১০-১২ বছরের মধ্যে নগদ অর্থবিহীন বাংলাদেশ সম্ভব: ব্রেট কিংয়ের ভবিষ্যদ্বাণী
Published: 15th, August 2025 GMT
শুধু নগদ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে কখনোই দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবায় আনা যাবে না; বরং মোবাইলভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা ও ডিজিটাল পরিচয়ভিত্তিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই নগদ অর্থ–নির্ভরতা কাটিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ব্যাংকার্স মিট ২০২৫-এ এসব কথা বলেন বিশ্বখ্যাত ফিনটেক বিশেষজ্ঞ ও ভবিষ্যৎবিদ ব্রেট কিং। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
ব্রেট কিং আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ও প্রশাসনিক নানা সংকট মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।
দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকার্স মিট অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ফিলপস লিমিটেড। এতে সহযোগিতা করে সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
ব্যাংকার্স মিটে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেতারাসহ জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে ব্রেট কিং বলেন, চীন ২০১২ সালে বাংলাদেশের মতোই ছিল নগদ অর্থনির্ভর অর্থনীতির দেশ। এখন দেশটিতে খুচরা লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার ১ শতাংশের কম। বাংলাদেশও চাইলে একই পরিবর্তন ১০-১২ বছরের মধ্যে সম্ভব। তবে এ জন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন, কম দামে স্মার্টফোনের প্রাপ্যতা ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগকে তিনি প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
ব্রেট কিং বলেন, কেবল নগদ লেনদেন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগদ অর্থ দিয়ে কেউ ডেটা সেন্টারের সার্ভারের সময় কিনতে পারবে না, ড্রোন ওড়াতে পারবে না কিংবা স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক যান চালাতে পারবে না।
ডিজিটাল রূপান্তরের কৌশল নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ব্রেট কিং বলেন, বড় ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানিতে রূপান্তরিত হতে হবে। অথবা আলাদা ডিজিটাল ব্যাংক চালু করে সেখান থেকে ধীরে ধীরে গ্রাহক স্থানান্তর করতে হবে।
সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংকের উদাহরণ দিয়ে ব্রেট কিং বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বোর্ড থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত সবার মধ্যে উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে তুলে সফলভাবে ডিজিটাল রূপান্তর ঘটিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে প্রতারণা রোধে প্রযুক্তির ভূমিকা কতটুকু, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রেট কিং বলেন, বর্তমান সময়ে ৮০ শতাংশ জালিয়াতি ঘটে সামাজিক প্রকৌশল বা পুরোনো প্রমাণীকরণ পদ্ধতির দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে। ব্যক্তির স্বাক্ষরকে (সিগনেচার) ১০০ বছর ধরে নিরাপদ মনে করা হয় না। অথচ এখনো এটিকে নিরাপত্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁর মতে, বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ ও উন্নত এআইভিত্তিক প্রতারণা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিই ভবিষ্যতের সমাধান।
ব্রেট কিং ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব প্রধান আর্থিক অবকাঠামো প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাবে। যারা সময়মতো ডিজিটাল রূপান্তরে ব্যর্থ হবে, তাদের অনেকেই টিকে থাকতে পারবে না, অনেক ব্যাংক একীভূত বা অধিগৃহীত হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে ‘ব্যাংক’ ধারণাটি ১৯৯০ বা ২০০০ দশকের ব্যাংকের সঙ্গে মিলবে না। সবই হবে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা কাঠামোর প্রতিষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা (সিবিডিসি) কেন জনপ্রিয় হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন করেন একজন। জবাবে ব্রেট কিং বলেন, স্থানীয় বাজারে খুচরা লেনদেনে সিবিডিসির সাফল্য কম। তবে আন্তসীমান্ত বাণিজ্যে এটি কার্যকর হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বা আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশ সিবিডিসির ব্যবহার বাড়াতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মাসরুর আরেফিন বলেন, বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপগুলোর সংখ্যা হাতে গোনা, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
মাসরুর আরেফিন বলেন, কয়েকটি ব্যাংক ডিজিটালভাবে এগিয়ে থাকলেই চলবে না। সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আন্তসংযোগ শুধু ট্রেজারি বা পেমেন্ট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এপিআই শেয়ারিংও এখন বাস্তবতা। যদি সব ব্যাংক সমানভাবে ডিজিটালি অগ্রসর হয়, তবে তা গোটা শিল্পের জন্যই ভালো হবে।
ফিলপসের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার তুষার হাসান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে আমাদের সমাধানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।’
সমাপনী বক্তব্যে ফিলপসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিশ্বাস ধাকাল বলেন, ফিলপস উদীয়মান বাজারে বছরের পর বছর সফলতার মাধ্যমে অর্জিত প্রযুক্তি ও পরিচালন দক্ষতার সমন্বয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে এখানে থাকতে চান। ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শিল্পের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে ডিজিটাল রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে চান।
অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের সঙ্গে নতুন অংশীদারত্বের ঘোষণা দেয় ফিলপস। সিটি ব্যাংকের জন্য এই সহযোগিতার আওতায় তাদের ফ্ল্যাগশিপ সিটি টাচ ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা হবে। যাতে আরও স্মার্ট ও নিরবচ্ছিন্ন গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে এবি ব্যাংকের অংশীদারত্বের মাধ্যমে চালু হবে ডিজিটাল ন্যানো লোন সুবিধা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড জ ট ল র প ন তর অন ষ ঠ ন অবক ঠ ম ল নদ ন আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
মহিউদ্দিন রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবির আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দির রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় এ অভিযোগ করেন।
শুক্রবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের যাচাই চলছে। এরপর আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগে ১২ জনের নাম উল্লেখ আছে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’’
অভিযুক্তরা হলেন- আন্দোলনের প্রধান নেতা মহিউদ্দিন রনি (৩০), রাকিন (২৫), সুনান (২৪), সিফাত (২৩), শামিম (২৫), আল মুসা (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেত্রী সিফা (২২), হাসপাতালে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থী দাইয়ান (২১), কনটেন ক্রিয়েটর কাফি (৩০), এইচ এম আবুল খায়ের (৫০), হাসপাতালের দালাল নুরুন নাহার (৪০) ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. সিয়াম (৩৮)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশের দাবিতে হাসপাতালের গেটের সামনে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় অভিযুক্তরা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় মহিউদ্দিন রনি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রফিকুল পাটোয়ারীর মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।
এ ছাড়াও ২-১১ নম্বরসহ অজ্ঞাত অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্য হাতে থাকা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে ২-১১ নম্বর সাক্ষীদের এলোপাথারী আঘাত করে। এতে অফিস সহায়ক পারভেজ, আয়া সেলিনা, অফিস সহায়ক রাব্বি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী শামীস আহত হন।
এ ছাড়াও তাদের হামলায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসান, সাকিব, জাকারিয়া রুবেল, অফিস সহায়ক ফয়সাল রাব্বি, আয়া সুমরত মন্ডল, লিফট অপারেটর শাকিলসহ মানবন্ধনে অংশ নেওয়া আরো অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন। এমনকি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারী নার্স এবং আয়াদের শ্লিলতাহানী করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপ-পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান শাহীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর।
অপরদিকে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হামলার ঘটনা নিয়ে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দির রনি। তিনি অভিযোগ করেন হাসপাতালের কর্মচারী নামধারীরা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে হামলা করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিতে এ হামলার ঘটনায় তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
পলাশ//