খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, জড়িতদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ
Published: 25th, September 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
গত মঙ্গলবার রাতে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘আপনারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কথা শোনান, নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু আপনারা এখন পর্যন্ত পাহাড়ে ধর্ষণের মহাযজ্ঞ থামাতে পারেন নাই। এই দায় সম্পূর্ণ সরকারের।’
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরাং বলেন, ‘আদিবাসীদের ওপর যতবারই হামলা অত্যাচার হয়েছে, ততবারই দেখতে পেয়েছি হয় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয় না, অথবা গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েক দিন পরই জামিন পায়। এই দেশ আদিবাসী, বাঙালি সকলের জন্য নিরাপদ হোক।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা হলেও আমরা কখনো বিচার পাইনি। এসব ঘটনার বিচার তো দূরের কথা, পাহাড়ে ১৫টিরও অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত পর্যন্ত হয়নি।’
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, ‘পাহাড়ে ধর্ষণকারীরা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও আছে। তাই তারা গণহত্যা, জুম্মদের ভূমি বেদখল, ধর্ষণ থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম করে যাচ্ছে জুম্মদের উচ্ছেদ করার জন্য।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, পাহাড়ে নারীদের ওপর বারবার সংঘটিত যৌন সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত বৈষম্যের চিত্র। পাহাড়ের এসব ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হলে ’৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির বিকল্প নেই।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক অনিক কুমার দাশ বলেন, নারীদের ওপর দৃষ্টিভঙ্গি এবং দেশের বিচারব্যবস্থার কারণে নারীদের প্রতি প্রতিনিয়ত একটার পর একটা ভয়ংকর ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর দায় রাষ্ট্রকে নিতেই হবে।
বাংলাদেশ গারো ছাত্রগঠন ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সৃজন মৃ বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত রাস্তায় দাঁড়াই। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার করতে পারেনি। আদিবাসীদের ওপর চলমান এই নিপীড়ন বন্ধের জন্য রাষ্ট্র নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।
২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।
৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।
৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫