নিউইয়র্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারাসহ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘এই সময়ে’ প্রকাশিত ফখরুলের সাক্ষাৎকার ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, বিভ্রান্তিকর

৩০ আসন চাওয়া নিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য ‘অসত্য’: জামায়াত

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ আক্রমণটি ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহযোগী ও সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে ভিভিআইপি গেট ও সুরক্ষিত পরিবহনের ব্যবস্থা করা হলেও শেষ মুহূর্তে ভিসা জটিলতার কারণে পথ পরিবর্তন করতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভিভিআইপি নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে, যার ফলে প্রতিনিধিদল ঝুঁকির মুখে পড়ে।

ঘটনার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে দ্রুত নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে। একজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে ও বর্তমানে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে। এই ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলের নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ও বিদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রতি তার অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের নিন্দনীয় কাজ সহ্য করা হবে না ও এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ড ম হ ম মদ ইউন স এনস প ন উইয র ক র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রাম ও শহর: বৈষম্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া যেখানে চলমান

তথ্যে-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, আর্থসামাজিক সূচকে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ‘স্টেট অব দ্য রিয়েল ইকোনমি’ শীর্ষক জাতীয় সমীক্ষায় দেখা যায়, গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্ভবত এ অগ্রগতির মূল উপাদান পাকা সড়ক নেটওয়ার্ক এবং দেশব্যাপী বিদ্যুৎ-সংযোগ। সেই সঙ্গে মানুষের মনে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। 

পিপিআরসির ওই সমীক্ষায় উল্লেখিত অগ্রগতি মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যোগ প্রমাণ করেছে। এই অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। জুলাই-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাজনৈতিক সংস্কার যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, অর্থনৈতিক সংস্কার ততটা পায়নি। জুলাই আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক ছিল না, এর গভীরে ছিল অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।

ব্যবসায় ভীতিকর অবস্থা

দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল বা মালিকানার হাতবদল বৃহৎ, মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিয়েছেন বা সংকুচিত করেছেন। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে টাকার প্রবাহ কমেছে। দ্বিতীয়ত, কিছুসংখ্যক ব্যাংকের নাজুক অবস্থার কারণে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। তৃতীয়, সরকারি অনেক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে, নতুন প্রকল্পের সংখ্যা কমে এসেছে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে শ্রমজীবী মানুষের কাজের সুযোগ কমেছে।

পিপিআরসির সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে অর্থাৎ টাকার দাম কমেছে। সার্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাপে পড়েছে, গ্রামের মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে এসে অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত হচ্ছেন। গ্রাম-শহরের মধ্যে নানা সূচকের বৈষম্য কমলেও গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের অভাবে সেই অগ্রগতি পেছনের দিকে ফিরতে শুরু করেছে। যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭। আর পিপিআরসির ২০২৫-এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সে হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। 

পিপিআরসির সমীক্ষায় পরিলক্ষিত গ্রাম-শহর বৈষম্যের বিশেষ কয়েকটির দিকে নজর দেওয়া যাক। গৃহ ক্যাটাগরিতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের ১৬ দশমিক ৬ এবং শহরের ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা পাকা বাড়িতে বাস করেন। গ্রামের ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও শহরের ২৯ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা টিনশেড বাড়িতে বাস করেন। গ্রাম এলাকার ৯১ দশমিক ৫ ভাগ উত্তরদাতা ও শহরের ৫৯ দশমিক ৮ ভাগ উত্তরদাতা নিজগৃহে বাস করেন। এসব তথ্য থেকে সম্পদের মালিকানা বৃদ্ধির একটি বিশেষ দিক উঠে এসেছে। 

সুপেয় পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে শহরের তুলনায় গ্রাম সামান্য এগিয়ে আছে। গ্রামের উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ সুপেয় পানি পান, অন্যদিকে শহরে এই হার ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ–সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগের হার ৯৮ দশমিক ৩, শহরের ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংযোগ শেষ কথা নয়। বিদ্যুৎ থাকা ও না-থাকার (লোডশেডিং) ক্ষেত্র গ্রাম ও শহরের চিত্র এক নয়। 

শহর ও গ্রামে চিকিৎসা ব্যয় বেশি

মাসিক আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের উত্তরদাতাদের মধ্যে পার্থক্য হলো যথাক্রমে ২৯,২০৫: ৪০,৫৭৮ টাকা। শহরের উত্তরদাতাদের মধ্যে আয়ের চেয়ে ব্যয় করার প্রবণতা বেশি; গ্রামের উত্তরদাতারা সঞ্চয়প্রবণ। উত্তরদাতাদের আয়ের বেশির ভাগ ব্যয় হয় খাবারের পেছনে। শহরবাসী ও গ্রামবাসী উভয় শ্রেণির উত্তরদাতাদের চিকিৎসার ব্যয় বেড়েছে। জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ বেড়েছে উভয় শ্রেণিতেই—ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদ্​রোগের বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। শিক্ষার ব্যয় শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি।

পিপিআরসির ওই সমীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের হার গ্রামে ৭১ শতাংশ, আর শহরে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ। কম্পিউটার/ল্যাপটপ রয়েছে গ্রামের ২ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার। শহুরে উত্তরদাতাদের মধ্যে এর হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। গ্রামের ৭৬ দশমিক ৮ এবং শহরের ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ খানার যুবকদের স্মার্টফোন রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন গ্রামের ৬৫ দশমিক ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা; শহরে এই হার ৭৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এসব তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির এক নতুন দিকের সন্ধান দিচ্ছে। ব্যয় ও ভোগের ধরনের ক্ষেত্রে বৈষম্য গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি।  

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত সম্পদের মালিকানা বাড়ছে। সিংহভাগ অর্থ পুঞ্জীভূত হচ্ছে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে। বৈষম্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান। বিদ্যমান আইন, নীতি-পরিকল্পনা জনগণের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় অধিকতর কার্যকর। এ জটিল অর্থনৈতিক সমীকরণের মধ্যে গ্রাম-শহর সমতা বা অসমতার চিত্র কীভাবে দেখা হবে, তা এক কঠিন প্রশ্ন। 

কৃষি অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হলেও প্রান্তিক কৃষক বৈষম্যের শিকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ