সাভারে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ, টাকা-স্বর্ণালংকার লুট
Published: 25th, September 2025 GMT
ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ি এলাকায় রাতের আঁধারে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির গ্রিল কেটে প্রবেশ করে ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে।
বাড়ির মালিকের দাবি, অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের বেঁধে প্রায় ১০-১৫ লাখ টাকা ও ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
আরো পড়ুন:
মুরাদনগরে মন্দিরের জমি থেকে মাটি লুট
গাজীপুরে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ি তিন রাস্তার মোড় এলাকার হাজী মো.
ভুক্তভোগী শাহজাহান মিয়ার দাবি, ডাকাতরা সংখ্যায় পাঁচজন ছিল। তাদের দুজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং বাকিদের হাতে দেশীয় চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। ঘটনার সময় আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে বাড়ির বাসিন্দাদের হাত-পা বেঁধে এ লুটপাট চালায় তারা।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, “বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ফ্ল্যাটের একটি বারান্দার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তারা আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে আমার ছোট ছেলেকে জিম্মি করে তার চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা আমার ঘরে প্রবেশ করে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে আমার চোখ ও হাত এবং আমার স্ত্রীর হাত বেঁধে ফেলে ঘরে থাকা নগদ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর চোখ বাঁধা না থাকায় তিনি কক্ষে পাঁচজনকে দেখেছেন। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল।”
শাহজাহান মিয়ার বড় ছেলে মো. ইমরান হোসেন অনিক বলেন, “দুর্বৃত্তরা প্রথমে বাসার একটি বারান্দার গ্রিল কেটে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম অস্ত্রের মুখে আমার ছোট ভাইকে বেঁধে ফেলে। এরপর বাবা-মায়ের ঘরে ঢুকে পিস্তল ঠেকিয়ে তাদের আটকানোর পর আমাদের রুমে ঢুকে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে আটকে ফেলে। সবাইকে আটকানোর পর ওরা সব রুমে ঢুকে একে একে চেক করে বাসায় থাকা সব নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।”
এদিকে পুলিশ বলছে ডাকাতি নয়, একটি চুরির অভিযোগ পেয়েছেন তারা। ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির বলেন, “বারান্দার গ্রিল কেটে একটি চুরির ঘটনার লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ঢাকা/আরিফুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন য় স ত র স বর ণ ল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’