দীর্ঘ নয় মাস ধরে নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ রয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ শামসুন্নাহার ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপু। বাড়ির চারপাশে বাঁশ ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় মই বেয়ে দেয়াল টপকে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। পরিবারটির অভিযোগ, বসতভিটা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করতে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নূরুল হুদা।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা শামসুন্নাহার স্বামী আমিরুল ইসলাম মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তখন থেকেই ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপুকে নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করছেন শামসুন্নাহার। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

ফরিদপুরে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ, ভোগান্তি চরমে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দুইজন বাসিন্দা জানান, শামসুন্নাহারের বাড়িটি চারপাশ থেকে উঁচু বেড়ায় ঘেরা। একফোঁটা জায়গা নেই যেখান দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাড়িটিতে প্রবেশ করা সম্ভব। মই দিয়ে বিপজ্জনকভাবে দেয়াল টপকে বাড়িতে যাতায়াত করতে হয় মা-ছেলেকে। প্রভাবশালী মহল বাড়িটি দখল করতে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করেছে।

শামসুন্নাহারের অভিযোগ, “৯ মাস হলো ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছি। বাড়ির চারপাশে কাঠ-বাঁশ আর কাঁটাতারের বেড়া তুলে দিয়েছে নুরুল হুদা। এক কেজি চাল আনতে মই বেয়ে দেয়াল টপকাতে হয়। রাত হলে বুক ধড়ফড় করতে থাকে, যদি বুলডোজার আসে। তিনদিন হলো ঘরে এক মুঠো চাল নেই। প্রশাসনের কাছে গেছিলাম, এতোদিনেও বিচার পেলাম না।”

শামসুন্নাহারের বাড়ির সামনে দেওয়া বাঁশের বেড়া 

শামসুন্নাহারের ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপু বলেন, “২০০৫ সালে বাবা কষ্টের টাকায় সাড়ে তিন শতাংশ জমি কিনেছিলেন। আজকের বাজারে ওই জমির মূল্য কোটি টাকা। এ কারণেই আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাকে হুমকি দেওয়া হয়—বসতভিটা না ছাড়লে বুলডোজার দিয়ে চিহ্ন মুছে ফেলা হবে। মা সারা রাত জেগে থাকেন, হাঁটাহাঁটি করেন। মাঝে মধ্যে চোখে পানি ছিটিয়ে ঘুম তাড়ান তিনি।”

অভিযুক্ত নূরুল হুদাকে প্রশ্ন করলে তিনি সংক্ষিপ্ত জবাবে বলেন, “আমি কার নির্দেশে কাজ করছি, সেটা তাদের কাছ থেকে জানুন। আমার ব্যাপারে সবকিছু তাদেরই জানা।”

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবরুদ্ধ পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।”

ঢাকা/রফিক/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ য় ল টপক ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৫২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মামলা হচ্ছে ৬ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে

৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকার নির্ধারিত টাকার পরিবর্তে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ৫২৫ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। এই অভিযোগে ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।

আরো পড়ুন:

মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টাওয়ার থ্রিতে আগুন

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর

তিনি বলেন, “সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে ৩১ হাজার ৩৩১ জনের কাছ থেকে পাঁচগুণ বেশি অর্থ আদায় করে তারা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগে গত মঙ্গলবার মামলাগুলো অনুমোদন করেছে দুদক। ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মামলায় আসামি করা হচ্ছে।”

মামলায় যারা আসামি: 
মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে ৭ হাজার ৪৩০ জনের কাছ থেকে ১২৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রুহুল আমিনকে প্রথম মামলায় আসামি করা হচ্ছে।

মেসার্স মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৪৮৯ জনের কাছ থেকে ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের নামে দ্বিতীয় মামলা হচ্ছে। এ মামলায় কিরণের স্ত্রী ও মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের এমডিকেও আসামি করা হচ্ছে।

সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩২১ জনের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানকে তৃতীয় মামলার আসামি করা হচ্ছে।

ইমপেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের মাধ্যমে ৮ হাজার ১০১ জনের কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন ও এমডি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রামে মামলা হচ্ছে।

আরআরসি হিউম্যান রিসোর্ট সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০২ জনের কাছ থেকে ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, এমডি মো. আলমগীর কবীরকে আসামি করে মামলা হচ্ছে।

থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ৩ জনকে আসামি করে মামলা হচ্ছে। তারা হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন নোমানী ও এমডি শমসের আহমেদ।

এর আগে গত ১১ মার্চ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩২ জনের নামে ও ১৪ সেপ্টেম্বর এক হাজার ১৫৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তার নামে মামলা করে দুদক।

বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করে দেশটি। তখন শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে এক অফিস আদেশে এ খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ