সার্বক্ষণিক ইবাদত জিকির কেন করব, কীভাবে করব
Published: 15th, August 2025 GMT
জিকির আরবি শব্দ। এর মূল উচ্চারণ হলো ‘যিক্র’। বাংলা উচ্চারণে ‘যেকের’, ‘জেকের’, ‘যিকির’ ও ‘জিকির’ প্রচলিত, এর অর্থ হলো স্মরণ ও আলোচনা। যিক্র ধাতু থেকে যাকির বা জাকির শব্দের উৎপত্তি। এটিকে ব্যবহারিকভাবে যাকের বা জাকের রূপেও দেখা যায়। যাকের বা জাকের অর্থ স্মরণকারী, আলোচনাকারী। পরিভাষায় জিকির অর্থ হলো আল্লাহর যাত বা সত্তা ও সিফাত তথা গুণাবলি স্মরণ করা বা আলোচনা করা ও
চর্চা করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি জিকির বা আলোচনা করো, আলোচনা বা জিকিরে মুমিনদের উপকার হয়।’ (সুরা-৫১ আয–যারিয়াত, আয়াত: ৫৫)
কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘ওয়া আকিমিস সলাতা লিযিকরী’, অর্থাৎ ‘তোমরা আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো।’ (সুরা-২০ ত্বহা, আয়াত: ১৪)
জিকিরের তিনটি স্তর রয়েছে—মনে স্মরণ করা, মুখে উচ্চারণ করা ও কাজে বাস্তবায়ন করা।
মনে স্মরণ করা অর্থ হলো আল্লাহ তাআলার যাত ও সিফাতের ধ্যান করা। মুখে বলার মানে হলো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সিফাত বা গুণগান বর্ণনা করা। আমল বা কাজে বাস্তবায়ন অর্থ হলো সব কর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুম আহকাম তথা সব বিধিবিধান মেনে চলা। এই তিনের সমন্বয়েই জিকির পরিপূর্ণ হয় বা পূর্ণাঙ্গ জিকির হয়।
মৌখিক জিকিরের মধ্যে প্রথম হলো মাসনুন বা সুন্নাত দোয়াসমূহ যথাসময়ে, যথাস্থানে পাঠ করা। দ্বিতীয় হলো কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.
এর পাশাপাশি কোনো শাঈখ বা মুর্শিদ কর্তৃক প্রদত্ত শরিয়াহসম্মত অজিফাও এর অন্তর্ভুক্ত।
তাসাওউফের পরিভাষায় জিকির হলো সর্বদা আল্লাহর অস্তিত্বের উপস্থিতি অনুভব করা। এ অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সঙ্গেই অবস্থান করে তথা আল্লাহ বান্দার কলবে বা অন্তরে অবস্থান করে।
এ হলো তরিকতের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। হাদিস শরিফে আছে, ‘আশশায়তানু জাযিমুন আলা কলবি বানি আদম, ইযা যাকাল্লাহা খনাছা, ওয়া ইযা গফালা ওয়াছওয়াছা’, অর্থাৎ ‘শয়তান আদম সন্তানের কলবে ওত পেতে থাকে, যখন সে জিকির বা আল্লাহর স্মরণে থাকে, তখন সে দূরে সরে যায় আর যখন সে গাফিল বা উদাসীন হয়, তখন সে কুমন্ত্রণা দেয়।’ (মিশকাত: ২২৮১, বুখারি)
মৌখিক জিকির নিঃশব্দে বা সশব্দে করা যায়। নিঃশব্দ জিকিরকে বলা হয় জিকরে খফি। নামাজের মধ্যে আমরা নীরব বা সিররি এবং সরব বা জিহরি—উভয় প্রকার জিকির দেখতে পাই। কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবকে বিনয়ের সঙ্গে গোপনে নীরবে নিঃশব্দে ডাকো।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫) এক সাহাবি অত্যধিক জোরে জিকির করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি এমন আল্লাহকে ডাকছ না যিনি কানে কম শোনেন, যার কারণে তোমাকে উচ্চ রবে ডাকতে হবে।’ জিকরে খফি বা খফি জিকির তথা নীরবে নিঃশব্দে বা নিম্নস্বরে জিকির করাই উত্তম।
সশব্দে জিকির করাকে জিকরে জলি বলা হয়। জলি আরবি শব্দ, এর মূল উচ্চারণ হলো জালি। অর্থ প্রকাশ্য, স্পষ্ট ইত্যাদি। জিকরে জলি বা জলি জিকির বলতে বোঝায় মৌখিক জিকিরের সরব প্রয়োগ তথা উচ্চ স্বরে দোয়া–দুরুদ, তাসবিহ তাহলিল ও তিলাওয়াত ইত্যাদি আমল বা সম্পাদন করা। জিকরে জলি বা সশব্দে বা উচ্চ স্বরে জিকির করা জায়েজ হলেও এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। এক. কোনো ইবাদতকারীর
ইবাদতের বিঘ্ন না হওয়া; দুই. কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত না হওয়া ও তিন. কোনো অসুস্থ ব্যক্তির অস্বস্তির কারণ না হওয়া। (লিসানুল আরব, আল মুজামুল ওয়াসিত, ফিরুজুল্লুগাত, লুগাতে কিশওয়ারি, গিয়াসুল্লুগাত, ফারহাঙ্গে রব্বানী, বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ক র কর আল ল হ ক রআন স মরণ
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় পেট্রল ঢেলে আগুন
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন শাখা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার ভোরে গ্রামীণ ব্যাংকের ওই শাখা ভবনের বারান্দায় পেট্রল আগুন দেওয়া হয়। এতে ব্যাংকের বৈদ্যুতিক তার পুড়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া বারান্দায় একটি ব্যানার, ক্যারম বোর্ড ও আসবাব আগুনে পুড়ে যায়।
ধুনট থানা-পুলিশ ও গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, আজ ভোরে দুর্বৃত্তরা গ্রামীণ ব্যাংকের ওই শাখার কার্যালয়ের বারান্দায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বালু ও পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর-ধুনট সার্কেল) সজীব শাহরীন ও ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ব্যাংকের নৈশপ্রহরী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে বারান্দায় সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ বারান্দায় আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাই। দুর্বৃত্তরা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’
শাখাটির ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, রাতে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকা নৈশপ্রহরী সামান্য সময়ের জন্য বারান্দা থেকে একটি কক্ষের ভেতরে যান। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা বারান্দায় অগ্নিসংযোগ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে বড় রকমের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আগে থেকেই বালু ও পানি মজুত ছিল। আজ সকাল থেকে যথারীতি ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে।
ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব শাহরীন বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ধুনট থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।