নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই উৎপাদনে যাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ
Published: 25th, September 2025 GMT
বিদ্যুৎ উৎপাদনের চূড়ান্ত ধাপে আছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। দীর্ঘ এক দশক ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোসাটমের তত্ত্বাবধানে অবকাঠামো নির্মাণ শেষে এখন চলছে পরমাণু জ্বালানি ইউরেনিয়াম লোডের প্রস্তুতি। তবে, চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে একের পর এক নেতিবাচক খবরে প্রকল্পটি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
প্রকল্পের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা পরিকল্পিতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করে উদ্বেগ ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি রূপপুর প্রকল্প কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া এবং আইএইএর নিরাপত্তার শর্ত পূরণ না করে যেনতেনভাবে উৎপাদনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড.
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারমাণবিক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার কেন্দ্রীয় ইন্টার-গভর্মেন্টাল ফোরাম হিসেবে আইএইএর আইনগত লক্ষ্য হলো— বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগানো এবং সামরিক ব্যবহার প্রতিরোধ করা। সংস্থাটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নানা পরামর্শমূলক ও পিয়ার রিভিউ সেবা দেয়, যা জাতীয় পর্যায়ে পারমাণবিক অবকাঠামো ও নিরাপত্তা অনুশীলনকে প্রতিষ্ঠিত ও সুদৃঢ় করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, আইএইএর একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ১০ থেকে ২৭ আগস্ট রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রি-ওসার্ট মিশন পরিচালনা করে। এরপর সংস্থাটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রেস নোটে তাদের সফর ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুপারিশ ও মতামত দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিনিধিদল তিন মাসের মধ্যে রূপপুর প্রকল্প নিয়ে পর্যবেক্ষণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সুপারিশ ও পরামর্শ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পর এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে চুল্লিতে জ্বালানি লোড করা সম্ভব হবে। এর আগে কোনোভাবেই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার সুযোগ নেই।
এদিকে, আইএইএর গোপন প্রতিবেদনকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর চেষ্টা চলছে এবং এর ফলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এসব প্রচারের কারণে প্রকল্প এলাকা জুড়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তবে, প্রকল্প কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক প্রচারণাকে অপপ্রচার ও ভুল তথ্যসম্বলিত বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের দাবি, এটি রূপপুর প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিকল্পিত চক্রান্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রি-অপারেশনাল সেফটি রিভিউ টিম (প্রি-ওসার্ট) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করে নানা সুপারিশ ও পরামর্শসম্বলিত একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশকে দিয়েছে। বাংলাদেশের মতামত পাওয়ার তিন মাস পর আইএইএ চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এর পরবর্তী ধাপে সংস্থাটি চূড়ান্ত ওসার্ট মিশন পাঠাবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে গেলে তখন কেন্দ্রটি পারমাণবিক জ্বালানি লোডিংয়ের জন্য প্রস্তুত হবে।
আইএইএর পর্যবেক্ষণে যেসব নির্দেশনা এসেছে, তা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জরুরি। পরীক্ষাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—প্রথমত: নন-নিউক্লিয়ার টেস্ট, যা ফুয়েল লোডিংয়ের আগে সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয়ত: নিউক্লিয়ার টেস্ট, যা ফুয়েল লোডিংয়ের পরে পরিচালিত হয়।
রূপপুর প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি নন-নিউক্লিয়ার টেস্ট করার প্রয়োজন আছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০০টি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো দ্রুত সঠিকভাবে করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফুয়েল লোডিংয়ের আগেই সব পরীক্ষা শেষ করতে কাজ চলছে। এগুলো শেষ করেই পরবর্তীতে বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন (বায়েক) এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বায়রা) অনুমোদনক্রমে ফুয়েল লোডিং কার্যক্রম শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো- ১. অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপকে আরো উন্নত করা। ২. প্ল্যান্ট অপারেশনের মান ও প্রত্যাশা অনুযায়ী তত্ত্বাবধানের গুণমান এবং কন্ডাক্ট অব অপারেশনের মানদণ্ডের প্রয়োগকে আরো জোরদার করা। ৩. কমিশনিং চলাকালীন যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে সিস্টেম ও উপাদানের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং তাদের অবনতি প্রতিরোধ করা যায়, যা নিরাপত্তা ফাংশনে প্রভাব ফেলতে পারে।
সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক বিধিমালা ও স্ট্যান্ডার্ড মেনে কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আলোচনায় উঠে এসেছে যে, ইউনিট–২ এর কিছু ভালভ বা যন্ত্রাংশ ইউনিট–১ এ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, ইউনিট–২ সম্পূর্ণভাবে ইউনিট–১ এর প্রতিলিপি। তাই, এ ধরনের সমন্বয় প্রযুক্তিগতভাবে গ্রহণযোগ্য।
সুপারিশমালা নিয়ে যা বলছে রূপপুর কর্তৃপক্ষ
আইএইএর পর্যবেক্ষণ সুপারিশমালা ও সতর্কতা নির্দেশনাকে স্বাভাবিক বলে মনে করছে রূপপুর কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা কোনো নির্দিষ্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গোপনীয় প্রতিবেদন দেয় না। সংস্থাটি কোনো মিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পর তা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করে থাকে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত ও সামরিক ব্যবহার প্রতিরোধে অঙ্গীকার করা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সংস্থাটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরামর্শমূলক সেবা দেয়। সে ধারাবাহিকতায় আইএইএ রূপপুর প্রকল্পের যে ১৭টি বিষয় চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষণ সুপারিশ দিয়েছে, তা প্রকল্পের আন্তর্জাতিক মান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নের নির্দেশনাই প্রমাণ করে নিরপত্তায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি রেখে প্রকল্প চালুর সুযোগ নেই।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান বলেছেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনসিপিবিএল), স্বাধীন কোম্পানি হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালিত। এনসিপিবিএল ন্যূনতম ঘাটতি বা ত্রুটি রেখে কোনোভাবেই প্ল্যান্ট পরিচালনা করবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং প্রয়োজনে কাজ সম্পন্ন হতে বিলম্ব হলেও এনসিপিবিএলের কোনো বাধ্যবাধকতা বা তাড়াহুড়ো নেই। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে শতভাগ নিরাপদ হয়, সেজন্য পরামর্শ নিতেই আইএইএর প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পরামর্শ মোতাবেক যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এবং কমিশনের অনুমোদন পেলে জ্বালানি লোড করা হবে। তার আগে এ কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে না। প্রি-ওসার্ট মিশনের পর ফাইনাল ওসার্ট মিশন হবে। সুতরাং, প্রি-ওসার্ট মিশনের পর্যবেক্ষণ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এমন কিছু পরীক্ষা বাকি আছে, যেগুলো সম্পন্ন করতে খুবই অল্প সময় লাগে। ফলে, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রি-ওসার্ট মিশনের পর্যবেক্ষণগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। অন্য দেশের প্রি-ওসার্ট মিশনের প্রতিবেদনের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য আইএইএ যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা অনেক ভালো।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র কর মকর ত ব যবস থ ব যবহ র পর চ ল র জন য জন য প পর ক ষ পরম ণ ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফে পাহাড় থেকে নারী-শিশুসহ ৩৮ জনকে উদ্ধার, আটক ২
কক্সবাজারের টেকনাফে যৌথ অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের কবল থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৮ জনকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এ সময় আটক করা হয় দুইজনকে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরো পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জনে নৌকাডুবি, নিখোঁজ এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার
টেকনাফে যৌথ অভিযানে নারী-শিশুসহ ২১ জন উদ্ধার
আরো পড়ুন: টেকনাফে যৌথ অভিযানে নারী-শিশুসহ ২১ জন উদ্ধার
তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন গহীন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে ১৮ জন নারী, ১২ জন পুরুষ ও আটজন শিশুসহ মোট ৩৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন: টেকনাফের পাহাড় থেকে নারী-শিশুসহ উদ্ধার ৮
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা মুক্তিপণ আদায় এবং বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের বন্দি রেখে নির্যাতন করছিল। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের এবং আটককৃত পাচারকারীদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ