চট্টগ্রামের লইট্টা মাছ যেভাবে বিলেত জয় করল
Published: 25th, September 2025 GMT
আমাদের এক পরিচিত বড় ভাই যেকোনো প্রসঙ্গে লইট্টা মাছ নিয়ে আলাপ জুড়ে দিতেন। হয়তো রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, বড় ভাই চট করে বলতেন, ‘কথা সেটা নয়। আজ পাঁচ কেজি লইট্টা মাছ কিনলাম। সকালে তোমাদের ভাবি আর আমি মিলে কেটেকুটে রান্না করলাম।’
এখানেই শেষ নয়। রান্নার রেসিপিও গড় গড় করে বলে যেতেন তিনি। ‘পাঁচ কেজি লইট্টা মাছের জন্য কেজিখানেক পেঁয়াজ, অল্প রসুন, টমেটো কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা লাগবে। প্রথমে তেলে পেঁয়াজ লাল করে ভেজে নিতে হবে। এরপর বাকি মসলা হলুদ, লাল মরিচ, কাঁচা মরিচ দিয়ে কষিয়ে টমেটো দিতে হবে। কষানো শেষ হলে মাছ দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। তেল উঠে এলে মাছ নিচে বসে যাবে। এরপর মাখনের মতো কেটে কেটে খাও।’ এসব বলতে বলতে বড় ভাইয়ের জিবে জল আসত। বারবার ঢোক গিলতে হতো। লোভনীয় লইট্টা মাছ যেন তাঁর সামনেই এনে রাখা হয়েছে।
কেবল এই পরিচিত বড় ভাই নন, চট্টগ্রামের মানুষ হলেই লইট্টা মাছের প্রতি আলাদা টান থাকবে। এ অঞ্চলের জনসংস্কৃতির ও খাদ্যের ইতিহাসের সঙ্গে মাছটি গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। পাশাপাশি দেশকালের সীমানা ডিঙিয়ে ভিনদেশিদের পাতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লইট্টা।
চাটগাঁইয়া মাইনষে খায়চট্টগ্রামের লোকগীতি রচয়িতা প্রখ্যাত বাউলশিল্পী আব্দুল গফুর হালীর একটা গান আছে এমন, ‘চাটগাঁইয়া মাইনষে খায় দে/ আউল্লা চইলর ভাত/ লইট্টা মাছর নরম কেডা/ ন বাজে গলাত।’
লইট্টা মাছের শুঁটকি চাটগাঁয় যাকে ফুনি বলা হয়, তা আলু দিয়ে কিংবা কচুর লতি দিয়ে রান্না করলে আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। তাজা মাছের পাশাপাশি লইট্টা শুঁটকিও সারা বছরই খাওয়া হয়। লইট্টা মাছের নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম নেই। তবে বর্ষার পর শীতের শুরুতে বেশি ধরা পড়ে বলে জেলে জানান। এ সময় দামও কিছুটা কম থাকে এ মাছের।
চট্টগ্রামে লইট্টা মাছ ভুনা অথবা রসা রান্না দুটোরই প্রচলন আছে। ভুনা মাছে কোনো ধরনের ঝোল থাকে না। অপর দিকে রসা রান্নায় ঝোল থাকবে। তবে সব ধরনের রান্নায় পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, আদাবাটা, মরিচ ও হলুদ আবশ্যক।অনেককে বলতে শুনেছি, কাঁচাবাজার একটা অঞ্চলের মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। বাজার ঘুরেই বোঝা যায় মানুষগুলো কেমন। চট্টগ্রামের বাজারে গেলেও এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, লইট্টা মাছ নিয়ে যাঁরা বসেন, তাঁদের অনেকেই ক্রেতাদের বিচিত্র কথায় প্রলুব্ধ করেন। একবার এক মাছওয়ালাকে বলতে শুনেছি, ‘ওবা লই য, রসগুল্লা রসগুল্লা।’
এই রসগোল্লার লোভে ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ভুনা বা রসা রান্না কিংবা ঝুরি ভাজি সব রকমেই লইট্টা অতুলনীয়। আবার দামটা সস্তার পাঙাশ মাছের চেয়েও কম।
চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গানে পাওয়া গেল, ‘ইলিশ মাছর তিরিশ কেডা/ লইট্টা মাছর লাল দাঁড়ি/ আঁর ভাবিয়ে মরিচ বাডের/ কেইল লাড়ি লাড়ি।’ লইট্টা মাছের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দৈনন্দিন জীবনের এই ছবিই বলে দেয় মাছটি চট্টগ্রামের আবহমান খাদ্য সংস্কৃতিতে কত বড় জায়গা ধারণ করে আছে।
চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারের ব্রিজঘাটের মাছ বাজারে আসা লইট্টা মাছ। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হালুয়াঘাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করতে পারেনি।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়েটি উপজেলার একটি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার দুপুরে সে তার বন্ধুর সঙ্গে একটি পার্কে বেড়াতে যায়। বিকেলের দিকে সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে কিশোরীকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেয় বন্ধু। এ সময় অটোরিকশাচালক হালুয়াঘাট উপজেলা শহরে পূজামণ্ডপ দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। একপর্যায়ে মেয়েটিকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে গামারীতলা এলাকায় মেয়েটিকে নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশাচালক চলে যায়। এরপর মেয়েটিকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে পুলিশ সোমবার রাতেই অভিযুক্ত আবুল বাশারের (২৫) বাড়িতে যায়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় পুলিশ তাঁর অটোরিকশাটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানায় অভিযোগ দিতে যায় মেয়েটির পরিবার। এ বিষয়ে রাতে হালুয়াঘাট থানার ওসি হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেদের কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে মেয়েটির মা বাদী হয়ে অভিযোগ দিচ্ছেন। অভিযোগ হাতে পেলেই আমরা রাতেই মামলা হিসেবে গ্রহণ করব। অভিযুক্তকেও আমরা ধরে ফেলব।’