সিলেটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভবন সংরক্ষণের দাবিতে স্মারকলিপি
Published: 25th, September 2025 GMT
সিলেটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান সৈন্যদলের সামরিক ব্যারাক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শহিদ সামসুদ্দিন আহমদ ছাত্রাবাস সংস্কার করে সংরক্ষণ ও রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শতবর্ষী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে নির্মিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম চালুর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে দুটি সংগঠন।
গতকাল বুধবার বিকেলে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন এবং পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেট নগরের চৌহাট্টায় সীমানাপ্রাচীরবেষ্টিত খোলা পরিসরে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পুরোনো ক্যাম্পাস অবস্থিত। মেডিকেলের এ ক্যাম্পাস ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। জার্মান সৈন্যদের সামরিক ব্যারাক হিসেবে গড়ে ওঠা স্থাপনাটিই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক সামসুদ্দিন আহমেদ ছাত্রাবাস নামে পরিচিত। বেশ কয়েকটি ভবনে এ ছাত্রাবাস পরিচালিত হচ্ছে। স্থাপনাটির বয়স ৮৫ বছর।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত স্থাপনাগুলো সিলেট সদর হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৪৮ সালে সিলেট মেডিকেল স্কুল স্থাপিত হলে এটি ছাত্রাবাস ও হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৬২ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এ ছাত্রাবাস কলেজ শিক্ষার্থীদের মূল হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছাত্রাবাসটি দুটি যুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এটি মিলিটারি ব্যারাক সংস্কৃতির একমাত্র চিহ্ন। আর মুক্তিযুদ্ধ এখান থেকে সংগঠিত হওয়ার তথ্যাবলিও রয়েছে। আমাদের স্থাপত্য ঐতিহ্যের আসামবাড়ী কাঠামো সরকারি স্থাপনার মধ্যে টিকে থাকারও একটি নিদর্শন।
পুরোনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এসব স্থাপনা অপসারণের প্রাক্–প্রস্তুতি হিসেবে বৃক্ষ কর্তনের নিলাম বিজ্ঞপ্তি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেটের নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী ও ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণসচেতন মানুষ মনে করেন, এ ঐতিহ্যবিজড়িত স্থাপনাগুলো কেবল জরাজীর্ণ স্থাপনা নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের দৃশ্যমান প্রতীক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এবং ঐতিহ্যবিজড়িত স্থাপত্য নকশার ভবন ধ্বংসের উদ্যোগে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঐতিহাসিক এ স্থাপনার ঐতিহ্য, নান্দনিকতা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আইনি মর্যাদা রক্ষার্থে এটি ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে জরুরি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট জেলা হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো হাসপাতালটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে। এতে বলা হয়, নাগরিক সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে ঐতিহ্যবিজড়িত আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য খাত–সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এ হাসপাতাল ভবনের দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না কেউ। ফলে হাসপাতাল কমপ্লেক্স বুঝিয়ে দেওয়ার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না গণপূর্ত বিভাগ।
সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত একটি হাসপাতাল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকলেও এটি চালুর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাসপাতাল চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতা স্পষ্টত দৃশ্যমান। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারি সম্পদের বিপুল অপচয় হচ্ছে, তেমনি সিলেটের জনসাধারণ স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ নির্মাণকাজের শুরুতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছিলেন, এটি চালু হলে ওসমানী হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। সিলেট অঞ্চলের রোগীরা এখান থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিতে পারবেন।
স্মারকলিপি হস্তান্তর করে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল করিম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমরা চাই, পরিবর্তিত অবস্থায় যেন আগের সরকারের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষে বিষয়টি দেখে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আমাদের জানিয়েছেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম রকল প ত ব যবহ ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড, ঘনীভূত হতে পারে লঘুচাপ
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে স্থল গভীর নিম্নচাপটি উপকূলীয় ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে আজ দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে, আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়। ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে আছে।
ঢাকা/মাসুদ