ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাজি হয়েছেন। রোববার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। এটিকে মোড় বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় বৈঠক করেন ট্রাম্প ও পুতিন। ওই বৈঠক থেকে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি। কোনো চুক্তি ছাড়াই মস্কো ফিরে যান পুতিন। আর কয়েক দিন আগেও দ্রুত যুদ্ধবিরতির কথা বলা ট্রাম্প সুর বদলে বলেন, যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি রাশিয়া ও ইউক্রেনকে করতে হবে।

এরপর সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা যোগ দেবেন। তাঁদের আহ্বান—যুদ্ধ বন্ধের কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে যেন ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে পুতিনের রাজি হওয়ার বিষয়টি সামনে আনলেন উইটকফ। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়টিতে রাজি হয়েছেন পুতিন। একে আমি মোড় বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করব।’

উইটকফ বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলো অনুচ্ছেদ–৫–এর মতো ভাষা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে।’ অনুচ্ছেদ–৫ বলতে উইটকফ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিধানের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা বুঝিয়েছেন।

এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জোটের কোনো সদস্যদেশ আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরা তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। অনেক আগে থেকেই ন্যাটোর সদস্য হতে চায় ইউক্রেন। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাশিয়ার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা।

সোমবার ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠক থেকে ভালো কিছুর আশা করছেন স্টিভ উইটকফ। তিনি বলেন, আলাস্কা থেকে ফেরার পথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খুঁটিনাটি আলাপ হয়েছে। ওয়াশিংটনে সোমবারের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউক র ন র অন চ ছ দ ন শ চয়ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

গাজার জন্য কি ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ফিলিস্তিনি গণহত্যা থামিয়ে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আসবে—এমন কোনো বাস্তব আশার কারণ কি আছে? এ প্রশ্নই অনেকের মনে ঘুরছে।

আগের মতো এবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ব্যবসায়িক অংশীদার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গাজায় শান্তি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আগে যেমন তাঁদের আশাবাদ ভুল প্রমাণিত হয়েছিল, এবার তা হবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?

আমি মনে করি, দুটি বড় ঘটনা এবার বাঁকবদল বিন্দু হতে পারে।

প্রথমটি হলো কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যদিও ইসরায়েল হামাস নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এ ঘটনা বড় আকারে আলোচিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পশ্চিমা মিত্রদের কয়েকটি দেশ (যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া) অবশেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথাও বলেছে।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র (যারা কাতারের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বে আছে এবং সেখানে তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে) শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ হামলার বিষয়ে কিছু জানত না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তাঁদের মতে, হামাস নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র ঘটনাটির দায় থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র তাদের এক মিত্রের ওপর হামলার নিন্দা করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে ইসরায়েলের ‘শত্রুদের যেকোনো জায়গায় টার্গেট করার অধিকার’ আছে বলে সাফাই দিয়েছে।

মূলত কাতারে ইসরায়েলি হামলায় আরব বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ভয়ংকর রূপ নেয়। উপসাগরীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ন্যায্যতা দিত এ যুক্তি দিয়ে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তার ঢাল। কিন্তু ইসরায়েল যখন কাতারের ওপর হামলা করল, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হলো যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এ সুরক্ষা আসলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা মূলত ইরান, ইয়েমেনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ কিংবা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ঠেকানোর জন্য কাজে লাগে। অর্থাৎ ইসরায়েল যদি হামলা করে, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আরব দেশগুলোকে রক্ষা করবে না। এটাই আরব বিশ্বের চোখে এক ভয়ংকর বাস্তবতা হিসেবে ধরা দিল।

আরও পড়ুনগাজা এখন ইসরায়েলের ভিয়েতনাম২২ মে ২০২৫

দ্বিতীয় বড় ঘটনা হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পশ্চিমা মিত্রদের কয়েকটি দেশ (যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া) অবশেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথাও বলেছে।

প্রথম বড় অগ্রগতি দেখা যায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প যখন মিসর, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর থেকেই উইটকফ ও অন্যান্য সূত্র যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের কথা বলতে শুরু করে।

এ বৈঠকের পর থেকেই মার্কিন মধ্যস্থতাকারী উইটকফ এবং অন্যরা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এখানে ‘বন্দিবিনিময়’ বলা হলেও বাস্তবে এটি অসম। কারণ, ইসরায়েল অনেক বেশিসংখ্যক বন্দীকে আটকে রেখেছে, আর অন্য পক্ষের কাছে সংখ্যাটা কম।

আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫

এরপর ট্রাম্প দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সবচেয়ে আলোচিত ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক। সেখানে ট্রাম্প তাঁদের ‘গ্রেট’ বলে উল্লেখ করেন এবং একসঙ্গে ‘থাম্বস আপ’ ছবিও তোলেন। যদিও বৈঠক শেষে দুই পক্ষই কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।

তবু ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিকদের মাধ্যমে কিছু তথ্য ফাঁস হয়। সেখান থেকে ধারণা পাওয়া যায়, যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, বন্দিবিনিময় হয় এবং ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনারা সরে যান, তাহলে পাকিস্তান হয়তো গাজায় নিরাপত্তা তদারকির জন্য একটি বহুজাতিক মুসলিম রাষ্ট্রের বাহিনীর অংশ হবে।

আরও কিছু পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া, মার্কিন–সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ ভেঙে দেওয়া (যা আসলে খাবার বিতরণের নামে ফিলিস্তিনিদের হত্যা ফাঁদে ফেলছিল) এবং যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে একটি নিশ্চয়তা দেওয়া যে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েল দখল করবে না।

আব্বাস নাসির ডন–এর সাবেক সম্পাদক

ডন পত্রিকা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজার জন্য কি ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে