ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে ১২টি অনিয়ম ও অসংগতির অভিযোগ তুলেছে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগগুলো তুলে ধরে তারা।

এর আগে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ১১টি অভিযোগ করেছিল ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময় স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি প্রার্থী আবদুল কাদেরও এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এবার সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মেঘমল্লার বসু ১২টি অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে মেঘমল্লার বসু বলেন, আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসন ভেঙে দেওয়া প্রতিষ্ঠান, জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত সাম্রাজ্যবাদ ও এনজিও পুষ্ট বিরাজনীতিকরণের সরকার, অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে অংশ নিই। এই দুর্বিষহ সময়ে আমাদের পাশে থাকা সকল শিক্ষার্থী, ভোটার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মী ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তবে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি বিশেষ মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে এবং নির্বাচনের দিন ভুয়া প্রেস-পাস ব্যবহারসহ নানা উপায়ে নির্বাচন প্রভাবিত করেছে। প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ব্যর্থতার কারণে অনিয়ম সমাধান হয়নি, ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

প্রতিরোধ পর্ষদের এই নেতা আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, তাঁদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় লড়াই অব্যাহত রাখব। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনিয়ম শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত ভোটাধিকারকে ব্যাহত করেছে, তবু আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের পথেই আছি।

প্রতিরোধ পর্ষদের ১২ অনিয়মের অভিযোগ

১.

টিএসসিসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং ভোটারের উপস্থিতি ছাড়া ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে দেওয়াসহ নানাবিধ জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচনী সময়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

২. বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোটদানের হারে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হওয়ায় অধিকাংশ প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে স্বাক্ষরকৃত ভোটারদের তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন এ বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

৩. বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারে কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এ ছাড়া ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, কেন্দ্রসমূহে সরবরাহকৃত, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোট গ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।

৪. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন স্থান থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতিমধ্যেই এসেছে।

৫. ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিল না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

৬. ওএমআর ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ এসেছে। একটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট কর্তৃক ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে ওএমআর মেশিনের নিচে দেওয়া ব্যালট পেপারে যেই প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হয়েছে, সফটওয়‍্যারে সেই ভোটটি অন্য প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও প্রশাসন কিছু বলেনি।

৭. ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চার দিন পর, তথা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি।

৮. ভোট গ্রহণের আগের মধ্যরাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের এজেন্টদের বাদ দেওয়া হয়। কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।

৯. ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার না করা এবং একই ভোটার একাধিকবার ভোট দিতে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে। উল্লেখ্য ডাকসুতে নির্বাচিত একজন সদস্য এই অভিযোগের বিষয়টি নির্বাচনের দিনই মিডিয়ায় বললেও এই বিষয়ে প্রশাসন কোনো বক্তব্য দেয়নি।

১০. ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর ভোট গণনার সময়ও অনেক ধরনের অনিয়ম পোলিং এজেন্টরা প্রত্যক্ষ করেছেন। এসবের মধ্যে ভোট গণনা শুরু করতে গড়িমসি, নির্দিষ্ট প্যানেলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে গণনার স্থলে অবস্থান, গণনার মেশিন ও প্রোগ্রাম–সম্পর্কিত ধোঁয়াশা, গণনার সময় পোলিং এজেন্টদের মেশিন থেকে দূরে রাখা উল্লেখযোগ্য। এসব তাঁদের মনে নানা আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

১১. কোন প্রক্রিয়ায় পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক পোলিং অফিসার নিয়োগের কথা থাকলেও তাদের ঢাবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলি তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকায় বিভিন্ন পোলিং অফিসাররা নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।

১২. অস্বচ্ছ ব্যালট বক্স ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ভোটকেন্দ্রে মার্কার শেষ হয়ে যাওয়ায় ভোটারদের বলপেন দিয়ে ব্যালট পেপারে ক্রস দিতে বলা হয়েছে। বলপেনে ক্রস দেওয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি বলে অনেক ভোট গণনা হয়নি বলে অনেক পোলিং এজেন্ট লক্ষ করেছেন।

মেঘমল্লার বসু আরও জানান, এসব বিষয়ে বারবার অবহিত করা হলেও প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করেছে। এর ফলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ একটি অগণতান্ত্রিক, অনিয়মে পূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে।

আরও পড়ুন৭ সেপ্টেম্বর গাউসুল আজমের ছাপাখানায় ডাকসুর বিপুলসংখ্যক ব্যালট অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়: ছাত্রদল২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ টক ন দ র ব শ বব দ য স প ট ম বর ভ ট গণন উপস থ ত অফ স র কর ছ ন কর ত ক গ রহণ ব যবহ গণন র

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা

কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’

সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।

সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ