সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকার মাকসুদুল হাসান জনি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এসময় নিহতের পিতা শুক্কুর আলী ও স্ত্রী ইভা আক্তার সহ স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) জুম্মার পর নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় অংশে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনকালে সড়ক অবোধের ফলে প্রায় ৩০ মিনিট যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এসময় তারা জনি হত্যার রহস্য উদঘাটন, খুনিদের ফাঁসি, ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার সহ নানা শ্লোগান দেন।

এসময় নিহতের স্ত্রী ইভা আক্তার বলেন, জনি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম, সেকেন্ড অফিসার মাহবুব হাসান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বজলুর রহমানকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে আজকের এই বিক্ষোভ-মানববন্ধন। 

তিনি বলেন, আমার স্বামী মাকসুদুল হাসান জনিকে গত মাসের ১৫ জুলাই মারা হয়েছে। তার লাশ পাই ১৮ জুলাই। আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করতে যাই। তবে মামলা করার আগেই আমাদের লোকজন নাইটগার্ড আলমগীর, তার ছেলে ইমন ও স্থানীয় যুবক আকাশ নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। 

আমার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার আগমুহুর্তে ইমন তাকে দুইবার খুঁজতে বাড়িতে আসে। মামলার তন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বজলুর রহমান আমাদের জানায় দারোয়ান আলমগীর আদালতে স্বীকারোক্তী দিয়ে যাদের নাম বলেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। অথচ আমার শ^শুড়সহ আমরা মামলায় যাদের নাম দিতে চেয়েছি পুলিশ তাদের নাম দেয় নাই। 

আমার শ^শুড় বার বার বলেছে নিখোঁজের আগে ইমন আমার ছেলেকে দুইবার বাসায় এসে খুঁজে গেছে। তাকে আসামি করেন নাই কেন। এস আই বজলুর রহমান বলেন, আলমগীর জবাববন্দিতে যাদের নাম বলেছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে ওসি স্যারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। পরে ইমনকে অন্য একটি মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ।

আমাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় নাই। আমাদের কোন কথাই শুনে নাই পুলিশ। পরে এস আই বজুলর রহমান তদন্ত করতে এপার্টমেন্টে আসে। আমি ছাদ থেকে ওনাকে এপার্টমেন্টের আশপাশের ৬-৭টি সিসি টিভির ক্যামেরা দেখিয়ে বলেছি এগুলোর ভিডিও দেখতে কিছু তথ্য পেতে পারেন। 

তখন এস আই বলেন, আমরা তো ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জানতেই পেরেছি আসামি কে। সিসি টিভি দেখে লাভ নাই। তাছাড়া আসামী আসিফ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করে আমাদের বলে আসিফকে পাইছেন? এরপর এজাহারভুক্ত আসামি সাগরের সন্ধান পাই সানারপাড়ে রিহাব সেন্টারে। 

হত্যাকান্ড ঘটিয়ে সে ওখানে ভর্তি হয়েছে। ৪ আগস্ট এস আই বজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি বলেন, র‌্যাব কর্মকর্তা রাজিবকে জানাতে। আমি রাজিব সাহেবকে জানাই। ৭ তারিখ পর্যন্ত তাদেরকে আসামির অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করি। কিন্তু তারা কোন প্রদক্ষেপ নেই নাই। পরে আসামি সাগরের পরিবার টের পেয়ে ৮ আগস্ট রিহাব সেন্টার থেকে সাগরকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শতভাগ শিউর পুলিশ আসামি সাগরকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) থানায় গিয়ে এস আই বজলুর রহমানে কাছে সাগরের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেন। 

পরে আমি আমার স্বামীর পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট এর বিষয় জানতে চাইলেও এস আই বজলুর রহমান আজেবাজে কথা বলে থানা থেকে বের করে দেয়। আমার স্বামী কেনে মাররো, কারা মারলো আমরা এখনো কিছুই জানতে পারি নাই। এর সুষ্ঠ বিচার চাই। 

তিনি আরও বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত মার্ডার। অথচ ওসি শাহীনুর আলম, সেকেন্ড অফিসার মাহবুব হাসান, তদন্তকারী কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন এটা চুরির ঘটনা। চুরির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে জনিকে। পুলিশ জনি হত্যা মামলা নিয়ে যথেষ্ট গাফলতি করতেছে। আমরা ওসি সহ তিন পুলিশ কর্মকতার প্রত্যাহার চাই।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর জানায়, ওই হত্যাকান্ডের ৭ আসামিদের মধ্যের ৪ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। বাকিদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। চুরি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যা হয়েছিল বলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামি দারোয়ান। 

মামলায় অবহেলা এবং আসামিদের বাঁচানোর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলে, মামলা হবার পর থেকে ভিকটিম পিতা (বাদী) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দায়িত্ববার পাওয়া অফিসার যদি অবহেলা কররে থাকো তারা আমাকে তো অন্তত জানাতে পারতো।

এরপরও যদি তাদের মনে হয় আরও আসামি করা উচিত সেটার জন্যেও তো তদন্ত রয়েছে। তারা তো যোগাযোগই করে না। এই মানববন্ধন অন্য খেলা, জমিজমাসহ রাজনৈতিক কিছু বিষয়াদি রয়েছে যা এটাকে ইস্যু করছে।

উল্লেখ্য, নিখোঁজের তিন দিন পর গত ১৮ জুলাই দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকার নির্মাণাধীন তাকওয়া ভবনের লিফটের নীচে নর্দমা পানিতে মাকসুদুল হাসান জনির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন ১৯ জুলাই জনির পিতা শুক্কুর আলী ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: হত য স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন র হত য ক ন ড আম র স ব ম কর মকর ত সহ ত ন আম দ র আগস ট তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভাকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। মানববন্ধন থেকে এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানানো হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। এতে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযান, ব্লাস্ট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও নারী প্রগতি সংঘের সদস্যরা।

মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, এখনো ধর্ষণের মামলা করতে গেলে নির্যাতনের শিকার নারীকে আলামত দিতে হয়। নির্যাতনের শিকার নারী কেন আলামত দেবে? ধর্ষণকারী প্রমাণ করবে তিনি ধর্ষণ করেছেন কি করেননি।

ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, পাহাড়ি আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়ে একধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি তৈরি করা হচ্ছে। এর দায়ভার কে নেবে?

মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, খাগড়াছড়িতে ন্যায়বিচার না পেয়ে যখন এলাকাবাসী ফুঁসে উঠল, তখন দেখা গেল প্রতিবাদকারীদের ওপরই হামলা চালানো হলো, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঘটল। কিন্তু একটি নিরীহ কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কোথায় ছিল—এ প্রশ্ন আজ সবার মনে জেগে উঠেছে।

মালেকা বানু আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে যারা প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা জরুরি।

মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, ‘সব খবর পত্রিকায় আসে না। পাহাড়ের নারী ও মেয়েরা সহজে ধর্ষণের শিকার হন। যেকোনো বয়স ও ধর্মের নারী হামলার শিকার হলেই মহিলা পরিষদের সদস্যরা এখানে প্রতিবাদ করতে আসি। কিন্তু এসব ঘটনার প্রতিকার হচ্ছে না।’

নারী প্রগতি সংঘের সেলিনা পারভিন বলেন, ‘গত এক বছরে এ ধরনের কত ঘটনা ঘটেছে, আপনারা কেউ বলতে পারেন? অথচ আপনারা দেশ পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। খাগড়াছড়িতে যে ঘটনা ঘটেছে, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে। আমরা এমন দেখতে চাই না।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম এবং ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যবসায়ীর উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ ঘোষণার দাবিতে ব্লকেড, মানববন্ধন
  • কুমিল্লায় ড্যাবের এক নেতার বিরুদ্ধে আরেক নেতার অনুসারীদের মানববন্ধন
  • আঁখির অতিথি সৈয়দ আবদুল হাদী
  • দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক: মির্জা ফখরুল 
  • কাশিপুরে বিএনপি নেতা আলমগীর ও সাইদুর গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সংঘর্ষের আশঙ্কা
  • হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৪১ জেলার ৪৩৮টি স্থানে
  • খুবির অধীনে মৎস্য বীজ খামার অন্তর্ভুক্তির দাবি
  • খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
  • স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে বিতণ্ডা, কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে প্রথম স্ত্রী আটক