রোহিঙ্গা সংকটে বর্তমানে মানবিক সাড়া অপর্যাপ্ত। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান। এ ছাড়া আরাকান আর্মির অধীন মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকেও নিরাপদ মনে করছেন না তাঁরা।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘রোহিঙ্গা পার্সপেক্টিভস অন পাথওয়েজ টু আ সেফ, ডিগনিফায়েড অ্যান্ড পিসফুল ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের এক সম্মেলনকে সামনে রেখে এটি প্রকাশ করা হলো।

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গবেষণামূলক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গবেষণায় কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের ১২৫ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরও দাবি জানিয়েছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসন–পরিকল্পনা বা পথনকশা প্রণয়নে শিক্ষিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা মনে করছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য তাঁদের (শিক্ষিত রোহিঙ্গা) মতামত ও অভিজ্ঞতা অপরিহার্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গারা চাইছেন জাতিসংঘ, আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলো ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সক্রিয় নেতৃত্ব মিয়ানমারের পক্ষগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করুক। তাঁরা মনে করেন, শুধু স্থানীয় বা মানবিক সহায়তাই যথেষ্ট নয়; নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি চুক্তি ও অতীতের অপরাধের দায় নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, শুধু কথায় নয়, এর জন্য প্রয়োজন আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা; যাতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায়।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরও দাবি জানিয়েছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসন–পরিকল্পনা বা পথনকশা প্রণয়নে শিক্ষিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা মনে করছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য তাঁদের (শিক্ষিত রোহিঙ্গা) মতামত ও অভিজ্ঞতা অপরিহার্য।

রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মূল শর্ত হিসেবে পূর্ণ নাগরিকত্ব ও রোহিঙ্গা পরিচয়ের স্বীকৃতি, সমান অধিকার, শিক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, জীবিকা ও অবাধ চলাচলের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তাঁরা রাখাইনের মংডু, বুথিডং ও রাথেডং নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অঞ্চল বা একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের ভূমি ফেরত, ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের ৭০ শতাংশের বেশি মনে করেন, রাখাইন রাজ্য দখলে রাখা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি তাঁদের নিঃশেষ করতে চাইছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে তাঁদের মিয়ানমারে ফেরানো হলে তাঁরা জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত হওয়া, ধর্মীয় নিপীড়ন বা নির্দিষ্ট আশ্রয়শিবিরের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ জীবনযাপনের মুখোমুখি হবেন।আরাকান আর্মি অনিরাপদ

সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের ৭০ শতাংশের বেশি মনে করেন, রাখাইন রাজ্য দখলে রাখা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) তাঁদের নিঃশেষ করতে চাইছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে তাঁদের মিয়ানমারে ফেরানো হলে তাঁরা জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত হওয়া, ধর্মীয় নিপীড়ন বা নির্দিষ্ট আশ্রয়শিবিরের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ জীবনযাপনের মুখোমুখি হবেন।

নির্বিচার গ্রেপ্তার, অপহরণ ও চলাফেরার ওপর সহিংস বিধিনিষেধ আরোপসহ নানা ধরনের নির্যাতনের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এ ক্ষেত্রে নারী ও কিশোরীরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে আছেন।

অনেক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে ২০১৭ সালে নিপীড়ন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে ‘ট্রমার’ মুখোমুখি হওয়ায় সেখানে ফিরে যেতে ব্যক্তিগতভাবে অনিচ্ছুক তাঁরা। তবে তাঁরা তাঁদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে প্রত্যাবাসন চান।

তবে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত তীব্রতর হওয়ার পাশাপাশি জান্তার অধীন নির্বাচনকে ৯৫ শতাংশ মানুষ অর্থহীন বলে প্রত্যাখ্যান করায় দ্রুত ফেরার আশাটা খুবই ক্ষীণ।

আরও পড়ুনরোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জটিলতা কাটছে না কেন২৫ আগস্ট ২০২৫

২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মতে, আরাকান আর্মির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। তাই রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম নয় তারা।

৬৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সংকটের মূল কারণ হিসেবে জাতিগত বৈষম্য ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে চিহ্নিত করেছেন।

এ অংশগ্রহণকারীরা বলেন, মিয়ানমারে মুসলিমভীতি স্বপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়েছে; যাতে তাঁদের অধিকার ও নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যায়। তবে প্রায় সব রোহিঙ্গাই রাখাইনের বৌদ্ধদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চেয়েছেন। বিশেষত, রোহিঙ্গা যুবকেরা বলেছেন, যদি তাঁদের সঙ্গে সম–আচরণ করা হয়, তবে তাঁরা দেশের (মিয়ানমার) উন্নয়নে অবদান রাখতে ইচ্ছুক।

আরও পড়ুনরোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি২৫ আগস্ট ২০২৫নেতৃত্বের সংকট

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বের সংকটের কথাও উঠে এসেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ জানান, তাঁদের কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নেই। আর ৬০ শতাংশ নারী জানান, তাঁরা বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে সামান্যই সচেতন বা কোনো সচেতনই নন।

সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশ্রয়শিবিরের ‘মাঝি’ (আশ্রয়শিবির–ভিত্তিক স্থানীয় প্রতিনিধি) ও প্রবাসী নেতাদের ওপর বড় রকমের অবিশ্বাস রয়েছে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বার্থপরতার অভিযোগ আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও নিরাপত্তার অভাবের সঙ্গে লড়ছেন। যুবকদের শিক্ষা ও জীবিকা তৈরির সুযোগকে তাঁরা তাঁদের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনের উপসংহারে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরাকান আর্মির নির্যাতন পর্যবেক্ষণ করা, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে মূলধারায় স্বীকৃতি দেওয়া (তাঁদের ওপর অত্যাচার–নির্যাতনের ঘটনাকে মেনে নেওয়া ও সামনে নিয়ে আসা), রোহিঙ্গা তরুণ ও সুশীল সমাজে বিনিয়োগ করা, উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করা এবং প্রত্যাবাসন–পরিকল্পনায় রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা; যার মধ্যে জমি ফেরত দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত।

আরও পড়ুনরোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে আনতেই জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশন২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর র খ ইন র ন র পদ করছ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষা: প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ কেন্দ্রে ২০২৪ সালের ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থী থাকলে নিচের শর্তে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় পাবেন। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, আবেদন শুরু ২৩ নভেম্বর১৩ নভেম্বর ২০২৫

দরকারি শর্ত জেনে নিন

১. অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘প্রতিবন্ধী সনদ’ থাকতে হবে।

২. পরীক্ষা শুরুর আগে অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের তথ্য (প্রবেশপত্রের কপি ও প্রতিবন্ধী সনদের কপি) যাচাই করে পরীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

৩. অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের তথ্য (প্রবেশপত্রের কপি ও প্রতিবন্ধী সনদের কপি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বা সংশ্লিষ্ট উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর পাঠাবেন।

আরও পড়ুনহাজী দানেশের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, ১৭৯৫ আসনের আবেদন শুরু ১৬ নভেম্বর১৩ নভেম্বর ২০২৫

৪. প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র আলাদাভাবে সিলগালা করে ‘মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রথম বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর–১৭০৪’ এই ঠিকানায় পাঠাতে হবে।

৫. প্যাকেটের ওপর ‘প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র’ লাল কালিতে লিখতে হবে।

# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট : www.na.ac.bd

আরও পড়ুনসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৬ সালে ভর্তির তথ্য, আবেদন শুরু ২১ নভেম্বর১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষা: প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট
  • ঢাবিতে ‘আর্ট ফর ইক্যুয়ালিট` ওয়ার্কশপ