দিল্লিতে আশ্রম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ১৭ শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
Published: 24th, September 2025 GMT
ভারতের সাউথওয়েস্ট পশ্চিম দিল্লি এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে অসচ্ছল কোটার আওতায় ভর্তি হওয়া ১৭ জন নারী শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। এক মাস আগে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একটি আশ্রমের মাধ্যমে শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে থাকে। অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী পলাতক।
দিল্লি পুলিশ আজ বুধবার বলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একটি ভলভো গাড়িতে জাতিসংঘের ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহারের অভিযোগেও মামলা করা হয়েছে।
সাউথওয়েস্ট এলাকার পুলিশের কর্মকর্তা (ডিসিপি) অমিত গোয়েল বলেছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রশাসক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরই বিষয়টি সামনে এসেছে। তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি প্রতিষ্ঠানে অসচ্ছল বৃত্তির আওতায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন।’
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী পুলিশকে বলেছেন, তাঁরা নিয়মিত চৈতন্যানন্দের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নারী কর্মী ভুক্তভোগীদের চৈতন্যানন্দের কথা মেনে চলতে বলতেন।
ডিসিপি গোয়েল বলেন, ‘তদন্তের সময় ৩২ জন নারী শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করতেন, অশ্লীল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ/এসএমএস পাঠাতেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গায়ে হাত দিতেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে। তখন অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী বলেছেন তাঁরা নিয়মিত চৈতন্যানন্দের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নারী কর্মী ভুক্তভোগীদের চৈতন্যানন্দের কথা মেনে চলতে বলতেন।ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন নারী শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাঁদের চৈতন্যানন্দের চাওয়াগুলো মেনে চলতে বলতেন এবং চাপ দিতেন।
এরপর পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৭৫(২) (যৌন হয়রানি), ৭৯ (নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়) এবং ৩৫১(২) ধারায় মামলা করে। তাঁকে খুঁজে বের করতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তারা বলেছে, পাতিয়ালা হাউস কোর্টেও ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনভারতে স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আশ্রম থেকে ৬০০ নারী শিষ্য 'নিখোঁজ'১৮ জুন ২০১৮ডিসিপি গোয়েল বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং ঘটনার স্থানসহ অভিযুক্ত ব্যক্তির ঠিকানায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনো পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে আছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার (এনভিআর) এবং হার্ড ডিস্কগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ১৬ জন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি বিএনএসএসের ধারা ১৮৩ অনুযায়ী পাতিয়ালা হাউস কোর্টে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করা হয়েছে।’
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা অমিত গোয়েল বলেন, ‘তদন্তের সময় ৩২ জন নারী শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন অভিযোগ করেছেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করতেন, অশ্লীল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ/এসএমএস পাঠাতেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গায়ে হাত দিতেন।তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে, চৈতন্যানন্দ একটি লাল ভলভো গাড়ি ব্যবহার করছিলেন, যার নম্বর প্লেট ছিল ভুয়া। এর ওপর লেখা ছিল ‘থার্টি ওয়ান ইউএন’, যা জাতিসংঘের নম্বর প্লেটের মতো।
ডিসিপি গোয়েল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বেজমেন্টে একটি ভলভো গাড়ি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। যাচাই করার পর দেখা যায়, ভুয়া ডিপ্লোমেটিক নম্বর প্লেট থার্টি ওয়ান ইউএনসহ এই গাড়ি স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ব্যবহার করছিলেন।’
এরপর পুলিশ গত ২৫ আগস্ট অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএস) ৩৪৫(৩) (কোনো প্রতিষ্ঠানের চিহ্ন ব্যবহার করে জালিয়াতি), ৩১৮(৪) (প্রতারণা), ৩৩৬(৩) (জালিয়াতি) এবং ৩৪০(২) (ভুয়া দলিল তৈরি করা) ধারায় আরও একটি মামলা করেছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চৈতন্যানন্দের সর্বশেষ অবস্থান আগ্রায় ছিল। তবে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে একাধিক অভিযান সত্ত্বেও তাঁকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
আশ্রমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বামী চৈতন্যানন্দ ‘অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত’ ছিলেন এবং তারা ‘তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন’ করেছে।
আশ্রমের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তারা স্বামী চৈতন্যানন্দের অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।
আরও পড়ুনশতাধিক নারী ধর্ষণের অভিযোগে 'তান্ত্রিক বাবা' গ্রেপ্তার২২ জুলাই ২০১৮.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন শ ক ষ র থ ব যবহ র কর কর মকর ত ল বল ন জন ন র ১৭ জন
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রকল্পের জন্য ফিকির পুরস্কার পেল সিনজেনটা বাংলাদেশ
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) ‘সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডস’এ ‘ইনোভেশন লিডার অব দ্য ইয়ার ২০২৫’–এর স্বীকৃতি পেয়েছে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ফ্ল্যাগশিপ টেকসই প্রকল্প ‘গো গ্রো: এনরিচিং দ্য লাইভলিহুড ও কোস্টাল বেল্ট ফারমার্স’ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা ও টেকসই কৃষি উদ্ভাবনে সময়োপযোগী দৃষ্টান্ত রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সিনজেনটা বাংলাদেশের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেদায়েত উল্লাহ ও পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও সাসটেইনেবিলিটি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রকল্পটি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও মাটির উর্বরতা হ্রাস কৃষকদের জীবিকা বিপন্ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় লবণসহনশীল জাতের বীজ, সৌরশক্তিচালিত সেচ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে লবণাক্ত জমি পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের শস্য আবাদে পুকুর খননের পাশাপাশি নতুন জাতের বীজ, ভার্মি কম্পোস্ট, সোলার ইরিগেশন ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, সার ও কৃষি উপকরণের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদন বিষয়ে কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি শুরু হয় ২০২৩ সালে। এই প্রকল্পে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান—কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ডিএইর এসএসিপি প্রকল্প ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।