বৃষ্টির মধ্যেও কমছে না ঢাকার বায়ুদূষণ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৫৭। এই মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজধানীতে গত রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সকালেও আকাশ মেঘলা, কোথাও কোথাও বৃষ্টিও আছে। তারপরও দূষণ পরিস্থিত নাজুক। এর কারণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না—এমন কিছু বিষয়ের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৭টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। বায়ুদূষণে আজ শীর্ষ স্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ১৮২।

বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

নগরীর তিন স্থানে দূষণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এর মধ্যে আছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, মাদানী এভিনিউয়ের বেইস এজ ওয়াটার এবং মিরপুরের শিয়ালবাড়ি সরকারি কোয়ার্টার এলাকা। এসব এলাকার বায়ুর স্কোর যথাক্রমে ১৭৭, ১৭০ ও ১৬৭।

নগরবাসীর জন্য পরামর্শ

আজ ঢাকার যে বায়ুমান, তার পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম করা এড়িয়ে যেতে হবে।

কেন এই দূষণ

বর্ষাকালে বায়ুদূষণ কম থাকে মূলত বৃষ্টির কারণে। মোটামুটি মে মাসের শেষ থেকেই কমে আসতে থাকে দূষণ। কারণ, এ সময় থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। প্রাকৃতিক এ ঘটনা ছাড়া দূষণ রোধে আর কোনো ব্যবস্থাই আসলে কার্যকর নেই বলেই মনে করেন দূষণবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। সরকারি নানা উদ্যোগ ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বৃষ্টি হলে নগরীর দূষণ কমে কয়েক দিন, তারপর আবার বাড়ে। জুলাই ও আগস্ট মাসে এবারও বায়ুদূষণ অপেক্ষাকৃত কম ছিল এবং তা অবশ্যই বৃষ্টির কারণে। চলতি মাসেও মোটামুটি বৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছেও। তারপরও দূষণ কমছে না কেন? এর উত্তরে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ার‍ম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ২০০২ সাল থেকে টু স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত বেবিট্যাক্সি নিষিদ্ধের পর ঢাকার দূষণের উপাদান হিসেবে ক্ষতিকর গ্যাসীয় উপাদানের দিকে নজর নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর শুধু ধুলোবালুকেই কারণ হিসেবে মনে করছে। কিন্তু ঢাকা ও এর আশপাশে কলকারখানার ক্ষতিকর গ্যাস এবং যানবাহনের গ্যাসীয় উপাদান বন্ধে তেমন নজর নেই এবং কারণগুলো উপেক্ষিত থাকছে, এতে দূষণ বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, রাজধানী ও এর আশপাশে কলকারখানাগুলো রাতভর চালু থাকে। যানবাহনও থাকে। এখান থেকে নির্গগ কার্বন ডাই–অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড রাজধানীর এখনকার দূষণে বড় ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়ার চূড়ান্ত সময় এসেছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাষট্টিতে নগরবাউল জেমস

নগরবাউল জেমস। তার পুরো নাম মাহফুজ আনাম জেমস। ভক্তরা তাকে ‘গুরু’ বলেই ডাকেন। জেমস মানেই তারুণ্যের উন্মাদনা। তার নাম অনেক তরুণের স্বপ্নের সূতিকাগার। নিজের মেধা আর মননে হয়ে ওঠেছেন এ প্রজন্মের গুরু। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) নন্দিত এই ব্যান্ড সংগীতশিল্পী জেমসের জন্মদিন। ৬১ বছর পূর্ণ করে বাষট্টিতে পা দিতে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছেন জেমস। 

১৯৬৪ সালে ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। কিন্তু তার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে চট্টগ্রামের সৈকতের বালুচরে কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব। জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

আরো পড়ুন:

জুবিনের গাওয়া গান আমাকে বিখ্যাত করেছে: অনন্ত জলিল

পণ্ডিত চন্নুলাল মারা গেছেন

পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সংগীতচর্চা শুরু করেন জেমস। একসময় সংগীতের জন্য ঘর ছাড়েন তিনি। পালিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে উঠেন। সেখান থেকেই তার সংগীতের মূল ক্যারিয়ার শুরু। 

১৯৮০ সালে ‘ফিলিংস’ নামে ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন জেমস। এর মাধ্যমে প্রথম তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে এহসান এলাহী ফানটিকে নিয়ে নগর বাউল নামে ব্যান্ড গঠন করেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে প্রকাশ করেন প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন জেমস। এ অ্যালবামের গানগুলো দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। 

বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে জেমসের খ্যাতি ছড়িয়েছে বিশ্বে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে রয়েছে জেমসের অনেক ভক্ত। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন জেমস। চলচ্চিত্রটিতে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। 

২০০৬ সালে ‘ওহ লামহে’ চলচ্চিত্রের ‘চল চলে’ গানে কণ্ঠ দেন জেমস। ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন এ মেট্টো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। এতে ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। সর্বশেষ হিন্দি চলচ্চিত্রে ‘ওয়ার্নিং’-এ প্লেব্যাক করেন জেমস। ‘বেবাসি’ শিরোনামের গানটি ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। 

জেমসের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান হলো—‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে আমি বলছি, মা’, ‘দুখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘বাবা কত দিন’, ‘বিজলী’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মিরাবাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ প্রভৃতি। 

নগর বাউল থেকে প্রকাশিত অ্যালবামগুলো হলো—‘স্টেশন রোড’ (১৯৮৭), ‘জেল থেকে বলছি’ (১৯৯৩), ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮), ‘দুষ্ট ছেলের দল’ (২০০১)। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো— ‘অনন্যা’ (১৯৮৯), ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনি দুঃখ করোনা’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৭), ‘কাল যমুনা’ (২০০৮)।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝিনাইদহে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় শিশুসহ দুজন নিহত
  • বাষট্টিতে নগরবাউল জেমস
  • বৃষ্টিতে জলমগ্ন ঢাকা, দুর্ভোগে নগরবাসী