মহালয়া: পূর্বপুরুষদের স্মরণ ও শ্রদ্ধার তিথি
Published: 21st, September 2025 GMT
পলাতক বর্ষার ছায়া ক্ষুদ্র হওয়ার মুখেই আকাশে–বাতাসে শরতের আগমনী গীত বাজতে শুরু করে। বাংলার এমন চোখজুড়ানো রূপ দেখে রবীন্দ্রনাথ শরৎবন্দনার গানে লিখেছিলেন, ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি।’
বর্ষার ঘনঘটার পর তখন মন–কেমনের ছুটির ঘণ্টা যেন বাজতে থাকে। কাশফুলের শুভ্রতায় ভরে ওঠে মাঠঘাট। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত অঙ্গন এই সময়ে ভরে রাখে। জাতপাত–ধর্মের বালাই সেখানে কাজ করে না। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই মিলে শরৎ-আলোর ভোরে ভেজা শিউলির খোঁজ করে। এই শরৎকালেই বাঙালি সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্গাপূজা সাধারণত দেবীপক্ষে পালিত হয়ে থাকে। দেবীপক্ষের আগের পক্ষটি হলো পিতৃপক্ষ। আর এ দুই পক্ষের সন্ধিক্ষণটির নাম মহালয়া। দেবীপক্ষের সূচনাকাল থেকেই দুর্গাপূজার শুরু।দুর্গাপূজা সাধারণত দেবীপক্ষে পালিত হয়ে থাকে। দেবীপক্ষের আগের পক্ষটি হলো পিতৃপক্ষ। আর এ দুই পক্ষের সন্ধিক্ষণটির নাম মহালয়া।
দেবীপক্ষের সূচনাকাল থেকেই দুর্গাপূজার শুরু। কিংবদন্তি আছে, দেবী দুর্গা এদিন পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।
এদিকে আবার পিতৃপক্ষের শেষ প্রহরে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে ‘জলদান’ বা তর্পণ করার রীতি পালিত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। সূর্য ওঠার সময়, অর্থাৎ ব্রহ্মমুহূর্ত থেকে আশপাশের নদ–নদী, কিংবা জলাশয়ে বুকজলে দাঁড়িয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে শুরু হয়ে যায় জলদান।
আরও পড়ুনদুর্গাদেবীর আগমনী সংগীতই মহালয়া০২ অক্টোবর ২০২৪মহালয়ার বিষয়ে অনেক রকমের পৌরাণিক কাহিনির জনমানসে প্রচলিত আছে। সনাতন পঞ্জিকামতে, পরিবারের মৃত সদস্যদের শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার জন্য নিবেদিত একটি উল্লেখযোগ্য সময় হলো পিতৃপক্ষ।
সময়টি সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবিত ও বিদেহী আত্মার সঙ্গে গভীর সংযোগের অলৌকিক বিশ্বাস এখানে প্রতিফলিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই পবিত্র তিথিতে নিজেদের পূর্বপুরুষকে স্মরণ করেন, জলদান করে শ্রদ্ধা জানান, আশীর্বাদস্বরূপ রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
সনাতনীরা বিশ্বাস করেন, পিতৃপক্ষে প্রয়াতদের আত্মা নিজ নিজ বংশধরদের জীবনকে প্রভাবিত করে। এ সময়ে নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও নৈবেদ্য সমর্পণ করার মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর—এ দুই পুরুষের মধ্যে শান্তি ও মঙ্গল নিশ্চিত হয়।
সনাতনীরা বিশ্বাস করেন, পিতৃপক্ষে প্রয়াতদের আত্মা নিজ নিজ বংশধরদের জীবনকে প্রভাবিত করে। এ সময়ে নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও নৈবেদ্য সমর্পণ করার মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর—এ দুই পুরুষের মধ্যে শান্তি ও মঙ্গল নিশ্চিত হয়।মহাভারত থেকে জানা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত হয়েও কর্ণ স্বর্গে গিয়েছিলেন। স্বর্গে তখন কর্ণকে খাদ্য ও পানীয়র বদলে শুধু সোনা আর রুপা খেতে দেওয়া হচ্ছিল। এমন অদ্ভুত ব্যবস্থায় কর্ণ বেশ অবাক হয়ে যমরাজকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর প্রতি এমন ব্যবহার কেন? কী কারণে তাঁর জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে?
যমরাজ কর্ণর এ কথা শুনে জবাবে বললেন, ‘হে বীর কর্ণ, তুমি শুধু জীবনভর শক্তির আরাধনাই করেছ। কখনো কোনো পূর্বপুরুষের কথা ভাবোনি। তাঁদের আত্মাকে খাদ্য বা পানীয়ও কখনো দাওনি, তবু তোমার জীবনের কিছু পুণ্যফলের কারণে স্বর্গে আসতে পেরেছ, কিন্তু খাদ্য বা পানীয় পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারোনি। সে জন্যই তোমার প্রতি এমন রূঢ় ব্যবহার।’
এ কথা কর্ণকে হতাশ করলেও পরে প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘হে ধর্মরাজ, এতে আমার কি কোনো দোষ আছে? জন্মমুহূর্তেই আমার মা আমাকে ত্যাগ করেন। এরপর সূত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী আমাকে প্রতিপালন করেন। কুরুক্ষেত্রে পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগের দিন কৃষ্ণ ও মাতা কুন্তী এসে আমার জন্ম ও বংশপরিচয় আমাকে জানান। যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের সময় এক পক্ষকাল আমি বেঁচে ছিলাম। তা পিতৃপুরুষকে জল দেওয়ার সময়ই তো আমি পাইনি।’
আরও পড়ুনমহালয়া কী কেন ১৭ অক্টোবর ২০২৩তখন যমরাজ এর থেকে মুক্তিলাভের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন কর্ণকে। সেই উপায় হলো কর্ণকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল দান করতে হবে, তবেই স্বর্গে ফিরে এসে তিনি স্বাভাবিক খাদ্য ও পানীয় পাবেন।
যমরাজের নির্দেশে সূর্য যখন কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে, সেদিন কর্ণ আবার মর্ত্যে ফিরে এসে এক পক্ষকাল থেকে পিতৃপুরুষকে তিল-জল দান করে তাঁর পাপ স্খলন করলেন। এক পক্ষকাল পরে সূর্য আবার যখন বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করে, তখন কর্ণ আবার স্বর্গে ফিরে যান।
এই বিশেষ পক্ষকালকে শাস্ত্রে পিতৃপক্ষ বলা হয়েছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিনটিই হলো ‘মহালয়া’। এ সময়ে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের তিল-জল ইত্যাদি দিয়ে স্মরণ করার রীতি চালু আছে সনাতনীদের মধ্যে। একে বলা হয় তর্পণ। কাজেই মহালয়া হলো প্রয়াত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার দিন।
যমরাজ এর থেকে মুক্তিলাভের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন কর্ণকে। সেই উপায় হলো কর্ণকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল দান করতে হবে।এদিকে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের (১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ) আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠীর ভোরে তৎকালীন ‘ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’ নামে পরিচিত কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল এক অভিনব আগমনী গীতি-আলেখ্য ‘শারদীয় বন্দনা’। এটি রচনা করেছিলেন বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য, যিনি বাণীকুমার নামে সুপরিচিত ছিলেন। সুর সংযোজনা করেন পণ্ডিত হরিশচন্দ্র, রাইচাঁদ বড়াল ও পঙ্কজকুমার মল্লিক। স্তোত্র পাঠ করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। দুই বছর পর ১৯৩৪ সালে মহাষষ্ঠীর সকাল ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত মহালয়ার দিন এই শারদবন্দনা প্রচার করা হয়।
আরও পরে ১৯৩৭ সাল নাগাদ নবরূপে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ মহালয়ার দিন ভোর চারটা থেকে সম্প্রচার শুরু হলো। এর আগের বছর ‘ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’ বদলে হয়েছিল ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’। প্রথম স্ক্রিপ্টের আমূল বদল ঘটান বাণীকুমার এবং এককভাবে সংগীত পরিচালনার ভার নেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। প্রথমে দুর্গাষষ্ঠীর ভোরে সম্প্রচারিত হলেও পরে তা মহালয়ার ভোরে সরিয়ে আনা হয় একটাই কারণে যে মানুষ ওই অনুষ্ঠান শোনার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন এবং তারপর তর্পণ করতে বেরোবেন।
মহালয়া পিতৃপুরুষকে জলদান করার তিথি। এর সঙ্গে দুর্গাপূজার কোনো যোগ নেই, যোগ নেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি–আলেখ্যটিরও। নেহাতই মর্নিং অ্যালার্ম হিসেবে এটি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।
দীপান্বিতা দে: শিশুতোষ গ্রন্থপ্রণেতা ও প্রাবন্ধিক
আরও পড়ুনগণেশ চতুর্থী: মঙ্গলের দেবতার আরাধনা২৭ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বর গ ন কর ণ দ ন কর র আগ র ল ত হয় অন ষ ঠ জলদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মহালয়া: পূর্বপুরুষদের স্মরণ ও শ্রদ্ধার তিথি
পলাতক বর্ষার ছায়া ক্ষুদ্র হওয়ার মুখেই আকাশে–বাতাসে শরতের আগমনী গীত বাজতে শুরু করে। বাংলার এমন চোখজুড়ানো রূপ দেখে রবীন্দ্রনাথ শরৎবন্দনার গানে লিখেছিলেন, ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি।’
বর্ষার ঘনঘটার পর তখন মন–কেমনের ছুটির ঘণ্টা যেন বাজতে থাকে। কাশফুলের শুভ্রতায় ভরে ওঠে মাঠঘাট। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত অঙ্গন এই সময়ে ভরে রাখে। জাতপাত–ধর্মের বালাই সেখানে কাজ করে না। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই মিলে শরৎ-আলোর ভোরে ভেজা শিউলির খোঁজ করে। এই শরৎকালেই বাঙালি সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্গাপূজা সাধারণত দেবীপক্ষে পালিত হয়ে থাকে। দেবীপক্ষের আগের পক্ষটি হলো পিতৃপক্ষ। আর এ দুই পক্ষের সন্ধিক্ষণটির নাম মহালয়া। দেবীপক্ষের সূচনাকাল থেকেই দুর্গাপূজার শুরু।দুর্গাপূজা সাধারণত দেবীপক্ষে পালিত হয়ে থাকে। দেবীপক্ষের আগের পক্ষটি হলো পিতৃপক্ষ। আর এ দুই পক্ষের সন্ধিক্ষণটির নাম মহালয়া।
দেবীপক্ষের সূচনাকাল থেকেই দুর্গাপূজার শুরু। কিংবদন্তি আছে, দেবী দুর্গা এদিন পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।
এদিকে আবার পিতৃপক্ষের শেষ প্রহরে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে ‘জলদান’ বা তর্পণ করার রীতি পালিত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। সূর্য ওঠার সময়, অর্থাৎ ব্রহ্মমুহূর্ত থেকে আশপাশের নদ–নদী, কিংবা জলাশয়ে বুকজলে দাঁড়িয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে শুরু হয়ে যায় জলদান।
আরও পড়ুনদুর্গাদেবীর আগমনী সংগীতই মহালয়া০২ অক্টোবর ২০২৪মহালয়ার বিষয়ে অনেক রকমের পৌরাণিক কাহিনির জনমানসে প্রচলিত আছে। সনাতন পঞ্জিকামতে, পরিবারের মৃত সদস্যদের শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার জন্য নিবেদিত একটি উল্লেখযোগ্য সময় হলো পিতৃপক্ষ।
সময়টি সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবিত ও বিদেহী আত্মার সঙ্গে গভীর সংযোগের অলৌকিক বিশ্বাস এখানে প্রতিফলিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই পবিত্র তিথিতে নিজেদের পূর্বপুরুষকে স্মরণ করেন, জলদান করে শ্রদ্ধা জানান, আশীর্বাদস্বরূপ রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
সনাতনীরা বিশ্বাস করেন, পিতৃপক্ষে প্রয়াতদের আত্মা নিজ নিজ বংশধরদের জীবনকে প্রভাবিত করে। এ সময়ে নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও নৈবেদ্য সমর্পণ করার মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর—এ দুই পুরুষের মধ্যে শান্তি ও মঙ্গল নিশ্চিত হয়।
সনাতনীরা বিশ্বাস করেন, পিতৃপক্ষে প্রয়াতদের আত্মা নিজ নিজ বংশধরদের জীবনকে প্রভাবিত করে। এ সময়ে নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও নৈবেদ্য সমর্পণ করার মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর—এ দুই পুরুষের মধ্যে শান্তি ও মঙ্গল নিশ্চিত হয়।মহাভারত থেকে জানা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত হয়েও কর্ণ স্বর্গে গিয়েছিলেন। স্বর্গে তখন কর্ণকে খাদ্য ও পানীয়র বদলে শুধু সোনা আর রুপা খেতে দেওয়া হচ্ছিল। এমন অদ্ভুত ব্যবস্থায় কর্ণ বেশ অবাক হয়ে যমরাজকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর প্রতি এমন ব্যবহার কেন? কী কারণে তাঁর জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে?
যমরাজ কর্ণর এ কথা শুনে জবাবে বললেন, ‘হে বীর কর্ণ, তুমি শুধু জীবনভর শক্তির আরাধনাই করেছ। কখনো কোনো পূর্বপুরুষের কথা ভাবোনি। তাঁদের আত্মাকে খাদ্য বা পানীয়ও কখনো দাওনি, তবু তোমার জীবনের কিছু পুণ্যফলের কারণে স্বর্গে আসতে পেরেছ, কিন্তু খাদ্য বা পানীয় পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারোনি। সে জন্যই তোমার প্রতি এমন রূঢ় ব্যবহার।’
এ কথা কর্ণকে হতাশ করলেও পরে প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘হে ধর্মরাজ, এতে আমার কি কোনো দোষ আছে? জন্মমুহূর্তেই আমার মা আমাকে ত্যাগ করেন। এরপর সূত বংশজাত অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী আমাকে প্রতিপালন করেন। কুরুক্ষেত্রে পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগের দিন কৃষ্ণ ও মাতা কুন্তী এসে আমার জন্ম ও বংশপরিচয় আমাকে জানান। যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের সময় এক পক্ষকাল আমি বেঁচে ছিলাম। তা পিতৃপুরুষকে জল দেওয়ার সময়ই তো আমি পাইনি।’
আরও পড়ুনমহালয়া কী কেন ১৭ অক্টোবর ২০২৩তখন যমরাজ এর থেকে মুক্তিলাভের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন কর্ণকে। সেই উপায় হলো কর্ণকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল দান করতে হবে, তবেই স্বর্গে ফিরে এসে তিনি স্বাভাবিক খাদ্য ও পানীয় পাবেন।
যমরাজের নির্দেশে সূর্য যখন কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে, সেদিন কর্ণ আবার মর্ত্যে ফিরে এসে এক পক্ষকাল থেকে পিতৃপুরুষকে তিল-জল দান করে তাঁর পাপ স্খলন করলেন। এক পক্ষকাল পরে সূর্য আবার যখন বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করে, তখন কর্ণ আবার স্বর্গে ফিরে যান।
এই বিশেষ পক্ষকালকে শাস্ত্রে পিতৃপক্ষ বলা হয়েছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিনটিই হলো ‘মহালয়া’। এ সময়ে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের তিল-জল ইত্যাদি দিয়ে স্মরণ করার রীতি চালু আছে সনাতনীদের মধ্যে। একে বলা হয় তর্পণ। কাজেই মহালয়া হলো প্রয়াত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার দিন।
যমরাজ এর থেকে মুক্তিলাভের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন কর্ণকে। সেই উপায় হলো কর্ণকে আবার মর্ত্যে ফিরে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল দান করতে হবে।এদিকে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের (১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ) আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠীর ভোরে তৎকালীন ‘ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’ নামে পরিচিত কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল এক অভিনব আগমনী গীতি-আলেখ্য ‘শারদীয় বন্দনা’। এটি রচনা করেছিলেন বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য, যিনি বাণীকুমার নামে সুপরিচিত ছিলেন। সুর সংযোজনা করেন পণ্ডিত হরিশচন্দ্র, রাইচাঁদ বড়াল ও পঙ্কজকুমার মল্লিক। স্তোত্র পাঠ করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। দুই বছর পর ১৯৩৪ সালে মহাষষ্ঠীর সকাল ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত মহালয়ার দিন এই শারদবন্দনা প্রচার করা হয়।
আরও পরে ১৯৩৭ সাল নাগাদ নবরূপে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ মহালয়ার দিন ভোর চারটা থেকে সম্প্রচার শুরু হলো। এর আগের বছর ‘ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’ বদলে হয়েছিল ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’। প্রথম স্ক্রিপ্টের আমূল বদল ঘটান বাণীকুমার এবং এককভাবে সংগীত পরিচালনার ভার নেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। প্রথমে দুর্গাষষ্ঠীর ভোরে সম্প্রচারিত হলেও পরে তা মহালয়ার ভোরে সরিয়ে আনা হয় একটাই কারণে যে মানুষ ওই অনুষ্ঠান শোনার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন এবং তারপর তর্পণ করতে বেরোবেন।
মহালয়া পিতৃপুরুষকে জলদান করার তিথি। এর সঙ্গে দুর্গাপূজার কোনো যোগ নেই, যোগ নেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি–আলেখ্যটিরও। নেহাতই মর্নিং অ্যালার্ম হিসেবে এটি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।
দীপান্বিতা দে: শিশুতোষ গ্রন্থপ্রণেতা ও প্রাবন্ধিক
আরও পড়ুনগণেশ চতুর্থী: মঙ্গলের দেবতার আরাধনা২৭ আগস্ট ২০২৫