ভারতের সাউথওয়েস্ট পশ্চিম দিল্লি এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে অসচ্ছল কোটার আওতায় ভর্তি হওয়া ১৭ জন নারী শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। এক মাস আগে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একটি আশ্রমের মাধ্যমে শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে থাকে। অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী পলাতক।

দিল্লি পুলিশ আজ বুধবার বলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একটি ভলভো গাড়িতে জাতিসংঘের ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহারের অভিযোগেও মামলা করা হয়েছে।

সাউথওয়েস্ট এলাকার পুলিশের কর্মকর্তা (ডিসিপি) অমিত গোয়েল বলেছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রশাসক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরই বিষয়টি সামনে এসেছে। তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি প্রতিষ্ঠানে অসচ্ছল বৃত্তির আওতায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন।’

অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী পুলিশকে বলেছেন, তাঁরা নিয়মিত চৈতন্যানন্দের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নারী কর্মী ভুক্তভোগীদের চৈতন্যানন্দের কথা মেনে চলতে বলতেন।

ডিসিপি গোয়েল বলেন, ‘তদন্তের সময় ৩২ জন নারী শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করতেন, অশ্লীল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ/এসএমএস পাঠাতেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গায়ে হাত দিতেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে। তখন অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী বলেছেন তাঁরা নিয়মিত চৈতন্যানন্দের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নারী কর্মী ভুক্তভোগীদের চৈতন্যানন্দের কথা মেনে চলতে বলতেন।

ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন নারী শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাঁদের চৈতন্যানন্দের চাওয়াগুলো মেনে চলতে বলতেন এবং চাপ দিতেন।

এরপর পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৭৫(২) (যৌন হয়রানি), ৭৯ (নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়) এবং ৩৫১(২) ধারায় মামলা করে। তাঁকে খুঁজে বের করতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তারা বলেছে, পাতিয়ালা হাউস কোর্টেও ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনভারতে স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আশ্রম থেকে ৬০০ নারী শিষ্য 'নিখোঁজ'১৮ জুন ২০১৮

ডিসিপি গোয়েল বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং ঘটনার স্থানসহ অভিযুক্ত ব্যক্তির ঠিকানায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনো পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে আছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার (এনভিআর) এবং হার্ড ডিস্কগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ১৬ জন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি বিএনএসএসের ধারা ১৮৩ অনুযায়ী পাতিয়ালা হাউস কোর্টে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করা হয়েছে।’

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা অমিত গোয়েল বলেন, ‘তদন্তের সময় ৩২ জন নারী শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন অভিযোগ করেছেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করতেন, অশ্লীল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ/এসএমএস পাঠাতেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গায়ে হাত দিতেন।

তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে, চৈতন্যানন্দ একটি লাল ভলভো গাড়ি ব্যবহার করছিলেন, যার নম্বর প্লেট ছিল ভুয়া। এর ওপর লেখা ছিল ‘থার্টি ওয়ান ইউএন’, যা জাতিসংঘের নম্বর প্লেটের মতো।

ডিসিপি গোয়েল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বেজমেন্টে একটি ভলভো গাড়ি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। যাচাই করার পর দেখা যায়, ভুয়া ডিপ্লোমেটিক নম্বর প্লেট থার্টি ওয়ান ইউএনসহ এই গাড়ি স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ব্যবহার করছিলেন।’

এরপর পুলিশ গত ২৫ আগস্ট অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএস) ৩৪৫(৩) (কোনো প্রতিষ্ঠানের চিহ্ন ব্যবহার করে জালিয়াতি), ৩১৮(৪) (প্রতারণা), ৩৩৬(৩) (জালিয়াতি) এবং ৩৪০(২) (ভুয়া দলিল তৈরি করা) ধারায় আরও একটি মামলা করেছে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চৈতন্যানন্দের সর্বশেষ অবস্থান আগ্রায় ছিল। তবে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে একাধিক অভিযান সত্ত্বেও তাঁকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আশ্রমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বামী চৈতন্যানন্দ ‘অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত’ ছিলেন এবং তারা ‘তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন’ করেছে।

আশ্রমের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তারা স্বামী চৈতন্যানন্দের অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।

আরও পড়ুনশতাধিক নারী ধর্ষণের অভিযোগে 'তান্ত্রিক বাবা' গ্রেপ্তার২২ জুলাই ২০১৮.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন শ ক ষ র থ ব যবহ র কর কর মকর ত ল বল ন জন ন র ১৭ জন

এছাড়াও পড়ুন:

অপরিশোধিত তেল সরবরাহের পাইপলাইনে দুর্বৃত্তদের ছিদ্র, ছড়িয়ে পড়া তেলে আগুন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে অপরিশোধিত তেল সরবরাহের পাইপলাইনে দুর্বৃত্তদের ছিদ্র করার ঘটনায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ভুনবীর ইউনিয়নের শাসন উত্তর ইলাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন।

দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন বসির মিয়া (৫০), তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তার (৩৭) ও ছেলে রেদোয়ান (২০)। বর্তমানে তাঁরা ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আজ বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শেভরনের কর্মীরা পাইপলাইনে থাকা অবশিষ্ট তেল সংগ্রহ করে ড্রামে ভরছেন। জায়গাটি ঘিরে রাখা হয়েছে এবং পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেভরনের এক কর্মচারী বলেন, দুর্বৃত্তরা ১২ ইঞ্চি পাইপ ছিদ্র করে তেল বের করার চেষ্টা করে। পরে পাইপের সেই ছিদ্র আর বন্ধ হচ্ছিল না। এ লাইনে অনেক প্রেশার থাকে। পরে ছিদ্রকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন বলেন, পাইপ থেকে তেল বের হয়ে ছড়ার পানিতে মিশে যায় এবং হাওরের দিকে যেতে থাকে। ছড়ার পানিতে মাছ ভেসে উঠলে অনেকে মাছ ধরতে নামেন। ওই সময় ভাসমান তেলে আগুন ধরে গিয়ে একই পরিবারের তিনজন গুরুতর দগ্ধ হন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সালেক মিয়া বলেন, এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শেভরন বাংলাদেশের মিডিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্বৃত্তরা পাইপলাইনে ছিদ্র করে তেল চুরির চেষ্টা চালায়। ফলে তেল ছড়িয়ে পড়ে ছড়ার পানিতে মিশে যায় এবং পরে পানির ওপর ভাসমান তেল থেকে আগুন ধরে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শেভরন বাংলাদেশ আহত ব্যক্তিদের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের শ্রীমঙ্গল স্টেশনের কর্মকর্তা সোলাইমান আকনজি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রথমে বলা হয়েছিল, বিদ্যুতের তারে আগুন লেগেছে। পরে গিয়ে দেখি, তেল থেকে আগুন লেগেছে। পরে আমাদের দুটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ