জিকির আরবি শব্দ। এর মূল উচ্চারণ হলো ‘যিক্র’। বাংলা উচ্চারণে ‘যেকের’, ‘জেকের’, ‘যিকির’ ও ‘জিকির’ প্রচলিত, এর অর্থ হলো স্মরণ ও আলোচনা। যিক্র ধাতু থেকে যাকির বা জাকির শব্দের উৎপত্তি। এটিকে ব্যবহারিকভাবে যাকের বা জাকের রূপেও দেখা যায়। যাকের বা জাকের অর্থ স্মরণকারী, আলোচনাকারী। পরিভাষায় জিকির অর্থ হলো আল্লাহর যাত বা সত্তা ও সিফাত তথা গুণাবলি স্মরণ করা বা আলোচনা করা ও
চর্চা করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি জিকির বা আলোচনা করো, আলোচনা বা জিকিরে মুমিনদের উপকার হয়।’ (সুরা-৫১ আয–যারিয়াত, আয়াত: ৫৫)

কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘ওয়া আকিমিস সলাতা লিযিকরী’, অর্থাৎ ‘তোমরা আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো।’ (সুরা-২০ ত্বহা, আয়াত: ১৪)

জিকিরের তিনটি স্তর রয়েছে—মনে স্মরণ করা, মুখে উচ্চারণ করা ও কাজে বাস্তবায়ন করা।

মনে স্মরণ করা অর্থ হলো আল্লাহ তাআলার যাত ও সিফাতের ধ্যান করা। মুখে বলার মানে হলো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সিফাত বা গুণগান বর্ণনা করা। আমল বা কাজে বাস্তবায়ন অর্থ হলো সব কর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুম আহকাম তথা সব বিধিবিধান মেনে চলা। এই তিনের সমন্বয়েই জিকির পরিপূর্ণ হয় বা পূর্ণাঙ্গ জিকির হয়।

মৌখিক জিকিরের মধ্যে প্রথম হলো মাসনুন বা সুন্নাত দোয়াসমূহ যথাসময়ে, যথাস্থানে পাঠ করা। দ্বিতীয় হলো কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলেছেন, ‘কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদত।’ (বুখারি) এরপর হলো অন্যান্য নফল দোয়া–দরুদ, তাসবিহ তাহলিল, তাকবির তাকদিস ইত্যাদি, যা কোরআন–সুন্নাহ দ্বারা অনুমোদিত।

এর পাশাপাশি কোনো শাঈখ বা মুর্শিদ কর্তৃক প্রদত্ত শরিয়াহসম্মত অজিফাও এর অন্তর্ভুক্ত।

তাসাওউফের পরিভাষায় জিকির হলো সর্বদা আল্লাহর অস্তিত্বের উপস্থিতি অনুভব করা। এ অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সঙ্গেই অবস্থান করে তথা আল্লাহ বান্দার কলবে বা অন্তরে অবস্থান করে।

এ হলো তরিকতের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। হাদিস শরিফে আছে, ‘আশশায়তানু জাযিমুন আলা কলবি বানি আদম, ইযা যাকাল্লাহা খনাছা, ওয়া ইযা গফালা ওয়াছওয়াছা’, অর্থাৎ ‘শয়তান আদম সন্তানের কলবে ওত পেতে থাকে, যখন সে জিকির বা আল্লাহর স্মরণে থাকে, তখন সে দূরে সরে যায় আর যখন সে গাফিল বা উদাসীন হয়, তখন সে কুমন্ত্রণা দেয়।’ (মিশকাত: ২২৮১, বুখারি)

মৌখিক জিকির নিঃশব্দে বা সশব্দে করা যায়। নিঃশব্দ জিকিরকে বলা হয় জিকরে খফি। নামাজের মধ্যে আমরা নীরব বা সিররি এবং সরব বা জিহরি—উভয় প্রকার জিকির দেখতে পাই। কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবকে বিনয়ের সঙ্গে গোপনে নীরবে নিঃশব্দে ডাকো।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫) এক সাহাবি অত্যধিক জোরে জিকির করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি এমন আল্লাহকে ডাকছ না যিনি কানে কম শোনেন, যার কারণে তোমাকে উচ্চ রবে ডাকতে হবে।’ জিকরে খফি বা খফি জিকির তথা নীরবে নিঃশব্দে বা নিম্নস্বরে জিকির করাই উত্তম।

সশব্দে জিকির করাকে জিকরে জলি বলা হয়। জলি আরবি শব্দ, এর মূল উচ্চারণ হলো জালি। অর্থ প্রকাশ্য, স্পষ্ট ইত্যাদি। জিকরে জলি বা জলি জিকির বলতে বোঝায় মৌখিক জিকিরের সরব প্রয়োগ তথা উচ্চ স্বরে দোয়া–দুরুদ, তাসবিহ তাহলিল ও তিলাওয়াত ইত্যাদি আমল বা সম্পাদন করা। জিকরে জলি বা সশব্দে বা উচ্চ স্বরে জিকির করা জায়েজ হলেও এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। এক. কোনো ইবাদতকারীর
ইবাদতের বিঘ্ন না হওয়া; দুই. কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত না হওয়া ও তিন. কোনো অসুস্থ ব্যক্তির অস্বস্তির কারণ না হওয়া। (লিসানুল আরব, আল মুজামুল ওয়াসিত, ফিরুজুল্লুগাত, লুগাতে কিশওয়ারি, গিয়াসুল্লুগাত, ফারহাঙ্গে রব্বানী, বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ক র কর আল ল হ ক রআন স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীনতা দিবসের সকালে পশ্চিমবঙ্গের সড়কে ঝরল ১০ প্রাণ

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিনের সকালে পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন; আহত হয়েছেন ৩৫ জন, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের বর্ধমানের নবাব-হাট ফাগুপুর এলাকায় সকাল ৭টায় এই দুর্ঘটনা হয়। 

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয় ভারত।

আরো পড়ুন:

রোডক্র্যাশে বেশি মারা যাচ্ছে তরুণরা

ঝিনাইদহের সড়কে ঝরল ২ শিক্ষার্থীর প্রাণ

দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি হুগলি জেলার তারকেশ্বর থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময় জাতীয় সড়কের ওপর ফাগুপুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রাকের পেছন ধাক্কা  দেয় বাসটি।

ধাক্বায় বাসের সামনের দিকের অংশ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। দুর্ঘটনা স্থল থেকে ৪৫ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে, যাদের ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে অন্তত ৬০ জন যাত্রী ছিলেন। সবাই বিহারের বাসিন্দা। পুজা দিতেই সবাই পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। ফেরার সময়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সার্ভিস লেন থাকা সত্ত্বেও জাতীয় সড়কের ওপরেই লরিগুলো বিপদজনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ এলাকার মানুষের। 

এদিন সকালেও একইভাবে ওই লরি দাঁড়িয়ে ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন। দুর্ঘটনার পর জাতীয় সড়কে তীব্র যানজট হয়। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যা পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ