দুর্যোগপ্রবণ ও পরিবেশঝুঁকিতে থাকা এলাকায় পরিবর্তন আসছে
Published: 14th, August 2025 GMT
টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন মানবিক ও পরিবেশসচেতন চিন্তা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন দুর্যোগপ্রবণ ও পরিবেশঝুঁকিতে থাকা এলাকায় বাস্তব পরিবর্তন এনে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত ঘটনা। বিশেষ করে বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক চালু করেছে ‘ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স ব্যাগ’ বিতরণ কর্মসূচি। এই বিশেষ ব্যাগে রাখা হয় শুকনা খাবার, পানিশোধন ট্যাবলেট, জরুরি ওষুধ, স্যানিটারি প্যাড, টর্চলাইটসহ নানা প্রয়োজনীয় উপকরণ। দুর্যোগের সময় এসব সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক সহায়তা দেয়, যা দুর্যোগ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব কৃষিচর্চা প্রসারে কাজ করছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। বন্যাপ্রবণ এলাকায় কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে পানি সহনশীল বীজ, জৈব সার এবং প্রদান করা হচ্ছে টেকসই কৃষি প্রশিক্ষণ। এর ফলে কৃষকেরা পরিবেশের ক্ষতি না করে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে পারছেন। এটি শুধু টেকসই কৃষির পথ প্রশস্ত করছে না, বরং জলবায়ু–সহনশীলতা বৃদ্ধির দিক থেকেও একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পানির সংকটে থাকা এলাকায় বিদ্যালয়কেন্দ্রিক সুপেয় পানির ইউনিট স্থাপন করছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। উন্নত মানের ফিল্টার ও পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাসম্পন্ন এই ইউনিটগুলো থেকে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও উপকৃত হচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে একটি কমিউনিটি ওয়াটার হাবে (কেন্দ্র)। এটি একদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে সামাজিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বন্ধনও জোরদার করছে।
পরিবেশ রক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্য সামনে রেখে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে। এসব প্রতিযোগিতায় শিশুদের আঁকার মাধ্যমে উঠে আসে গাছ লাগানো, পানির অপচয় রোধ, প্লাস্টিক বর্জনের মতো পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ নানা বার্তা। শিশুদের মধ্যে পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলার এটি একটি সৃজনশীল ও কার্যকর উদ্যোগ।
এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক ‘প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার বন্ধে সচেতন হচ্ছেন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন। এসব কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের পরিবেশবান্ধব জীবনের অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এসব উদ্যোগ শুধু করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ নয়; একই সঙ্গে এগুলো সমাজ, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল অঙ্গীকার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে এ কর্মসূচিগুলো হয়তো আকারে ছোট, কিন্তু প্রভাবের দিক থেকে গভীর ও সুদূরপ্রসারী। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বিশ্বাস করে, একটি ব্যাংক শুধু আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সমাজ গঠনের সক্রিয় ও অগ্রণী অংশীদার।
এ ছাড়া এমটিবি বিশ্বাস করে, সামাজিক দায়িত্ব শুধু এককালীন সহায়তায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাংকটি জয়বায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কমিউনিটিভিত্তিক পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচি, যেমন বনায়ন, নৌ ও জলাশয় রক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি শিশু–কিশোরদের সৃজনশীলতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আয়োজন করছে শিল্প ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যেখানে তারা শুধু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে না, বরং পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যবোধ
সম্পর্কেও শিখছে।
তাহমিনা জামান খান
হেড অব সাসটেইনেবিলিটি, এমটিবি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ স রক ষ এল ক য প রবণ ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূলীয় এলাকায় ২৮,৮০০টি গাছ লাগিয়েছে পূবালী ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর দেশের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব বা সাসটেইনেবল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে আসছে। পূবালী ব্যাংক প্রথম ২০২১ সালে এই তালিকায় স্থান পায়। দুই বছর পর ২০২৪ সালে আবারও ব্যাংকটি এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। নতুন করে আবারও পূবালী ব্যাংকের স্থান করে নেওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নেওয়া নানা ধরনের পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ—উভয় ক্ষেত্রেই সুশাসনের চর্চা রয়েছে। ব্যাংকের টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করতে একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ‘সাসটেইনেবল ফিন্যান্স কমিটি’ কাজ করে। এ ছাড়া প্রতিটি খাতের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে একাধিক উপকমিটি। এই কমিটিগুলো ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করে থাকে। কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেয়। সার্বিকভাবে কাজগুলো দেখভাল করে ব্যাংকের ‘সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ইউনিট’।
গত বছরের শুরু থেকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পূবালী ব্যাংক টেকসই অর্থায়ন, করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়নে মনোযোগ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সূচক; যেমন আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, খেলাপি ঋণ কমানো ও মূলধন পর্যাপ্ততা বজায় রাখতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার বিস্তারেও কাজ করছি আমরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডেটাবেজ তৈরি করা। পূবালী ব্যাংক নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ জন্য সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডেটাবেজকে মূল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা ও দেশব্যাপী যোগাযোগের কারণে পূবালী ব্যাংক বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে পূবালী ব্যাংক। যেমন ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আগামী অ্যাপারেলসে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছেন। বর্তমানে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করা এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অ্যাকর্ড স্ট্রাকচারাল সেফটি সনদ এবং মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ‘লিড গোল্ড’ সনদ পেয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে টেকসই খাতে ঋণ দিয়েছে পূবালী ব্যাংক।
টেকসই খাতে আরও নানা উদ্যোগ রয়েছে পূবালী ব্যাংকের। ২০২৪ সালে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয় ব্যাংকটি। তার অংশ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ৫৬৬টি এটিএম বুথের মধ্যে ৩০০টি এবং ৫০৮টি শাখার মধ্যে ৩২০টি শাখায় সোলার পাওয়ার সংযোগ স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সব শাখায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ‘থ্রি আর’ নীতি (রিডিউস, রিইউস, রিসাইকেল) বাস্তবায়ন, অনলাইনে ঋণ প্রস্তাব প্রেরণ, অনুমোদনসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমেও ব্যাংকটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গত বছর উপকূলীয় এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৮ হাজার ৮০০টি গাছ লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি ৬৬ হাজার ১৬৮ জন উপকারভোগীর মধ্যে সিএসআর তহবিল থেকে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। গ্রিন রি-ফিন্যান্সের প্রতিটি প্রকল্পেই পূবালী ব্যাংকের গ্রাহক পোর্টফোলিও রয়েছে।
বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকেরা ব্যাংকে না গিয়েই অর্থ স্থানান্তর, আরটিজিএস, বিইএফটিএন, বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, এফডিআর ও ডিপিএস ব্যবস্থাপনা, ঋণের আবেদনসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছেন।
সর্বোপরি শীর্ষ সাসটেইনেবল ব্যাংকের তালিকায় পূবালী ব্যাংকের অবস্থানের পেছনে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দূরদর্শী নির্দেশনা, গ্রাহকের আস্থা, সুশাসন, কোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে ধারাবাহিক সাফল্য ও শক্তিশালী টেকসই অর্থায়ন কাঠামো প্রভৃতি বিষয় কাজ করেছে।
চৌধুরী আবদুল ওয়াহীদ
প্রধান, সিএমএসএমই বিভাগ ও সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ইউনিট, পূবালী ব্যাংক