটি ব্যাংক শুধু আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সমাজ গঠনের সক্রিয় ও অগ্রণী অংশীদার। 

 এ ছাড়া এমটিবি বিশ্বাস করে, সামাজিক দায়িত্ব শুধু এককালীন সহায়তায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাংকটি জয়বায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কমিউনিটিভিত্তিক পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচি, যেমন বনায়ন, নৌ ও জলাশয় রক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি শিশু–কিশোরদের সৃজনশীলতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আয়োজন করছে শিল্প ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যেখানে তারা শুধু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে না, বরং পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যবোধ
সম্পর্কেও শিখছে।

তাহমিনা জামান খান
হেড অব সাসটেইনেবিলিটি, এমটিবি 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ স রক ষ এল ক য প রবণ ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

সাতটি জেলার উপকরণে তৈরি হয়েছে গুলশান-বনানীর পূজামণ্ডপ

রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কে পা রাখতেই বাতাসে ভেসে আসে ধূপের গন্ধ, শোনা যায় ঢাকের আওয়াজ। পূজার দিনগুলোয় এই এলাকার নাগরিক কোলাহল খুঁজে নেয় অন্য রকম আনন্দ।

এবার গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপের সামনে পাওয়া গেল সোঁদা মাটির ঘ্রাণ; আঁচ করা গেল জলের ছন্দ, আগুনের শিখা, বাতাসের দোলা; আর ওপরে সুনীল আকাশ। সব মিলেমিশে তৈরি হয়েছে এক দারুণ আবহ।

পূজার দিনগুলোয় এই এলাকার নাগরিক কোলাহল খুঁজে নেয় অন্য রকম আনন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতটি জেলার উপকরণে তৈরি হয়েছে গুলশান-বনানীর পূজামণ্ডপ