মানিকগঞ্জের একটি ভাড়া বাসা থেকে মা ও তাঁর দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে জেলা শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, দুই শিশুসন্তানকে হত্যার পর বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন মা।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন শেখা আক্তার (২৯), তাঁর ছেলে আরাফাত ইসলাম (৯) ও মেয়ে সাইফা আক্তার (২)। শেখা হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের শাহিন আহমেদের স্ত্রী। প্রায় দুই মাস আগে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় যান শাহিন।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে শাহিনের সঙ্গে শেখার বিয়ে হয়। উভয়ের এটি দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। শেখার আগের স্বামীর সংসারে ছেলে আরাফাত ও দ্বিতীয় স্বামী শাহিনের সংসারে সাইফার জন্ম হয়। শাহিন মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর প্রায় এক মাস আগে পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন শেখা। সেখানে তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। আজ দুপুর হয়ে গেলেও কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে তাঁদের ডাকাডাকি করেন প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। বেলা দুইটার দিকে সদর থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় মেঝেতে দুই শিশুসন্তান ও পাশেই খাটের ওপর মা শেখার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন। এ ছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট (ডিবি), ডিএসবি, সিআইডির সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।

লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় শেখার মুঠোফোন নম্বরে ভিডিও কল দেন তাঁর স্বামী শাহিন আহমেদ। এ সময় শাহিন পুলিশকে জানান, গতকাল সোমবার দিনে তাঁর স্ত্রী শেখার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে শেখার মুঠোফোনে কল করলে ধরেননি। কী কারণে দুই সন্তানকে হত্যার পর তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন, তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ইয়াছমিন খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, কক্ষের ভেতর থেকে বিষাক্ত রাসায়নিকের খালি বোতল পাওয়া গেছে। বিষাক্ত ওই পদার্থ দুই শিশুসন্তানকে পান করিয়ে হত্যার পর ওই নারীও আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাকিটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দাম্পত্য কলহ থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আমান উল্লাহ বলেন, ওই তিনজনের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ই শ শ সন ত ন কর ছ ন য র পর

এছাড়াও পড়ুন:

আশুলিয়ায় থানার সামনে ৬ লাশ পোড়ানোর পর কেউ সেগুলো মসজিদের সামনে রেখে আসে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয়জনের লাশ পোড়ানো হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী মতিবর রহমান (বুইদ্দা)। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে পোড়া লাশগুলো রেখে আসে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মতিবর রহমান জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে মতিবর রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা দুইটার পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, তখন ছেলেরা মিছিল বের করে। আশুলিয়া থানার সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় পুলিশ গুলি করে। এরপর গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশগুলো (একজন জীবিত ছিলেন) থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে রেখে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। পরে সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ গুলি করতে করতে সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে চলে যায়।

সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাতেই (আশুলিয়া থানা) ছিলেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, রাতের বেলা তিনি বাসায় চলে যান। এই লাশগুলো থানার সামনেই পোড়ানো হয় এবং কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসে।

পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর ১২টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসেন এবং বেলা দুইটার সময় সেনাবাহিনী আসে বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছয়টি লাশ গাড়ি থেকে বের করে পলিথিনে প্যাকেট করি এবং জানাজা পড়ানো হয়।’

এর মধ্যে চারজনের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং তাঁদের অভিভাবকদের ফোন করা হলে তাঁরা এসে লাশ নিয়ে যান বলে জানান মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। সেগুলো আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। একদিন পর আবুলের স্ত্রী হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া কোনো লাশ দাফন করেছি কি না, জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া একটি লাশ পেয়েছি এবং দাফন করেছি।’

আরও পড়ুনআশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানো: রাজসাক্ষী হলেন সাবেক এসআই আবজালুল২১ আগস্ট ২০২৫

সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন

এ মামলায় সপ্তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন বাইপাইলের বাঘাবাড়ি বাজারের ফল ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তাঁরা বাইপাইল থেকে নবীনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন। বেলা একটার দিকে তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়েন। সে সময় সাইফুল ইসলাম, তাঁর সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ একত্র হয়ে বাইপাইল এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন। ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।

আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে আরও একজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে এই ছয়জনকে (যাঁর মধ্যে একজন জীবিত) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।

এ মামলায় মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে আট আসামি গ্রেপ্তার আছেন। আজ তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। তাঁদের মধ্যে শেখ আবজালুল হক ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।

আরও পড়ুনভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল৩১ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ