ক্লাব ডি মাদ্রিদে প্রধান উপদেষ্টাকে যোগদানের আমন্ত্রণ
Published: 25th, September 2025 GMT
ক্লাব ডি মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ও স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিলো তুর্ক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সংগঠনের সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দেখা করেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়।
সাক্ষাতে দানিলো তুর্ক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে অধ্যাপক ইউনূসের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “আপনাকে আমাদের অনুষ্ঠানে পেয়ে আমরা সম্মানিত হবো। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।”
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জুলাই বিদ্রোহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই আন্দোলন বিশ্বকে বিস্মিত করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “বৈশ্বিক নেতাদের এ ধরনের রূপান্তর আরো গভীরভাবে বোঝা জরুরি।” পাশাপাশি ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক চর্চার প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস আমন্ত্রণকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমরা এখনো জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, কীভাবে দেশকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে নেতৃত্ব দেবো তা খুঁজে নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য এই পথেই অটল থাকা।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত বৈশ্বিক সংগঠন ক্লাব ডি মাদ্রিদ বিশ্বের বৃহত্তম ফোরাম হিসেবে গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করার কাজে ভূমিকা রাখছে।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের সদর দপ্তর স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে। এখন শতাধিক সাবেক রাষ্ট্রনেতা যুক্ত আছেন এতে। সক্রিয় রাজনীতির বাইরে থেকেও তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক প্রভাব ব্যবহার করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা দেন।
বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।
প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।
প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।
তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।
অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।
সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।
ইসরাত জাহান
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়