দৈনন্দিন জীবনের ৬টি সহজ সুন্নাহ
Published: 25th, September 2025 GMT
রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ আমাদের জীবনে অফুরন্ত বরকত নিয়ে আসে এবং আত্মিক প্রশান্তি প্রদান করে। একজন মুসলিমের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ গভীরভাবে জড়িত।
সুন্নাহ পালনের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর ভালোবাসা ও ক্ষমা লাভ করতে পারি। মহান আল্লাহ বলেন, “বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
কিছু সুন্নাহ আমাদের কাছে অধিক পরিচিত, যেমন—কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, ডান হাতে খাবার খাওয়া, তিন চুমুকে পানি পান করা, হাসিমুখে থাকা ইত্যাদি।
বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১তবে এমন কিছু সুন্নাহ রয়েছে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সহজে সম্পৃক্ত, কিন্তু আমরা সেগুলো সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নই। এই নিবন্ধে কয়েকটি সহজ ও ব্যবহারিক সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো আমাদের জীবনে ইবাদতের রূপ নিতে পারে।
১.ঘুমের আবেশ দূর করা
আধুনিক জীবনে ঘুম থেকে উঠেই আমরা প্রায়শই ফোন হাতে নিই বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে যাই। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ ছিল ঘুম থেকে জেগে প্রথমে শরীর থেকে ঘুমের আবেশ দূর করা।
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ঘুম থেকে জেগে বসতেন এবং দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মুছে ঘুমের চিহ্ন দূর করতেন। এরপর তিনি সুরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। তারপর একটি ঝুলন্ত মশক থেকে পানি নিয়ে উত্তমরূপে ওজু করে নামাজে দাঁড়াতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯৮)
আরও পড়ুনউষ্ণতা বাড়লে নবীজির ৭ সুন্নাহ২৫ আগস্ট ২০২৫২.খালি পায়ে হাঁটাইট-পাথরের নগরজীবনে আমরা খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস প্রায় ভুলে গেছি। সমুদ্রতীরে বা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, এটি রাসুল (সা.)-এর একটি সুন্নাহ। খালি পায়ে হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং মনে প্রশান্তি আনে।
ফুযালা ইবনে উবাইদ (রা.) হাদিসে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিতেন এবং মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটার পরামর্শ দিতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪১৬০)
৩. একসঙ্গে খাবার গ্রহণরমজানে ইফতারের সময় পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে খাবার গ্রহণের যে দৃশ্য দেখা যায়, তা মুসলিমদের সর্বকালীন সংস্কৃতির একটি সুন্দর অংশ। শুধু রমজানে নয়, রাসুল (সা.) সবসময় পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে খাবার ভাগ করে নেওয়ার উপর জোর দিতেন।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮একটি হাদিসে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “একজনের খাদ্য দুজনের জন্য যথেষ্ট, দুজনের খাদ্য তিনজন বা চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাদ্য পাঁচজন বা ছয়জনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৫)
একসঙ্গে খাবার গ্রহণ সম্পর্ককে দৃঢ় করে, ভালোবাসা ও আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ সৃষ্টি করে।
৪. সতর্কতার সঙ্গে কথা বলাআজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা প্রায়ই দ্রুত মন্তব্য করার প্রতিযোগিতায় নামি। কিন্তু রাসুল (সা.) কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)
কথা বলার আগে ভেবে নেওয়া উচিত—এটি কারও ক্ষতি করবে নাকি উপকার আনবে। এই সুন্নাহ আমাদের কথাকে ইবাদতের রূপ দিতে পারে।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫৫. চুলের যত্ন নেওয়াচুলের যত্ন নেওয়া শুধু শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি রাসুল (সা.)-এর একটি সুন্নাহ। জাবির ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নিয়মিত মাথায় তেল ব্যবহার করতেন। তেল ব্যবহার না করলে তাঁর চুলের শুভ্রতা দৃশ্যমান হতো, আর তেল ব্যবহার করলে তা লক্ষণীয় হতো না। (সুনান নাসায়ী, হাদিস: ৫১১৪)
এই সুন্নাহ আমাদের শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে উৎসাহিত করে।
রাসুল (সা.) দ্রুত ঘুমাতেন এবং রাত জাগাকে অপছন্দ করতেন। ঘুমের পূর্বে তিনি বিশেষ প্রস্তুতি নিতেন—ওজু করতেন, বিছানা ঝাড়তেন এবং ডান কাতে শুয়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তেন।৬. ঘুমানোর প্রস্তুতিআমরা প্রায়ই দেরিতে ঘুমাতে যাই, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাসুল (সা.) দ্রুত ঘুমাতেন এবং রাত জাগাকে অপছন্দ করতেন। ঘুমের পূর্বে তিনি বিশেষ প্রস্তুতি নিতেন—ওজু করতেন, বিছানা ঝাড়তেন এবং ডান কাতে শুয়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তেন।
বারা ইবনে আযিব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন নামাজের ওজুর মতো ওজু করে নেবে। তারপর ডান পার্শ্বে শুয়ে বলবে:
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আসলামতু ওয়াজহি ইলাইকা, ওয়া ফাওয়াযতু আমরি ইলাইকা, ওয়া আলজাআতু যাহরি ইলাইকা, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালজা’আ ওয়ালা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইকা, আল্লাহুম্মা আমানতু বিকিতাবিকাল্লাযি আনযালতা ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযি আরসালতা”
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার সকল কাজ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম, আপনার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। আপনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল ও মুক্তির স্থান নেই। হে আল্লাহ, আমি ঈমান আনলাম আপনার অবতীর্ণ কিতাবের ওপর এবং আপনার প্রেরিত নবীর ওপর।’
যদি সে রাতে মৃত্যু হয়, তবে ইসলামের ফিতরাতের (সৃষ্টিজাত স্বভাব) উপর মৃত্যু হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৬)
উপরে উল্লিখিত সুন্নাহগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এগুলো সহজ, ব্যবহারিক এবং আমাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত উপকারী।
যখন আমরা সুন্নাহের নিয়তে এই অভ্যাসগুলো পালন করি, তখন এগুলো ইবাদতে পরিণত হয়, আমাদের আত্মিক প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যম হয়। এই সুন্নাহগুলো আমাদের জীবনকে সরল, সুন্দর এবং আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছানোর পথ করে দেয়।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র ব যবহ র ক দ নন দ ন জ বন র আম দ র র জ বন র জন য আল ল হ করত ন র একট গ রহণ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে