অনেক সফল উদ্যোক্তার গল্পে জড়িয়ে আছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নাম
Published: 15th, August 2025 GMT
সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে শুধু পুঁজি বা পরিকল্পনা নয়, প্রয়োজন হয় অদম্য সাহস, দূরদৃষ্টি আর কঠোর পরিশ্রমের। প্রতিকূল সময়েও সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকতে হয়। সফল উদ্যোক্তার এই সংজ্ঞা যদি খুঁজতে হয়, তাহলে নারায়ণগঞ্জের শফিকুল ইসলাম সেলিম হতে পারেন উজ্জ্বল উদাহরণ। নিষ্ঠা, দূরদৃষ্টি ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠান আজ দেশের বৈদ্যুতিক তারশিল্পের অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম।
শফিকুল ইসলামের পথচলাটা শুরু হয়েছিল অনেকটা শূন্য থেকে। সময়টা ১৯৯৪ সাল। পকেটে ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। সীমিত মূলধন ও স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়েই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভাড়া নেন একটি ছোট কারখানা। শুরু করেন বৈদ্যুতিক তার তৈরির কাজ। ওই সময় তিনি মাত্র ১৬ ধরনের বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করতেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২১ সালে শফিকুল ইসলাম ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রি নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সেই থেকে তাঁর ছোট ছোট প্রতিটি পদক্ষেপে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক আর্থিক পরামর্শক ও সহায়ক হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় প্রায় ২০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রির আধুনিক কারখানা। সেখানে এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন বছরে ৩০০ ধরনের বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করে এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে পরিবেশগত নীতিমালা বাস্তবায়ন অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রেও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সহায়তায় ইস্টার্ন কেবল ইএসডিডি (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডিউ ডিলিজেন্স) রেটিং ‘লো’ বা নিম্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন নীতিমালার আওতায় সাসটেইনেবল এমএসএমই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান।
কেরানীগঞ্জের শুঁটকিরটেক গ্রামের তরুণ মো.
আবার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান মো. জুয়েল রানার কথা ধরা যাক। জুয়েল রানা মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে অন্যের মতো চাকরি বা বিদেশে পাড়ি না দিয়ে ঠিক করলেন নিজেই কিছু করবেন। পৈতৃক জমি আর একটি পুরোনো গরুর খামারকে কেন্দ্র করে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ নিয়ে ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন ‘গ্রাম বাংলা অ্যাগ্রো ফার্ম’।
প্রথমে পাঁচ থেকে ছয়টি দেশি গরু দিয়ে ব্যবসা শুরু হলেও বর্তমানে বছরে ২০০ গরু বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর খামারে রয়েছে ৬০টির বেশি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভি। ডেইরি খাতের সফলতার পর তিনি পোলট্রি ও মৎস্য খাতের ব্যবসাতেও মনোযোগী হন। বর্তমানে তাঁর খামারে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মুরগির ডিম উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া প্রায় ১০ একর জায়গায় মাছ চাষ করছেন তিনি। তাতে সব মিলিয়ে বছরে তাঁর আয় হয় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
শফিকুল ইসলামের ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ কিংবা জুয়েল রানার গ্রাম বাংলা এগ্রো ফার্মের মতো এ রকম অসংখ্য সফল ও টেকসই উদ্যোগের গল্পে জড়িয়ে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নাম। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এভাবেই বিভিন্ন উদ্যোক্তার স্বপ্নের সারথি হয়ে কাজ করে চলেছে। হাজারো উদ্যোক্তার স্বপ্ন যখন পথে হাঁটতে শেখে, তখন পাশে থাকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নির্ভরতার হাত। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শুধু ঋণ দেয় না, এই ব্যাংক স্বপ্নে বিনিয়োগ করে।
ফরহাদ আহমেদ খান
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব এসএমই বিবিডি, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের বাংলাদেশ পর্ব কাল, বিজয়ী দল যাবে যুক্তরাষ্ট্রে
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের বাংলাদেশ পর্ব শুরু হচ্ছে আগামীকাল। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) আশুলিয়া ক্যাম্পাসে আয়োজিত ‘স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা ১৫টি স্টার্টআপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বাংলাদেশ পর্বে বিজয়ী দল পুরস্কার হিসেবে পাবে ৫০ হাজার টাকার বিনিয়োগ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সেসকোতে অনুষ্ঠেয় স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের গ্লোবাল ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে দলটি। স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপে চূড়ান্ত পর্বে সেরা দল পাবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার।
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বিশ্বজুড়ে মর্যাদাপূর্ণ স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত, যা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পেগাসাস টেক ভেঞ্চারসের উদ্যোগে ১০০টিরও বেশি দেশে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতা উদ্ভাবনী স্টার্টআপগুলোকে বিনিয়োগকারী, করপোরেট ব্যক্তিত্ব এবং প্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার একটি অনন্য সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগ।
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের বাংলাদেশ পর্বের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান মো. কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আশিক খান বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ধারণা প্রদর্শনের একটি অসাধারণ সুযোগ। আমরা দেশের সম্ভাবনাময় স্টার্টআপগুলোকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পেরে আনন্দিত।’
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ পর্বের চূড়ান্ত আসরে বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পেগাসাস টেক ভেঞ্চারসের পার্টনার উইলিয়াম রিচার্ট, এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজিম হাসান সাত্তার, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের পরিচালক নওশাদ মুস্তাফা, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শওকাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিউদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক রকিবুল কবির এবং এক্সক্লুসিভ ক্যান লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ নাসির।
বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম আর কবির এবং সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল।