রাজশাহীতে জুলাই আন্দোলনে হামলার মামলাকে ‘বাণিজ্যিক মামলা’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ
Published: 25th, September 2025 GMT
রাজশাহীতে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭টি মামলা হয়েছে। ঘটনার সাড়ে ১৩ মাস পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি আসামিদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও জনপ্রিয় কোচিং সেন্টারের মালিক। আসামিদের এমন তালিকা নিয়ে শহরে নানা সমালোচনা চলছে।
অভিযোগ উঠেছে, মামলা-বাণিজ্য করতেই বিত্তবানদের বেছে বেছে আসামি করা হয়েছে। মামলার নেপথ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহীর নেতাদের মদদ রয়েছে, এমন আলোচনাও ছড়িয়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এনসিপির মহানগরের নেতারা। তাঁরা বলছেন, কেউ কেউ এই মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার নামে অর্থ দাবি করছেন বলে তাঁরা শুনতে পাচ্ছেন। এই মামলাটিকে বাণিজ্যিক মামলা হিসেবে ব্যবহার করারও অভিযোগ এসেছে। তবে এর সঙ্গে এনসিপির নেতারা জড়িত নন।
মামলাটির বাদীর নাম কৌশিক ইসলাম ওরফে অপূর্ব। তাঁর বাড়ি নগরের শিরোইল কলোনি এলাকায়। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজশাহী নগরের আলুপট্টি মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি আহত হয়েছিলেন। এর ১৩ মাস ১৫ দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর চুরি, হুমকি, মারধর ও বিস্ফোরক আইনে নগরের বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলা করেছেন। মামলায় ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে তাঁদের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বেছে বেছে ‘পয়সাওয়ালারা’ আসামিঅভিযোগ উঠেছে, বেছে বেছে ‘পয়সাওয়ালা’ বা চাকরিজীবী; যাঁদের মামলার ভয় দেখিয়ে বেকায়দায় ফেলা যায়, এমন লোকদেরই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই মামলার আগে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁদের মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমন অভিযোগ পেয়েছে এনসিপির মহানগরের নেতারাও।
এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ মামলার ১২৯ নম্বর আসামি তামান্না ইয়াসমিন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন অফিস সহকারী। এজাহারে তাঁকে আওয়ামী লীগের অর্থদাতা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতাদের সঙ্গে আরও আছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাহাতাব চৌধুরী, ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী এনায়েতুর রহমান, হোটেল ডালাসের মালিক ডলার, খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হামিদুল আলম।
চাকরিজীবীদের মধ্যে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা; মসজিদ মিশন স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান খান; রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নওশাদ আলী ও তবিবুর রহমান শেখ; রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মচারী সংসদের সভাপতি তৌফিক; রাকাবের কর্মচারী হাসিবুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন ও আমিনুল ইসলাম; রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আজমির আহমেদ মামুন; সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কৌশিক দত্ত, ফররুখ আহমেদ, রতন আলী, কামাল পারভেজ, এ বি এম আসাদুজ্জামান, নাদিম নাহিয়ান, নাজমা ইসলাম, অমিত রানী শান্তা, রাজু আহমেদ, পাপড়ি খাতুন ও রেজওয়ানুল হুদা; রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজিব কোরাইশ; রেলের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, সাবির উদ্দিন, মোহাম্মদ ফরহাদ মজুমদার, তাহেরুল ইসলাম, জান্নাতুন ঝিলিক, আকতার আলী ও ইকবাল হোসেন; রাজশাহী ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানা ডন ও তাঁর স্ত্রী সায়েরা বানু এবং এনা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক সারওয়ার জাহান। অবশ্য এদের অনেকে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত।
রাজনীতি না করলেও মামলায় জনপ্রিয় কয়েকটি কোচিং সেন্টারের মালিককেও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন জুয়েল কেমিস্ট্রির পরিচালক আসাদুজ্জামান জুয়েল, জাহিদ ফিজিকসের পরিচালক জাহিদ হাসান, দেবাশীষ ফিজিকসের পরিচালক দেবাশীষ, চঞ্চল ফিজিকসের পরিচালক আবদুল ওহাব চঞ্চল ও উজ্জ্বল ম্যাথ ক্লাবের উজ্জ্বল হোসেন।
ঘটনা মহানগরের হলেও গ্রামের অনেক জনপ্রতিনিধিও মামলায় আসামি হয়েছেন। তাঁরা ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, মাটিকাটা ইউপির চেয়ারম্যান সোহেল রানা, কাঁকনহাটের সাবেক মেয়র আবদুল মজিদ, কাটাখালী পৌরসভার সাবেক নারী কাউন্সিলর আয়েশা বেগম, তানোরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার। ওই দিন ঘটনাস্থলে তাঁদের দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
এ মামলায় আসামি হয়েছেন, এমন একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এর আগেও তাঁকে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছিল। অথচ তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। চাকরি রক্ষায় তিনি ওই মিথ্যা মামলার বাদীর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হন। মোটা টাকার বিনিময়ে বাদী তাঁকে অ্যাফিডেভিট করে দেন যে ভুল করে এজাহারে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল। এই মামলাতেও একই কারণে টাকাওয়ালা ব্যক্তিদের বেছে বেছে আসামি করা হয়েছে বলে তাঁর ধারণা। তবে এবার তিনি আর টাকা দিয়ে অ্যাফিডেভিট করে নিতে চান না।
এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাননি মামলাটির তদন্ত করছেন বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম। মামলার বাদী কৌশিক ইসলাম অপূর্বের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মামলা সাক্ষীদের ফোন নম্বর না থাকার কারণে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এনসিপির কেউ ‘বাণিজ্যে জড়িত নয়’মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে এনসিপির মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী আজ বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে দেওয়ার তাঁর একটি স্ট্যাটাসও পড়ে শোনান।
মামলার বাদী তাঁদের সুপরিচিত উল্লেখ করে মোবাশ্বের আলী লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে ১৩৫ জনকে আসামি করে জুলাই আহত অপূর্ব নামের এক ছেলে গত কয়েক দিন আগে বোয়ালিয়া থানায় একটা মামলা করেছেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই মামলা জাতীয় নাগরিক পার্টি, রাজশাহীর পক্ষ থেকে হয়েছে বলে সব মহলে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। আমি খুব স্ট্রংলি (শক্তভাবে) ঘোষণা করছি, আমরা পার্টির কেউ এই মামলার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। আমরা মামলাটির পর জেনেছি এবং এই মামলা নিয়ে বিভিন্নভাবে নানান ফোন পাচ্ছি। কেউ কেউ এই মামলা নিয়ে আসামিদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামে বড় ফিগারের অর্থ দাবি করছে শুনতে পাচ্ছি। এই মামলাকে বাণিজ্যিক মামলা হিসেবে ব্যবহার করারও অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে।’
মোবাশ্বের আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা রাজশাহী মহানগর এনসিপি দ্ব্যর্থহীনভাবে এসব নোংরামিকে প্রত্যাখান করছি। রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলার কোনো নেতা কারও কাছে এই মামলা নিয়ে অর্থ লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহী সংগঠন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
মোবাশ্বের আলী বলেন, এই মামলায় কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে যদি সত্যি সত্যিই জড়ানো হয়ে থাকে, যাঁরা জুলাইয়ে রাজশাহীতে সন্ত্রাসী আওয়ামী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে-ময়দানে ছিল না এবং নেপথ্যেও তাঁদের সহযোগিতার কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই, এ রকম যাঁরা আছেন, তাঁরা যোগাযোগ করলে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াবেন। মামলা করার পর বাদীও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এমন যদি হয়, তাহলে নিরাপত্তার প্রয়োজনে তাঁরা তাঁর পাশেও থাকবেন।
একই প্রেক্ষাপটে ২৭টি মামলার পর কেন আরও একটি মামলা করতে হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোবাশ্বের আলী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে এখন যে মামলাগুলো হচ্ছে, সেগুলো একটি কমিটি দেখেশুনে করছে। সেই কমিটির প্রধান হচ্ছে পুলিশ কমিশনার। হয়তো তাঁরা গবেষণা করেই মামলা করেছেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, ফ্যাক্ট চেকিং করে মামলা করতে বাদী হয়তো সময় নিয়েছেন। বাদী জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি। চিকিৎসার প্রয়োজনেও তাঁর দেরি হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভ্যুত্থানের অনেক দিন পার হয়ে যাওয়ায় এখন ওই ঘটনায় কেউ মামলা করতে চাইলে নির্ধারিত কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার আহ্বায়ক রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার। কমিটির অনুমোদনের পর মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি কমিটি অনুমোদন করেছে। এমনকি পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) সাহেবও দেখেছেন। অনেক দিন থেকেই তাঁরা এই মামলা রেকর্ড করার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কমিটি অনেক কিছু সংশোধন করেছে। তারপরও কিছু বিতর্ক রয়ে গেছে। এগুলো আমরা তদন্ত করে দেখব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ব শ ব র আল আস ম দ র এনস প র হ নগর র ল ইসল ম কর ছ ন উদ দ ন র অন ক আওয় ম ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ