পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোয়েস্ট বিডিসির (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার) কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি। এ কারণে কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালক ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

একইসঙ্গে  এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের নিবন্ধন বাতিল, রিয়াজ ইসলাম, তার সহযোগী পরিচালনা পর্ষদের ৫ সদস্য ও ট্রাস্টিকে মোট ১০৯ কোটি টাকা জরিমানা, মানিলন্ডারিং সংঘটিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ প্রেরণ এবং নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

‘কর্পোরেট গভর্ন্যান্স টেকসই পুঁজিবাজার গড়ার অন্যতম পূর্শবর্ত’

শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিআইসিএমের বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম

কোয়েস্ট বিডিসির পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) শরীফ আহসান, মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা ও মো. ওমর সোয়েব চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত ৯৭৮তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‎বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিএসইসির গঠিত গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘কোয়েস্ট বিডিসির অনিয়ম-দুর্নীতি: রিয়াজ-শিবলীকে পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধসহ কঠোর সুপারিশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি ডটকম।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড হতে তালিকাচ্যুত পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেডের ৫১ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের নিমিত্ত ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ২৮৯.৪৮ টাকা দরে ক্রয়ের মাধ্যমে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড যথা: এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়।

উক্ত বিনিয়োগের সময় পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ছিল না। এছাড়াও এসময় প্রতিষ্ঠানটির প্রতি শেয়ারের নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ছিল নেগেটিভ ২.৭৪ টাকা এবং নেগেটিভ রিটেন আর্নিং ছিল ২.৩৫ কোটি টাকা (৩০ জুন ২০২২ অনুযায়ী)। উক্ত বিনিয়োগের অব্যবহিত পূর্বে ডিএসইর ওটিসি প্ল্যাটফর্মে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের ট্রেডিং প্রাইস ছিল মাত্র ১৩.৬০ টাকা। পরবর্তীতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডসমূহ হতে মনোনীত পরিচালকের (যারা ফান্ডের সাথে কোনভাবেই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয় বরং এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশের স্বার্থপুষ্ট ব্যক্তি) মাধ্যমে কোম্পানির বোর্ড গঠন করা হয় এবং কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড’ নামকরণ করা হয়। একইসাথে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ১.৬০ কোটি টাকা হতে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। উক্ত ৬টি ফান্ড হতে প্রতিটি শেয়ার ১৫.৮৮ টাকা মূল্যে মোট ৪৫.০২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এ সময় কোম্পানির বিদ্যমান পূর্বতন শেয়ারহোল্ডারকে কোন শেয়ার দেওয়া হয়নি। এছাড়াও উল্লেখিত ক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন প্রকাশ করা হয়নি, বিশেস সাধারণ সভা (ইজিএম) করা হয়নি এবং প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যুকৃত শেয়ার লক ইন করা হয়নি। উল্লেখিত ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড হতে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে না থাকা এমন লোকসানি কোম্পানিতে ৬৮.৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়। এ প্রেক্ষিতে কমিশন জড়িতদের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে:

১) প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ১.৬০ কোটি টাকা হতে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন প্রকাশ না করা, ইজিএম না করা এবং প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যুকৃত শেয়ার লক ইন না করার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড এর তৎকালীন পরিচালক যথা: রিয়াজ ইসলাম-ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি পরিচালক, রেজাউর রহমান সোহাগ-গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের চেয়ারম্যান ও প্রতিনিধি পরিচালক, শরীফ আহসান, তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এআইবিএল প্রথম ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি পরিচালক, মিসেস মদিনা আলী-এমবিএল প্রথম মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি পরিচালক, সৈয়দ কামরুল হোদা এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের প্রতিনিধি পরিচালক ও মো. ওমর সোয়েব চৌধুরী-এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১ এর প্রতিনিধি পরিচালক প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে অর্থদণ্ড আরোপ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

২) এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ব্যবস্থাপনাকৃত উক্ত ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড হতে বিধিবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগকৃত অর্থ সুদসহ মোট ৯০ কোটি টাকা ফান্ডসমূহের বিনিয়োগের অনুপাতে ৩০ দিনের মধ্যে উক্ত ফান্ডগুলোতে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম উক্ত অর্থ ফান্ডগুলোতে ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ফান্ডগুলোতে উক্ত সময়ের মধ্যে এ অর্থ ফেরত আনতে ব্যর্থ হলে অর্থদন্ড প্রদানের আদেশের তারিখ হতে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের পরিচালক ও সিইও রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা এবং পরিচালক মি. জর্জ এম. স্টককে ১ কোটি টাকা ও পরিচালক রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৩) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর বিধান ভঙ্গ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে না থাকা এবং এনএভি ও রিটেন আর্নিং নেগেটিভ এমন দুর্বল কোম্পানির একক শেয়ারে বিনিয়োগ করায় উক্ত ৬টি ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। এ প্রেক্ষিতে জনস্বার্থে ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৪) উল্লেখিত ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের যথাযথ তদারকি ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় ফান্ডসমূহের ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনালেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিজিআইসি) ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৫) মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড এর তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান সোহাগকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৬) কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড এর ৩০ জুন ২০২৩ সমাপ্ত আর্থিক বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় নিরীক্ষক শফিক বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৭) একই সময়ে ৩টি প্রতিষ্ঠান যথা: সোনালী সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ডের তৎকালীন পরিচালকের দায়িত্বে থাকায় সৃষ্ট স্বার্থের সংঘাত থাকার কারণে শরীফ আহসানকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৮) ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড হতে বিধিবহির্ভূতভাবে ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা তৎকালীন পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেডে বিনিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন এবং কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড এর পরিশোধিত মূলধন ১.৬০ কোটি টাকা হতে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার বিষয়টি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় অনৈতিক যোগসাজশ থাকার বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৯) কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার প্রতিটি ৫২.২৫ টাকা করে মোট ২৪.৯৫ কোটি টাকা থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড- এ বিনিয়োগ করা হয়। এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেয়ার মূল্যায়ন করেছেন সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদ হোসেন ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামের যোগসাজশের প্রেক্ষিতে উক্ত শেয়ার মূল্যায়ন  করা হয়। উক্ত শেয়ার মূল্যায়নের মাধ্যমে কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড থেকে ২৪.৯৫ কোটি টাকা থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড- এ হস্তান্তরিত হয় যার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হওয়ায় বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জ উর রহম ন স হ গ এলআর গ ল ব ল ব আর গ ল ব ল ব র য় জ ইসল ম ল ম ট ড এর স ক উর ট জ র তৎক ল ন ব এসইস র ফ ন ড হত উল ল খ পর চ ল ব ষয়ট হওয় য় গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিবারের আর্থপাচার তদন্তে বি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির, তার পুত্র রাইয়ান কবির, পুত্রবধূ নুসরাত নাহার এবং এ কাজে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় এবং সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের আড়ালে ঋণ জালিয়াতি, সন্দেহজনক লেনদেনসহ বিবিধ অনিয়মের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করার অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে বিএসইসি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু নির্দেশনাসাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক রানা দাশ।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় এবং সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের আড়ালে ঋণ জালিয়াতি, সন্দেহজনক লেনদেনসহ বিবিধ অনিয়মের সঙ্গে আলমগীর কবির, তার ছেলে রাইয়ান কবির, পুত্রবধূ নুসরাত নাহার এবং উক্ত কাজে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। 

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধিবিধান লঙ্ঘন করা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন। এ কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯-এর ধারা ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। 

তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে

বিএসইসির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত সাউথইস্ট ব্যাংকের অভিযুক্তরা কি পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছে সে বিষয়টির অনুসন্ধান ও তদন্ত করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ২০ জুলাই সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আলমগীর কবীর। ব্যক্তিগত ও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে টানা ২০ বছর সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর কবির। ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পদে থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পর্ষদে যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আসে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এম এ কাশেম। তবে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও আলমগীর কবির এতদিন ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ নভেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে আলমগীর কবিরকে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। একই ঘটনায় তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগমকে পাঁচ কোটি টাকা ও জামাতা তুষার এল কে মিয়াকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। 

এ ছাড়া গত ১৪ জুলাই আলমগীর কবিরকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিবারের আর্থপাচার তদন্তে বি